• ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ জারির প্রতিশ্রুতি

usbnews
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ জারির প্রতিশ্রুতি
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন। শপথ নেওয়ার পর তিনি দেশজুড়ে অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছেন। শিকাগোসহ বড় শহরে এসব অভিযান শুরু হবে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ১০০-২০০ অফিসার মোতায়েন করবে। এসব অভিযান সপ্তাহজুড়ে চলতে পারে।

প্রথম দিনে যেসব নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে শপথ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিল।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ জারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এ কথা বলেছেন। এসব আদেশ মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচি

ট্রাম্প অভিবাসন নীতিকে তার প্রথম দিনের প্রধান অগ্রাধিকার বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু করবেন। নিউইয়র্কের এক সমাবেশে তিনি বলেন, প্রথম দিনেই অপরাধী অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এটি বাস্তবায়ন করা যেমন কঠিন, তেমনি মানবিক দিক থেকেও বিতর্কিত।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের কথা বলেছেন। তার মতে, প্রথম দিনেই আমি এই অধিকার বাতিল করব। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা ব্যাপক আইনি বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা

ট্রাম্পের আরেকটি বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি হলো ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল হামলায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। তিনি বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ৯ মিনিটের মধ্যেই আমি এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। সমালোচকদের মতে, এ পদক্ষেপ আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তিনি দাবি করেছেন, পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। তারা আমাকে সম্মান করেন, যা বাইডেনের ক্ষেত্রে হয় না। তবে বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়নযোগ্য মনে করছেন না।

শুল্ক আরোপ

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। তবে অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করেছেন, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জ্বালানি খাত উন্নয়ন

জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকার জ্বালানি খরচ কমাতে আরও বেশি তেল উত্তোলন করব। তবে পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এটি জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করবে।

ট্রান্সজেন্ডার ও লিঙ্গ-সম্পর্কিত নীতি

ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ এবং লিঙ্গ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া নীতিমালা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এসব উদ্যোগ এলজিবিটিকিউ প্লাস সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

মেড-ইন-আমেরিকা উদ্যোগ

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মার্কিন গাড়ি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। তিনি বলেন, আমার নেতৃত্বে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্প আবার শীর্ষস্থানে যাবে।

উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ

প্রথম কর্মদিবসে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিগুলো উচ্চাভিলাসী এবং বিতর্কিত। তবে এগুলো বাস্তবায়নে তাকে ব্যাপক আইনি বাধা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে। অনেকেই বলছেন, এসব পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র : এনবিসি নিউজ

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে তৎপরতা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধে অবিলম্বে বিরতি আনতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো উচিত। যদিও ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ আর কয়েক ঘণ্টা বাকি, তবে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কাজ আগে থেকেই শুরু করেছেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা

ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বলেছেন তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। এর জন্য, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ অন্তত ২০ বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে ইউক্রেন কোনোভাবেই জয়ী হবে না। শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থ ও সম্পদ নষ্ট হবে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান

গত ডিসেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মতিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি ও ইউক্রেন একটি চুক্তি করে এই পাগলামি বন্ধ করতে রাজি হবে।’ এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী। ন্যাটো জোটের ইউরোপীয় সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধের ফলে পশ্চিমা দেশগুলো অতিরিক্ত ব্যয় করছে। আর চীন বিশ্ববাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

ন্যাটো ত্যাগের হুমকি

যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা ও যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে বের করার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই মন্তব্যে ইউক্রেন, ন্যাটো জোটের মিত্ররা ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যুদ্ধের কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পিছিয়ে দিলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না। তারা এই প্রস্তাবকে যথেষ্ট নয় বলে বিবেচনা করেছেন। তাদের মতে, যুদ্ধের প্রকৃত কারণ ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর গভীরে গিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে। মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে।

জেলেনস্কির সতর্ক বার্তা

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারবেন। তার মতে, ট্রাম্প ও ইউরোপের সহযোগিতায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেছেন, যদি ইউক্রেন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পায়, পুতিন আবারও আক্রমণ করতে পারেন।

বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু করতে সাহায্য করেছে। রাশিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে তার ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধের কারণে ডলারের ব্যবহার কমছে, আবার রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করছে। তবে ট্রাম্পের একক প্রচেষ্টায় যুদ্ধ থামানো কঠিন হতে পারে। কারণ এ যুদ্ধে জটিল ভূরাজনৈতিক, একাধিক দেশ ও শক্তির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্ব রয়েছে।

এদিকে গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালনকারী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও এই চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে ট্রাম্পের কূটনৈতিক চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাবকেই এর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসন বিদায়ী অবস্থায় থাকলেও নির্বাচন ট্রাম্পের জয়লাভের পরই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সক্রিয়ভাবে এগিয়েছে। এটি স্পষ্ট, ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে এই চুক্তি বাস্তবায়ন ও তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে এখনও কিছু সংশয় রয়েছে।