• ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনের জন্য এখনই প্রস্তুত নয় ইসি

usbnews
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
নির্বাচনের জন্য এখনই প্রস্তুত নয় ইসি
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে। সরকারও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য কাজ করছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে? নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি কতটুকু? এ বিষয়ে সবারই জানার আগ্রহ রয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে চাচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। সংস্কারের পরই নির্বাচন করার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন এখনই নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত নয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে। তারপর প্রয়োজনীয় আইনী সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলেই সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে ইসি। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে আইন-কানুন, বিধি-বিধান ঠিক করে অক্টোবরের মধ্যে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।

সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সর্ম্পকে অনুচ্ছেদ, ১১৯ এর (১) তে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী (ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন; (খ) সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন; (গ) সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবেন; এবং (ঘ) রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুত করিবেন। (২) উপরি-উক্ত দফাসমূহে নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরূপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে, নির্বাচন কমিশন সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন।

সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে। গত বিশ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হতে পারে বলে ইসি সূত্র মনে করছে। তবে বিদ্যমান পুরো ভোটার তালিকা যাচাই বাছাই করে ভুয়া ভোটার ও মৃত ভোটারদের বাদ দিতে গিয়ে বেশকিছু সময় লাগতে পারে। তবে তা কবে নাগাদ শেষ হবে তা ইসি সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। আর সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজও করতে হবে ইসিকে। আর এবার নতুন করে সংবিধান সংশোধন হলে নির্বাচনী আইনেও পরিবর্তন আসবে। এসব আইন কানুন সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারবে ইসি।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের পক্ষ নয় ইসি। এই বিষয়ে কমিশনারও ঐকমত্য হয়েছেন। কেননা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না ইসি। যে কোনো জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে নির্বাচন কমিশনকে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। সেই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। এবার যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্যসংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। ভোটার তালিকার হালনাগাদ সম্পন্ন করতে প্রায় জুন পর্যন্ত সময় লেগে যাবে ইসির। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন-বিধি সংশোধন, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনি মালামাল ক্রয়, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করতেই আগস্ট মাস সময় লেগে যেতে পারে ইসির। এর পরই জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্র আরো জানিয়েছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ইসির কাছে মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় নির্বাচনের তপসিলের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সমাজের বিশিষ্টজন এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা অন্য নির্বাচনে মনোযোগী দিতে চায় না। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না।

গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফলে এর আগে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী নয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আপত্তি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা রি-অ্যাকশন টাইম দিতে হবে। এমন ইভেন্ট আসা ঠিক হবে না, যা জাতীয় নির্বাচনকে ব্যাহত করে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে সব নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়।

সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই, এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতে, এই বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাড়াতাড়ি নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা কারো ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ করছি না। সবার লক্ষ্য একটি ভালো নির্বাচন, এবং সেটির জন্য সময় প্রয়োজন। ভোটার তালিকার কাজ চলছে। এটি এক মাস চলবে। তারপর কিছু আইনগত পরিবর্তন প্রয়োজন, এ কারণে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আমাদের সময় দরকার।

তিনি বলেন, আমরা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) না, আমাদের প্রস্তুতির জন্য বাস্তবসম্মত সময় দরকার। কমিশনের এবারের প্রস্তুতির লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচন, এবং তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন কিছু দিন আগে সাংবাদিকদের বলেছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সূচি দিয়েছেন সরকারপ্রধান, সেই সময়ে ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে ইসি কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত যে টাইম ফ্রেম; ওইটাকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।

গতকাল রোববার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে আইন-কানুন, বিধি-বিধান ঠিক করে অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। রুলস অব দ্য গেম না থাকায় নির্বাচনের কাজে আগাতে পারছে না ইসি। আইনি বাধার কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় সীমানা নির্ধারণের অনেক কাজ করা যাচ্ছে না। তাই আইনের সংশোধন জরুরি।

তিনি বলেন, দল নিবন্ধনও সময়সাপেক্ষ বিষয়। কেনাকাটা আছে অনেক। রাতারাতি কিনতে পারি না। আমরা চেয়েছিলাম ভোটার নিবন্ধনের পাশাপাশি কাজগুলো এগিয়ে নিতে। আইনি জটিলতার কারণে পারছি না। বিশেষ করে সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও দল নিবন্ধনের কাজ করতে পারছি না।

স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে সিইসি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এক বছর লাগবে। আমরা তো সেই প্রস্তুতি শুরু করিনি। সরকারও তো অনুরোধ করেনি। কেন আমি এক বছর সময় নষ্ট করব?

 

 

  • দৈনিক সংগ্রাম