যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্সি। তার আগে ক্যাপিটল রোটুনডা হলে প্রবেশ করে তিনি তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে ফ্লাইং কিস উপহার দেন। এরপর উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে আসন গ্রহণ করেন তিনি। প্রথমেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সকে শপথবাক্য পাঠকরানো হয়। এরপরই শপথবাক্য পাঠ করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় দুটি বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে শপথ নেন ট্রাম্প। এর একটি বাইবেল তাকে দিয়েছিলেন তার মা। অন্যটি লিঙ্কন বাইবেল। এটি আগের কয়েকজনকে শপথ পড়ানোর সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিঙ্কন অন্যতম। ট্রাম্প সংবিধানকে সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও সুরক্ষিত রাখার শপথ নিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পসহ পরিবারের সব সদস্য। শপথ নিয়ে ট্রাম্প প্রথম ভাষে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণালী যুগের সূচনা হলো এখন। এইদিন থেকে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ হবে এবং সম্মানিত হবে। আমি খুব সহজ কাজ করবো- আমেরিকা ফাস্ট হবে পলিসি। এর আগে তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সহ উপস্থিতদের প্রতি সম্মান জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে পুনঃস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্বকে পুনরুদ্ধার করা হবে। আমাদের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা হবে। ন্যায়বিচারের দাড়িপাল্লা পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ে জঘন্য হিংসাত্বক ও অন্যায়ভাবে হাতিয়ার করা ইতি ঘটবে। আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার হবে এমন একটি জাতি সৃষ্টি করা যারা গর্বিত হবে, সমৃদ্ধ হবে এবং স্বাধীন থাকবে। ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, আমেরিকা শিগগিরই আগের চেয়ে বৃহত্তর, শক্তিশালী এবং অধিক বেশি ব্যতিক্রমী হবে, যা আগে হয়নি কখনো। তিনি আরও বলেন, আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদ নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্সিতে ফিরেছেন। জাতীয় সফলতার একটি রোমাঞ্চকর নতুন যুগের সূচনা। সূর্যালোক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এই সুযোগকে আমেরিকার এমনভাবে ব্যবহারের সুযোগ এসেছে, যা আগে কখনো হয়নি।
উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম্প এখন থেকে আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু
শপথের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখন থেকে শুরু হলো। এখন থেকে সামনের দিনগুলোয় আমাদের দেশ আরও সমৃদ্ধ আর সম্মানজনক অবস্থানে উঠে আসবে। আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে, আমেরিকা ফার্স্ট।’
ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হবে, আমাদের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা হবে, পুনরায় ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা হবে।’
‘আমরা একটি গর্বিত, সমৃদ্ধশালী ও স্বাধীন জাতি তৈরি করার লক্ষ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবো,’ বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট।
ক্রিস্টোফার ম্যাকিওর ‘ওহ, আমেরিকা’ গানের মাধ্যমে শপথের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিরাও। ছিলেন বিদায়ী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এবং সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগ এমহফসহ বিদায়ী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও।
ট্রাম্পের কিছুক্ষণ আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা জেডি ভান্স। এ সময় তোপধ্বনি মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে যোগদানের আগে হোয়াইট হাউসে চা পান ও বৈঠক করেন বাইডেন ও ট্রাম্প। এরপর তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি লিমোজিনে চড়ে হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হলে পৌঁছান।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের উত্তর পোর্টিকোতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ওয়েলকাম হোম’ বলে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে সাংবাদিকরা চিৎকার করে প্রশ্ন করলেও কোনো প্রেসিডেন্টই উত্তর দেননি। আজ প্রথমবারের মতো এই জুটির দেখা হয়েছে।
নির্বাহী ক্ষমতার সীমা বাড়ানো, লাখ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কার, রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া এবং বিশ্বমঞ্চে আমেরিকার ভূমিকা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।