ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া (৩৪)কে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছে তার পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে তার প্রাণভিক্ষা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত পাননি তারা। উল্লেখ্য, স্থানীয় এক ব্যক্তি, যিনি ছিলেন তার ব্যবসার সাবেক পার্টনার তালাল আবদো মাহদি, তাকে হত্যার কারণে প্রিয়ার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে ইয়েমেনের আদালত। মাহদিকে ২০১৭ সালে হত্যা করে তার দেহ টুকরো টুকরো করেন প্রিয়া। তারপর তা একটি পানির ট্যাংকে ফেলে দেন। সেখান থেকে উদ্ধার হয় ওই টুকরোগুলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, প্রিয়া বর্তমানে অবস্থান করছেন রাজধানী সানার কেন্দ্রীয় একটি জেলে। খুব শিগগিরই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। বিদ্রোহী হুতি পরিচালিত সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত শাস্তি অনুমোদন দিয়েছেন। ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা বা শরীয়ার অধীনে এখন তার মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার একমাত্র পথ হলো তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাণভিক্ষার আবেদন অনুমোদন করানো। নিহত মাহদির পরিবারকে রক্তের বদলা অর্থ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার জন্য কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ার আত্মীয়রা ও সমর্থকরা। চলছে সমঝোতা প্রক্রিয়া। কিন্তু সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সমর্থকরা বলছেন, এখন যেটুকু আশা বেঁচে আছে তা নিহত মাহদির পরিবারের সিদ্ধান্ত।
প্রেসিডেন্সিয়াল অনুমোদন আসার পর পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস আরও একবার নিহত মাহদির পরিবারের সম্মতি চাইবে। ইয়েমেনভিত্তিক সমাজকর্মী সামুয়েল জেরোমি বলেন, নিহত মাহদির পরিবারের কাছে জানতে চাওয়া হবে তাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা। যদি ওই পরিবার বলে যে, তারা মৃত্যুদণ্ড চায় না অথবা প্রিয়াকে ক্ষমা করে দিয়েছে, শুধু তাহলেই মৃত্যুদণ্ড বন্ধ হবে।
সামুয়েল জেরোমি বলেন, ক্ষমা করে দেয়া হলো প্রথম পদক্ষেপ। তবে নিহত মাহদির পরিবার যদি রক্তের বিনিময়ে অর্থ নিয়ে থাকেন তাহলে তারা ক্ষমা করে দিতে পারেন। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী প্রিয়ার পরিবার সরাসরি নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী ভাড়া করতে হয়েছে।
ওদিকে ভারতে প্রিয়ার পরিবারের পক্ষের আইনজীবী সুভাষ চন্দ্র এর আগে বলেছেন, এরই মধ্যে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে প্রিয়ার পরিবার ৪০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ভারত সরকার এ মামলায় মধ্যস্থতা করার মাধ্যমে আইনজীবীদের কাছে দুই দফায় এই অর্থ দেয়া হয়েছে। এখন এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় ভারত সরকারের সহযোগিতা চায় প্রিয়ার পরিবার।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা প্রিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত। তার পরিবারের প্রতি যথাসম্ভব সব রকম সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রিয়ার স্বামী টনি থমাস বলেছেন, জেলখানার বাইরে কি হচ্ছে তার কিছুই জানেন না প্রিয়া। বর্তমানে সানায় অবস্থান করছেন প্রিয়ার মা প্রেম কুমারি। তিনি ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে গত বছর সেখানে গিয়েছেন। তারপর দু’বার জেলখানায় মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রথম দেখায় তারা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দফায় প্রেম কুমারি দু’জন নানকে সঙ্গে নিয়ে যান। জেলখানার ভিতর তার মেয়েকে নিয়ে প্রার্থনা করেন।