গাজায় বর্বর হামলায় আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত, কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় কমপক্ষে আরও ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ ৬ হাজার ৬২৪ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৫৫ জন নিহত এবং আরও ১৭০ জন আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ ছাড়া গত সপ্তাহে আকস্মিক বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় ভয়ংক হামলা চালায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী। অপরদিকে সর্বাত্মক হামলার সাহস না করলেও ইরান ও ইরাকেও হামলার ঘটনা ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এমন বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় অভিযানের নামে এবার আরেক দেশে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইহুদিবাদীরা।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের বরাত দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন ব্রিটিশ ৬০ এমপি। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন তারা। এতে ‘আন্তর্জাতিক আইন বারবার লঙ্ঘনের’ জন্য ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলের অবৈধ বসতিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। অঞ্চলটিতে হামলায় প্রতিনিয়ত নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে এবার প্রকাশিত আরও একটি পরিসংখ্যান আঁতকে উঠার মতো।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। শুধু হত্যাই নয়, অনেককে ধরে নিয়ে গেছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী। তাদের কারাগারে আটকে রেখে করা হচ্ছে নির্যাতন।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি ছাত্র নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তারা মারা গেছেন। দাপ্তরিক সংখ্যাটি ১২ হাজার ৭৯৯ জন। তবে অনেক মরদেহ উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। নিহত ছাড়াও অন্তত ২০ হাজার ৯৪২ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বেশিরভাগ হতাহতের সংখ্যা গাজায়। তবে পশ্চিম তীরেও অনেকে নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া অন্তত ৫৯৮ শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০১ জন।
পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ৫৩৮ ছাত্র এবং ১৫৮ শিক্ষক ও প্রশাসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বিষয়ে গাজার পরিসংখ্যান অস্পষ্ট। যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের ভবিষ্যৎও অজানা।
আরও বলা হয়েছে, ৪২৫টি সরকারি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের ভবন বোমা হামলা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার সাথে অধিভুক্ত ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির ধ্বংসাবশেষেই কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।