মার্চ ও জুন মাসের হিসাব এখনো প্রতিবেদন আকারে তৈরি করা হয়নি। তবে অর্থবিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশীয় ঋণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ আট লাখ এক হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জন।
মোট স্থিতি ঋণের সঙ্গে মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ছয় হাজার ৯৯৯ টাকা। এটি সরকারের ঋণের মাথাপিছু হিসাব।
বিগত বিতর্কিত সরকারের নেওয়া অপচয়ের প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় মেটাতে নেওয়া ঋণ আর ব্যক্তি খাতের ঋণ মিলিয়ে এত বড় ঋণের বোঝা পড়েছে ব্যক্তির ঘাড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে আরো জানা যায়, সরকারি খাতের মাথাপিছু ঋণ এখন এক লাখ সাত হাজার টাকা।
এর আগে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় , বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ১৩৫ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলার।
দেশের বৈদেশিক সরকারি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। আগামীতে তা আরও বাড়বে বলে অর্থ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের মোট বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়ে তিন বিলিয়ন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২’ শীর্ষক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এরপর ২০১৬ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, একইভাবে বেড়ে ২০১৭ সালে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ৪০ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২০ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন ঋণের সঙ্গে আগের ঋণের সুদমুক্ত হওয়ায় বছর বছর স্থিতি বেড়েই চলছে।
ওদিকে, শুধু ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসেই বিদেশি ঋণ সহায়তা নেয়া হয় ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈদেশিক সহায়তা বিষয়ক মাসিক রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয় ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এরমধ্যে অনুদান রয়েছে ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার, আর ঋণ রয়েছে ৩০১ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি জানিয়েছিল , গত ২০২৩ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত সেপ্টেম্বরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।