• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিম বিশ্বে ঈদ আসে, গাজায় না

Usbnews.
প্রকাশিত মার্চ ৩১, ২০২৫
মুসলিম বিশ্বে ঈদ আসে, গাজায়  না
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ মোহাম্মদ আল হুসেইন শনিবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় স্থানীয় সময় ঘোষণা করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে রবিবার (৩০ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

মুসলিম বিশ্ব যখন উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদের আনন্দ নেই। এই যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডের মানুষের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেঁচে থাকা।

যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে গাজা
প্রায় দেড় বছর ধরে ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৯২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহতের সংখ্যা ১,১৪,০০০-এ পৌঁছেছে।
গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঈদের আনন্দ যেন মরীচিকার মতো। ঈদ মানে নতুন পোশাক, মিষ্টি খাবার এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো। কিন্তু গাজার মানুষের কাছে এখন এগুলো বিলাসিতা।

‘আমাদের ঈদ নেই’

গাজার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-সারকা বলেন, ঈদ আমাদের জন্য নয়। আমাদের সন্তানদের জন্যও নয়। আমি তাদের জন্য নতুন পোশাকও কিনতে পারিনি। যেখানে খাবার পাওয়া কঠিন সেখানে ঈদ আয়োজনের কথা ভাবাও অসম্ভব।

তিনি আরও বলেন যে ইসরায়েলি আক্রমণে তার তিন সন্তান নিহত হয়েছে। এখন তিনি তার জীবিত চার সন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

৪৭ বছর বয়সী নোয়া আবু হানি যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হয়ে পড়েছেন। তিনি আগে জাবালিয়া ক্যাম্পে ছিলেন, কিন্তু ইসরায়েলি আক্রমণে ক্যাম্প ধ্বংস হওয়ার পর এখন তিনি উনরোওয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ঈদের সময় আমি কা’ক (ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কুকিজ) বানাতাম। রোজার শেষ দিনে বিক্রি করতাম, রাস্তার ধারে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। কিন্তু এখন আর কিছুই নেই। শুধু বেঁচে থাকার লড়াই।

ফিলিস্তিনি শিশুরাও ঈদের আনন্দ ভুলে গেছে
সাত বছর বয়সী হানিন তার পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদেছিল। কেন জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলেছিল, “আমার কাপড় নেই, আমার পুতুল নেই, আমাদের ঘর নেই। আমার ঈদ পছন্দ নয়।” শুধু হানিনই নয়, গাজার শত শত শিশুর মুখে হাসি নেই। তারা জানে না ঈদ কেমন হতে পারে। খাদ্য সংকটের কারণে, তাদের ঈদে বিশেষ কিছু খাওয়ার সুযোগও নেই।

যুদ্ধের মাঝে আনন্দের একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা
উম্মে মোহাম্মদ নামে একজন ফিলিস্তিনি মা তার বাচ্চাদের জন্য কয়েকটি কুকিজ বেক করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমি বাচ্চাদের মুখে একটু হাসি আনতে চাই।” “কোন ঈদ নেই, কিন্তু আমি ঈদের কথা ভুলতে পারছি না।”

গাজার পরিস্থিতি এমন যে, ঈদের দিনেও মানুষ খাবার ও পানির জন্য লড়াই করছে। নতুন পোশাকের পরিবর্তে, এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হল খাবার এবং পরিষ্কার পানি।

গাজায় ঈদ: বেঁচে থাকার সংগ্রাম
গাজার প্রতিটি পরিবার আজ চরম দুর্দশার মধ্যে বসবাস করছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্যের দাম বেড়েছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই এবং আশ্রয়ের অভাব চরম। ঈদ এখন গাজার মানুষের জন্য আরেকটি কঠিন দিন, যেখানে আনন্দের পরিবর্তে, হৃদয়ের যন্ত্রণা এবং বেঁচে থাকার লড়াইই একমাত্র বাস্তবতা।
“ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু গাজায় ঈদ আসে না।” — এভাবেই একজন গাজার বাসিন্দা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, যেন তার কথাগুলো সমগ্র ফিলিস্তিনের বেদনাকে প্রতিফলিত করে।

সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর এবং গালফ নিউজ