A firefighter battles the Palisades Fire around a burned structure in the Pacific Palisades neighborhood of Los Angeles, Wednesday, Jan. 8, 2025. (AP Photo/Etienne Laurent)
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হওয়া ভয়াবহ দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ছাড়িয়ে এবার পুড়ে ছাই হয়েছে বিখ্যাত হলিউড হিলসও। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে অবস্থিত হলিউড অভিনেতাদের বাড়িঘরও পুড়তে শুরু করে। ক্ষয়ক্ষতি শত বিলিয়ন ছাড়ানোর আশংকা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এটিই এখন লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুষ্ক এবং শক্তিশালী বাতাসে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যা মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান।
গত মঙ্গলবার এই দাবানল শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। ১ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হলিউডের বিখ্যাত এলাকাগুলোসহ বহু তারকার বিলাসবহুল বাড়ি দাবানলে ধ্বংস হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস এটিকে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি’।আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।
অঞ্চলভিত্তিক দাবানল
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে অন্তত ছয়টি পৃথক দাবানল সংঘঠিত হয়েছে। এর মধ্যে-
পালিসেডস দাবানল: শহরের পশ্চিম প্রান্তে ১৫,৮৩২ একর জমি পুড়িয়েছে।
সানসেট দাবানল: হলিউড হিলসের উপর দিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
ইটন দাবানল: সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালার পাদদেশে ১০,৬০০ একর জমি ধ্বংস করেছে এবং পাঁচজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
হলিউড তারকাদের ক্ষয়ক্ষতি
এই দাবানলে হলিউড অভিনেতা বিলি ক্রিস্টালের বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া মিডিয়া ব্যক্তিত্ব প্যারিস হিলটনের মালিবুর সৈকত সংলগ্ন বাড়ি পুড়ে গেছে।
এদিকে অভিনেতা জেমস উডস তার বাড়ি হারিয়ে বলেছেন, ‘একদিন আগেই সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছিলাম, আর আজ সবকিছু শেষ’।
দাবানল প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ
অয়াবহ এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন। যে কারণে আশেপাশের ৬টি অঙ্গরাজ্য থেকে দমকল কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ২৫০টি ইঞ্জিন এবং ১,০০০ জন কর্মী দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে।
প্রতিকূল পরিস্থিতি
মূলত দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় শুষ্ক আবহাওয়া এই দাবানলের মূল কারণ। সেইসঙ্গে শক্তিশালী সান্তা আনা বাতাস এই দাবানলকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে পালিসেডস অঞ্চলে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ
লস অ্যাঞ্জেলেসের জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন ম্যাকগোয়ান বলেছেন, আমাদের শহর এখন চরম বিপদে রয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতা বজায় থাকবে।
উদ্ধারকাজ ও সহযোগিতা
এদিকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা সাহায্যের জন্য খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল একটি ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। যা মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি উভয়ের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র: রয়টার্স