• ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল , এক কোটির উপর জনসংখ্যার সিলেট বিভাগে নেই কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল

Usbnews.
প্রকাশিত এপ্রিল ২০, ২০২৫
নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল , এক কোটির উপর জনসংখ্যার সিলেট বিভাগে নেই কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানিয়েছেন, নীলফামারীতে চীন সরকারের উদ্যোগে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

ডা. মো. আবু জাফর বলেন, প্রাথমিকভাবে নীলফামারী জেলায় এটা নির্মাণের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগির এর কাজ শুরু হবে।

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীদের আরও যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সীমিত জনবল ও সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীরা তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় জনগণের সেবা করে আসছেন। রোগীদের প্রতি তাদের আরও যত্নবান হতে হবে।

স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩৭ হাজার পদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কিন্তু গ্রেড ওয়ান পদ রয়েছে একটি। এ ছাড়া সাত হাজার সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অতি দ্রুত সে পদগুলোয় নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হবে। তা ছাড়া তিন হাজার চিকিৎসকদের ফাইল অনুমোদিত হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন করে সবার পদোন্নতি দেওয়া হবে।

হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের বিষয়ে অগ্রগতি আছে কিনা, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে ডিজি বলেন, শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর রাশেদ মনিরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক জিয়াউর রহমান চৌধুরী, হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী, সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম, মো. বদরুল আমিনসহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কেন সিলেট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন জরুরি ?

সরকারি তথ্যে দেখা যায় – এক কোটির উপর জনসংখ্যার উপরে সিলেট বিভাগে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকায় বৈদেশিক যোগাযোগের জন্য সহজ এবং বিদেশে চিকিৎসা নিরুত্সাহিত করে জনগণের নাগালের ভেতর উন্নত চিকিৎসার জন্য পুরো সিলেট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন জরুরি জরুরি বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল। এরইমধ্যে যুক্তিক দাবি ও উঠেছে সিলেট বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের জন্য।
অনেকে মনে করছেন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সিলেটের উপস্তিতি না থাকায় সিলেটের উন্নয়ন মুখথুবড়ে গেছে।

সিলেট জেলা ১৭৭২ সালের ১৭ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত এ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ঐ বছরই সিলেটকে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের অর্ন্তভূক্ত করা হয়। দেশ ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। সিলেট জেলা তখন চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ছিল। ১৯৮৩-৮৪ সালে বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয়।প্রতিষ্ঠাকালে সিলেট জেলাসহ বৃহত্তর সিলেটের অপর তিন জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ছিল। ১৯৯৫ সালে বৃহত্তর সিলেটের ৪ টি জেলা (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ) নিয়ে পৃথক সিলেট বিভাগ যাত্রা শুরু করে।
সংসদীয় আসন : মোট ১৯ টি (সিলেট: ০৬টি; সুনামগঞ্জ :০৫টি ; মৌলভীবাজার: ০৪টি; হবিগঞ্জ: ০৪টি)

মোট জনসংখ্যা :সিলেট বিভাগের মোট আয়তন ১২,৫৫৮ (বার হাজার পাঁচশত আটান্ন) বর্গ কিলোমিটার। মোট ১,১০,৩৪,৮৬৩ জন (সিলেট: ৩৮,৫৭,০৩৭ জন; সুনামগঞ্জ : ২৬,৯৫,৪৯৫জন; মৌলভীবাজার: ২১,২৩,৪৪৫জন; হবিগঞ্জ: ২৩,৫৮,৮৮৬জন)।

এর মধ্যে চীনের বিশেষায়িত হাসপাতালের জায়গা নিয়ে জেলায় জেলায় টানাটানি, ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ

রংপুরে ১ হাজার শয্যার একটি আধুনিক ও বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। চীনের দেওয়া উপহারের এই হাসপাতালকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন এই বিভাগের বাসিন্দারা। তবে বিভাগের আট জেলার মানুষজনই তাদের নিজ নিজ জেলায় এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বেশ কয়েক দিন থেকে জোরালো মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে আসছে।

তবে কি গঙ্গাচড়ায় হচ্ছে চীনের সেই বিশেষায়িত হাসপাতাল

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত কর্মকর্তা, রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ সংশ্লিষ্টরা এ স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তারা চর কলাগাছিতে থাকা ১শ একর খাস জমির মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২০ একর জায়গা পরিদর্শন করেন। পরে চীনা কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা নির্ধারণ করবেন বলে জানা যায়।

জেলায় জেলায় এমন রশি টানাটানি শক্ত অবস্থানে গেলে হাসপাতাল নির্মাণ ‘হওয়া না হওয়া’ নিয়ে কোনো শঙ্কা তৈরি হয় কি না তা নিয়ে উষ্মা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বরং সরকার ও চীনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বলা হচ্ছে, ভৌগোলিক অবস্থার কারণে যেখানেই হোক, তবে রংপুর বিভাগেই প্রয়োজন এই হাসপাতাল। হাসপাতালে রোগ নির্ণয় ও সেবা নিশ্চিত হলে বরং প্রতিবেশী ভারত ও ভুটান থেকেও রোগী আসতে পারে এই হাসপাতালে। উল্টো, চিকিৎসায় ভারতনির্ভরতা কমবে।

গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, হাসপাতালটি তিস্তা প্রকল্প এলাকার কাছে নির্মিত হবে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর গত ১৫ এপ্রিল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর কোলঘেঁষে থাকা মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকা পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ অন্যরা। এ সময় তারা চর কলাগাছির ১০০ একর খাসজমির মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২০ একর জায়গা পরিদর্শন করেন।

ডিসি অফিস জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন জায়গা দেখার পর চীনা কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট জায়গা নির্ধারণ করবে।

সূত্র বলছে, বিভাগের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বিভাগীয় শহরের আশপাশে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য পছন্দের শীর্ষে রেখেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়। সেই পছন্দ অনুযায়ী রংপুর জেলা প্রশাসনকে জায়গা খোঁজার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল গংগাচড়ার তিস্তা নদী এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শনে গেলেও কোথায় এই বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ হবে সে বিষয়ে খোলাসা করেননি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। হাসপাতালটি নির্মাণ হলে উত্তরের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমূল পরিবর্তন আসবে।