• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র : ইসরাইলের সমর্থক কোম্পানি ও শক্তিকে বয়কটের আহবান

Usbnews.
প্রকাশিত এপ্রিল ১৩, ২০২৫
‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র : ইসরাইলের সমর্থক কোম্পানি ও শক্তিকে বয়কটের আহবান
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তান, দোয়েল চত্বর, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্ট ভবন ও নিউমার্কেটসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা। ঢাকার বুকে যেন একখণ্ড ফিলিস্তিন। সব দল-মতের নেতারা একমঞ্চে। রাজপথে সাধারণ মানুষের স্রোত। সোহ্‌রাওয়ার্দী  উদ্যান যেন জনসমুদ্র। ইসরাইলি বর্বরতার শিকার গাজাবাসীর পক্ষে হাতে হাত ধরে গর্জে উঠেছিল পুরো ঢাকা। এ যেন গাজার পাশে পুরো বাংলাদেশ। লাখ লাখ মানুষের মিছিল আর স্লোগানে শনিবার রাজধানী হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের নগরী।

ফিলিস্তিন সলিডারিটি মুভমেন্টের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সকাল থেকে সড়কে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। সব সড়কের স্রোত গিয়ে মিশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাসে, ট্রেনে, ট্রাকে করে হাজারো মানুষ রাজধানীর বাইরে থেকেও যোগ দেন এই মিছিলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা তিনটায় শুরু হওয়া জনজমায়েত ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণাপত্র পাঠ ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা, আলেমসমাজের প্রতিনিধি, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন। সেখানে ছিলেন হেফাজতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও।

বেলা চারটার কিছু আগে যখন গণজমায়েতে মোনাজাত শুরু হয় তখনো উদ্যানমুখী জনস্রোত আসছিল চারপাশ থেকে। জাতীয় পতাকা, ফিলিস্তিনের পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্ট পতিত শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকায় সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হয়েছে গতকাল। লাখো মানুষের এই সমাগমে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। সড়কে যান চলাচলের সুযোগ ছিল না অনেক জায়গায়। সড়কে শুধু দেখা গেছে মানুষের স্রোত।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। এর আগে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মার্চ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমদুল্লার নেতৃত্বে লাখো মানুষ। এতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির উত্তারাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর শায়খ চরমোনাই মুফতি ফয়জুল করীম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি প্রবেশ পথ দিয়ে মানুষ প্রবেশ করেন। তবে জনতার এ ঢল ছেয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পল্টন, নীলক্ষেত, বঙ্গবাজার, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শাহবাগ, ফার্মগেট, সাইন্সল্যাব, তেজগাঁও পর্যন্ত। পিকআপ ভ্যানে করে মানুষকে স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। তেজগাঁও এবং খিলগাঁও এলাকায় প্রচুর মানুষ ট্রেনের ছাদে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দেন। বিপুল মানুষের এ জনসমাগমের কারণে এসব এলাকায়  বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। কর্মসূচি ঘিরে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। বয়কটের ডাক দেন ইসরাইলি পণ্য। কর্মসূচি থেকে ভারতে বিতর্কিত ওয়াক্‌ফ বিল পাসেরও বিরেধিতা করা হয়।

‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল সোয়া চারটার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের মোনাজাতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।

বিকেল সোয়া তিনটার দিকে বিখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক।

দল-মত নির্বিশেষে সবাই এক মঞ্চে: জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির হাসনাত আব্দুল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, মাহমুদুল হাসান সোহাগ, লতিফুল ইসলাম শিবলী, অধ্যাপক মুখতার আহমদ, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমান, জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা হাসান জামিল, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, কবি মুহিব খান, কারি আহমদ বিন ইউসুফ, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, বেফাকুল মাদারেসিন আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, ড. ফয়জুল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের ইলিয়াস কাঞ্চন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সংহতি সমাবেশে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরের হতে পারি, কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটা আল কুদস। আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণজমায়েতে এই জনতার জনসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দীমুখী মানুষের ঢল: ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী ঢাকার সড়কে মিছিলের স্রোত শুরু হয় শনিবার সকাল থেকে, যা চলছিল বিকেল ৪টার পরও। গণজমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা দেয়। ব্যাপক লোকসমাগমে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। পিকআপভ্যানে করে তরুণদের স্লোগান দিতে দিতে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। তেজগাঁও এবং খিলগাঁও এলাকায় প্রচুর মানুষকে ট্রেনের ছাদে চড়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য আসতে দেখা গেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলা থেকেও অসংখ্য মানুষকে গতকাল ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শরিক হতে দেখা গেছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, শনিবার সরকারি ছুটির দিন হলেও এত মানুষের চাপ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে গিয়ে পড়ে। ফলে সব সড়কেই যানজট লেগে যায়।

ঘোষণাপত্র পাঠ ও মোনাজাত: আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন। গণজমায়েতে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বাংলাদেশ তথা গোটা মুসলিম উম্মাহর পক্ষে ফিলিস্তিনিদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সহায়তা কামনা করেন। সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়।

ঘোষণাপত্র পাঠকালে মাহমুদুর রহমান ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি—সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, ধ্বংস চলছে, এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল। এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাই আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি—জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে; যুদ্ধবিরতি নয়—গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে; পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে; ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়; এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্ৰতিচ্ছবি। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের ওপর অর্পিত সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ; ইসরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে; জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে; জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।

ঘোষণাপত্র পাঠ ও মোনাজাত: আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন। গণজমায়েতে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বাংলাদেশ তথা গোটা মুসলিম উম্মাহর পক্ষে ফিলিস্তিনিদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সহায়তা কামনা করেন। সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়।

ঘোষণাপত্র পাঠকালে মাহমুদুর রহমান ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি—সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, ধ্বংস চলছে, এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল। এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাই আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি—জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে; যুদ্ধবিরতি নয়—গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে; পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে; ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়; এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়; এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্ৰতিচ্ছবি। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের ওপর অর্পিত সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ; ইসরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসির মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে; জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে; জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।