ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার(২৮ডিসেম্বর) বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো হামলায় অন্তত ৪৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াফা নিউজ এজেন্সি।এতে করে উপত্যকায় নিহতের মোট সংখ্যা ৪৫ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে।এর মধ্যে বেশিরভাগই অবরুদ্ধ উত্তর গাজার বাসিন্দা। এই ঘটনায় হাসপাতাল ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে।
গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অব্যাহত অভিযান চালায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গভীর উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী এবং কর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকেও আটক করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে যে উত্তর গাজা থেকে জেরুজালেমে দুটি রকেট ছোঁড়া হয়েছিল, যার প্রেক্ষিতে বেইত হানুনের বাসিন্দাদের জন্য নতুনভাবে ঘরছাড়া হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের গাজায় হামলা এখনো চলমান। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৫,৫০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৮,০৯০ জন আহত হয়েছেন। গাজার উত্তরাঞ্চল এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে প্রতিনিয়ত বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে, হামাসের নেতৃত্বে চালানো এক আক্রমণে ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি লোক বন্দি করা হয়েছিল।
ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় গাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।এই পরিস্থিতিতে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালের মতো জায়গাগুলোতেও হামলা হওয়ায় চিকিৎসা সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
গাজায় এই ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট পুরো বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত শান্তি স্থাপনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা। তথ্যসূত্র : আল–জাজিরা