সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ার, বাটিক এয়ার, এয়ার এশিয়া, গালফ এয়ারসহ ১১ এয়ারলাইন্স টিকিট জালিয়াতিতে যুক্ত। এয়ারলাইন্সগুলো ট্রাভেল এজেন্সির জন্য ৭ শতাংশ কমিশন রেখে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে।
আদতে দেখা যায়, এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত দামে যাত্রীকে টিকিট না দিয়ে এজেন্সি নিজেদের মতো দর নির্ধারণ করে। কিছু এজেন্সি গ্রুপ বুকিংয়ের নামে প্রকৃত চাহিদার অতিরিক্ত সংখ্যক টিকিট কিনে অন্য এজেন্সির মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করে। এ ছাড়া প্রবাসী কর্মীরা যে রুটে বেশি ভ্রমণ করেন, সেই পথে ফ্লাইট সংখ্যা কম রয়েছে। অনেকে শেষ মুহূর্তে টিকিট কেনেন। এতে টিকিটের বেশি চাহিদা থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করেন।
এ ছাড়া আশপাশের দেশের চেয়ে এখানে কর ও সারচার্জ, জ্বালানির উচ্চদর এবং ডলারের দামে বড় তারতম্য রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকিটের দামে এর প্রভাব পড়ছে।
প্রাথমিকভাবে ৩০ এজেন্সিকে গ্রুপ বুকিংয়ের নামে যাত্রীর পাসপোর্ট ছাড়াই টিকিট ব্লক করার পরে তা উচ্চ দরে বিক্রির অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এসব এজেন্সির মধ্যে যারা ব্লক করা টিকিট বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিক্রি করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, এমন ১২ এজেন্সির মালিক শুনানিতে ডাকা হয়। এর মধ্যে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল, কিং এয়ার এভিয়েশন, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেগা ইন্টারন্যাশনাল, মাদার লাভ এয়ার ট্রাভেলস, জেএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সাদিয়া ট্রাভেলস, মেসার্স এনএমএসএস ইন্টারন্যাশনাল, হাশেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ও ফোর ট্রিপ লিমিটেড ব্লক করে রাখা টিকিট নিজেরা বা সাব-এজেন্টের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করেছে।
এসব এজেন্সি সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, সালাম ও জাজিরা এয়ারের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি করেছে। সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, সালাম ও জাজিরা এয়ারের জিএসএ হলেন এয়ার গ্যালাক্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। তিনি কাতার এবং ওমান এয়ারেরও জিএসএ।
তদন্ত কমিটির কাছে একাধিক এজেন্সির মালিক জানান, গ্রুপ তৈরি করার বিষয়টি এয়ারলাইন্সের এখতিয়ার। এয়ারলাইন্সগুলোই গ্রুপ তৈরি করে সেই ভিত্তিতে টিকিট কিনতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে। এজেন্সিগুলো অনেক ক্ষেত্রে সাব-এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। বিপরীতে জিএসএদের দাবি, তারা টিকিট বিতরণ ও বিক্রির জন্য ট্রাভেল এজেন্ট নিয়োগ করলেও তাদের দায়দায়িত্ব নেননি।
আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবাবে স্বীকার করে, তারা টিকিট সাব-এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করে। প্রতি টিকিট এক থেকে দুই হাজার টাকা বাড়িয়ে সাব-এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে। ফোর ট্রিপ লিমিটেডের মালিক তদন্ত কমিটিকে জানান, তারা শুধু সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের গ্রুপ টিকিট ইস্যু করেন এবং প্রতি টিকিটে ১ হাজার ৬০০ টাকা লাভ করেন। বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল নিজেরা সাব-এজেন্ট হিসেবে টিকিট বিক্রির কথা স্বীকার করে এবং প্রতি টিকিটে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাভ করে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কমিটি মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া যাওয়ার উড়োজাহাজের টিকিটের দর বাড়ার ব্যাপারে বিশদ অনুসন্ধান করে। এর সঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্য এয়ারলাইন্সের মতো ইউএস-বাংলাও চড়া দামে টিকিট বিক্রি করেছে। এ কারণে ইউএস-বাংলার প্রতিনিধিকে শুনানিতে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আলাদা একটি প্রশ্নপত্রের জবাব দিতে বলা হয়। ইউএস-বাংলা তাদের জবাবে বলেছে, তারা নিয়মের মধ্যেই টিকিট বিক্রি করেছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইউএস-বাংলার বিরুদ্ধে গ্রুপ বুকিং ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এয়ারলাইন্সটির মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করেছি। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে বিমান মন্ত্রণালয় থেকে জানতে হবে। মন্ত্রণালয়কে আমরা তথ্য দিয়েছি। তাই পাবলিকলি বলার সুযোগ নেই।’