(ছবি আগস্ট বিপ্লবের)
‘নতুন বছর, নতুন বাংলাদেশ’ থিমে এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সর্ববৃহৎ ড্রোন শো প্রদর্শিত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় এ ড্রোন শোতে ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রতিকৃতির মাধ্যমে। দেখানো হয় ‘২৪-এর বীর’, পায়রার খাঁচা ভাঙা থিম, ফিলিস্তিনের জন্য প্রার্থনা এবং বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা বার্তা।
‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী
উপস্থিত লক্ষাধিক জনতা মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদ, পানির বোতল হাতে শহীদ মুগ্ধকে। এ ছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রিকশায় দাঁড়িয়ে সালাম, জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ ও গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার প্রতিবাদও শোতে স্থান পেয়েছে প্রতীকীভাবে।
এর আগে এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বর্ণাঢ্য কনসার্ট। কনসার্টকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউতে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। তারা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ উদযাপন করছে।
কনসার্ট ঘিরে মানিক মিয়া এভিনিউ পরিণত হয় মানুষের মিলনমেলায়। তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ গানে-নাচে মেতে ওঠে বৈশাখী উৎসবে। বিকেল গড়াতেই উপচে পড়া ভিড়ে জমে ওঠে পুরো এলাকা।
বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ কে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী।
সোমবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ যৌথভাবে শোভাযাত্রায় অংশ নেন তারা। এসময় শোভাযাত্রার আগে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন তারা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির তত্ত্বাবধানে জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, রাখাইন, মনিপুরি, খাসিয়া, রাঘোয়া, সাঁওতাল, মাহাতো, গারো, হাজং, মুন্ডাসহ ২৮ টি জাতিগোষ্ঠী এতে অংশ নেয়।
অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পসরা নিয়ে সজ্জিত অবস্থায় অবস্থান নেন। এসময় তাদের হাতে নিজস্ব ঢোল তবলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপকরণ দেখা যায়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের জ্বরতি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা শোভাযাত্রা অংশ নিতে পেরে খুবই খুশি। আমরা আমাদের নিজস্ব উপকরণ নিয়ে শোভাযাত্রায় এসেছি।
সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার দিয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে বাংলা অ্যাকাডেমির সাসনে দিয়ে পুনরায় চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।
এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভালো কাজের হালখাতা’, ঢাকা গেট অভিমুখে ‘লুঙ্গি মিছিল’ ও রাজু ভাস্কর্যের পাশে ‘ফ্যাসিস্ট প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ’ এবং পায়রা চত্বরে ‘মাইম প্রদর্শনী’ হয়েছে।
সোমবার বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ ও এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে এ আয়োজন করে। এতে নানান বয়সের শিশু কিশোর যুবক-যুবতী বৃদ্ধ সবাই ভালো কাজের হালখাতায় নতুন বছরের কিছু ভালো উইশ এবং খারাপ বর্জনের উইশগুলো লিখেছে।
প্রতিবাদ মুক্ত প্রথম এই নববর্ষের আনন্দ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয়া হয়।
বাংলার প্রাচীন হালখাতা অনুষ্ঠানকে শহুরে নতুন প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে মূলত ভালো কাজের হালখাতা অনুষ্ঠানটির আয়োজন।
বাংলার সাধারণ মানুষের পোশাককে স্মরণ রাখতে লুঙ্গি মিছিলের আয়োজন করা হয়। আর জুলাইয়ের স্পিরিট কে ধারণ করা এবং পরবর্তী বাংলাদেশ যেন প্রতিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ হয় তা জারি রাখতে ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপের আয়োজন করা হয়।