• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বোয়াও ফোরামে সম্মেলনে বক্তব্য ও যৌথ প্রেস : চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে সমান গুরুত্ব

Usbnews.
প্রকাশিত মার্চ ২৮, ২০২৫
বোয়াও ফোরামে সম্মেলনে বক্তব্য   ও  যৌথ প্রেস : চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে সমান গুরুত্ব
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ এবং চীনা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে সে দেশের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুক্রবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয় ।

চীন বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চ মানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ নির্মাণ করতে, ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি, সামুদ্রিক অর্থনীতি, অবকাঠামো নির্মাণ, জলসেচসহ বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘনিষ্ঠ করা এবং জনগণের মৈত্রী বাড়াতে চায়।

বাংলাদেশ ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং নীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে বিনিময় জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সংক্রান্ত নতুন সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

আলোচনা ছিল উষ্ণতাপূর্ণ এবং অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ। প্রেসিডেন্ট শি প্রধান উপদেষ্টা ও তার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং বক্তব্য রাখেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসী বাংলাদেশের ভবিষ্যত নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে অসাধারণ সংকল্প ও শক্তি প্রদর্শন করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা আজ বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় এ কথা বলেন।

চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার আনা যায়।’

এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির একটি মৌলিক রূপান্তর সাধিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যাচ্ছি, তখন এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আমরাও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’

বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্নতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে।’

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো প্রতি বছর ২.৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও এশিয়াকে ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে হবে।

দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থপ্রবাহের শিকার।

তিনি উল্লেখ করেন, এই ধরনের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে যে অর্থ পায় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

তিনি বলেন, ‘এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো কঠিন সময় পার করছে।’

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও গভীরতর করছে। ‘খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত জ্বালানি আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ঋণ সংকট বৃদ্ধি পায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা মানবসম্পদ উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার দিক থেকে ভালো ফল পায়।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে, ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে এবং মানবিক সংকট বাড়ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হয়ে পড়ছে, এবং বিশ্ব এখন সম্মিলিত পদক্ষেপের অভাবের কারণে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৫৫ শতাংশ বিশ্ব জিডিপি ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।’

‘নতুন নিয়ম, বিধিনিষেধ এবং প্রযুক্তি সরকার পরিচালনা ও অর্থনৈতিক নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এক দশক আগে যে নীতিগুলো কার্যকর ছিল, সেগুলো আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

 চীন এবং  বাংলাদেশের যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি

১. বোয়াও এশিয়া ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বোয়াও এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এ যোগদানের জন্য ২৬ ও ২৭ মার্চ হাইনান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের আমন্ত্রণে ২৭ থেকে ২৯ মার্চ বেইজিং সফর করেন।

চীনে অবস্থানকালে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। হাইনান প্রদেশে বোয়াও এশিয়া ফোরাম ২০২৫ বার্ষিক সম্মেলনের সময় উপ-প্রধানমন্ত্রী তিং শুয়ে শিয়াং প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বেইজিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান জেং সাক্ষাৎ করেন। উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছে এবং ব্যাপক ঐকমত্য অর্জন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বোয়াও এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং একটি বক্তৃতা দেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চীন স্বাগত জানায় এবং ২০২৪ সালের অগাস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে। বাংলাদেশ পক্ষ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানানো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। উভয় পক্ষ পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, তারা চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে সমান গুরুত্ব দেয় এবং যৌথভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২. উভয় পক্ষ একমত হয়েছে যে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৫০ বছরে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিবর্তন- নির্বিশেষে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বদা সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রেখেছে। উভয় পক্ষ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখতে, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা আরও গভীর করতে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির ভিত্তিতে উন্নয়ন কৌশলগুলিকে একত্রিত করতে এবং দুই দেশ ও তাদের জনগণের আরও কল্যাণে চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।

৩. উভয় পক্ষ একে অপরের মূল স্বার্থ এবং প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলিতে তাদের পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। চীন সর্বদা অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে, বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন রক্ষায় সমর্থন করে, বাংলাদেশি জনগণের স্বাধীনভাবে নির্বাচিত উন্নয়ন পথকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশকে তার জাতীয় অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন পথ অন্বেষণে সমর্থন করে। চীন সর্বদা গোটা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ এবং বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণ করে আসছে। চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা, বাংলাদেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন করে।

উভয় পক্ষই জোর দিয়ে বলেছে যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব নং ২৭৫৮-এর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। বাংলাদেশি পক্ষ এক-চীন নীতির প্রতি তাদের দৃঢ় আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বৈধ সরকার এবং তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ পক্ষ ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা করে। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে চীনকে সমর্থন করে এবং তার জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য চীনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

৪. উভয় পক্ষ যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নির্মাণে উচ্চমানের সহযোগিতা বৃদ্ধি, শিল্প চেইন এবং সরবরাহ চেইনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং নিজ নিজ দেশে আধুনিকীকরণ অর্জনের জন্য একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের দীর্ঘমেয়াদী দৃঢ় সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ এবং সেতু, সড়ক, রেলপথ, নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ গ্রিড, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা প্রকল্পের অর্জিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধার উচ্চ প্রশংসা করে। চীন বাংলাদেশের জাতীয় অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বস্ত্র ও পোশাক, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃষি, উত্পাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক নীতিমালা এবং বাজারমুখী পদ্ধতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা পরিচালনা করতে চীনা কোম্পানিগুলিকে উত্সাহিত করতে ইচ্ছুক। বাংলাদেশ মংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণের মতো প্রকল্পগুলিতে অংশগ্রহণের জন্য চীনা কোম্পানিগুলিকে স্বাগত জানায় এবং চট্টগ্রামে ‘চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প পার্ক’ নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

৫. উভয় পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, চীন-বাংলাদেশ অবাধ বাণিজ্য চুক্তির উপর আলোচনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিত এবং চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ চুক্তি উন্নয়নের আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা উচিত। উভয় পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চীনে বাংলাদেশি তাজা আম এবং অন্যান্য উচ্চমানের কৃষি ও জলজ পণ্য রপ্তানি বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। চীন আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপো, চীন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপো এবং চীন আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন প্রমোশন এক্সপোর মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশকে স্বাগত জানায় চীন। বাংলাদেশ পক্ষ চীনা কোম্পানিগুলিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

৬. উভয় পক্ষ জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং সমন্বিত জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলসম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে এবং বন্যার মৌসুমে ইয়ারলুং জাংবো নদী-ব্রহ্মপুত্র নদী-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য পারস্পরিক সরবরাহের বিষয়ে উভয় দেশের স্বাক্ষরিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনার ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে। তিস্তা নদীর ব্যাপক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ চীনা কোম্পানিগুলিকে স্বাগত জানায়।

উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করতে এবং নীল অর্থনীতির সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষ সামুদ্রিক বিষয়ে বিনিময় জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সংলাপের একটি নতুন দফা আয়োজনে সম্মত হয়েছে।

৭. উভয় পক্ষ ২০২৫ সালে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী এবং ‘চীন-বাংলাদেশ জনগণ ও সংস্কৃতি বিনিময় বর্ষ’ যৌথভাবে উদযাপন করতে, সংস্কৃতি, পর্যটন, মিডিয়া, শিক্ষা, চিকিত্সা সেবা, যুব, স্থানীয় সরকার, থিংক ট্যাংক ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা আরও গভীর করতে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশি রোগীদের চিকিত্সার জন্য চীনের ইউননান প্রদেশে ভ্রমণের সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশি পক্ষ চীনকে ধন্যবাদ জানায়।

৮. বাংলাদেশ মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ কমিউনিটি গড়ে তোলার ধারণার প্রশংসা করেছে এবং বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রস্তাবিত বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগের গুরুত্ব উল্লেখ করেছে। উভয় পক্ষ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা, গ্লোবাল সাউথের মধ্যে ঐক্য ও স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করা এবং যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মত হয়েছে।

৯. উভয় পক্ষই জোর দিয়ে বলেছে যে, ২০২৫ সাল- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকী। উভয় পক্ষ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, প্রকৃত বহুপাক্ষিকতা অনুশীলন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণকে উত্সাহিত করেছে। উভয় পক্ষ যৌথভাবে বিশ্বের সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরুকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পক্ষে কথা বলবে। উভয় পক্ষ উন্নয়নশীল দেশগুলির সাধারণ স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার যৌথভাবে রক্ষার জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার অধীনে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।
১০. মিয়ানমারে শান্তি ও সংলাপ প্রচারে চীনের প্রচেষ্টা এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ প্রশংসা করে। রাখাইন রাজ্যের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য চীন কৃতজ্ঞ। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সমর্থন জানায়। প্রত্যাবাসনে উত্সাহিত করার জন্য চীন তার সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা দিতে চায়।

১১. সফরে উভয় পক্ষ দুই সরকারের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ক্লাসিক রচনাগুলির পারস্পরিক অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময় এবং মিডিয়া, ক্রীড়া ও চিকিত্সা ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি নথি স্বাক্ষর করেছে।
১২. প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং চীনা জনগণকে তাঁর ও বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের প্রতি উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ অভ্যর্থনার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য চীনা নেতাদের আমন্ত্রণ জানান।

 বাংলাদেশ ও চীন জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।

আজ শুক্রবার উভয় পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমনওইউ) বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষরকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনে সরকারি সফরে রয়েছেন।

বাংলাদেশ ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে। উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং নীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে বিনিময় জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা সংক্রান্ত নতুন সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এশিয়ার বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৬ ও ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন।

এরপর, চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ২৭ থেকে ২৯ মার্চ বেইজিং সফরে রয়েছেন।

আজ শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শ্যুয়েশিয়াং বোয়াও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এছাড়া চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণ পরিবেশে, দুই পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করে এবং ব্যাপক সমঝোতায় পৌঁছায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চীন স্বাগত জানিয়ে গতবছরের আগস্ট থেকে সরকারের গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে।

একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে গভীর আগ্রহী চীন।

উভয় পক্ষ সমগ্র কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব আরও সুসংহত ও গভীর করার জন্য সমান প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে দাবি করা হয় উভয় দেশ একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছরে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবসময় শক্তিশালী ও স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে গেছে।

উভয় পক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতির প্রতি অটল থাকার, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব এগিয়ে নেওয়ার, রাজনৈতিক পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় করার, উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় গভীর করার এবং বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

এতে উভয় দেশের জনগণের জন্য আরও বেশি সুফল নিশ্চিত করা যাবে বলে তারা আশাবাদী।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের ঐতিহাসিক সময়ে উভয় পক্ষ পরস্পরের প্রধানতম স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সমর্থন প্রদান করে।

চীন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নির্ধারিত উন্নয়ন পথকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন পথ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বলে জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, চীন সবসময়ই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতির অনুসারী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর শাসন পরিচালনা, জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে আসছে।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বাস্তবিক বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে।

উভয় দেশ সমতার ভিত্তিতে শৃঙ্খলাপূর্ণ বহুপক্ষীয় বিশ্ব ও সর্বজনীনভাবে উপকারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক কাঠামোর আওতায় সমন্বয় আরও জোরদার করার, উন্নয়নশীল দেশগুলোর যৌথ স্বার্থ রক্ষার এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

মিয়ানমার সংকট ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ভূমিকা বাংলাদেশ মিয়ানমারের শান্তি আলোচনায় চীনের গঠনমূলক ভূমিকা এবং রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে।

চীন রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চীনের জনগণকে তার ও বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রতি উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি উভয় পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে চীনা নেতৃত্বকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

 

প্রতিবেদনে সহযোগী – সিটিজিএন , বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, এপি , ইউএসবি নিউজ এশিয়া ডেস্ক।