• ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের পাশে ইসরায়েল, পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক , পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন ,কি বলছে বিশ্ব রাজনৈতিক নেতারা?

Usbnews.
প্রকাশিত মে ৭, ২০২৫
ভারতের পাশে ইসরায়েল, পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক , পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন ,কি বলছে বিশ্ব রাজনৈতিক নেতারা?
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ইসরায়েল ভারতের পাশে দাঁড়ালেও ভিন্ন সুরে কথা বলেছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারকে ফোন করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই হামলাকে ‘অপ্রস্তুত আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। দুই দেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে বলে জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এই অভিযান ঘিরে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো ভারতের এই সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।’

এদিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এইমাত্র এর খবর পেয়েছি। ভারত-পাকিস্তান বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে।’

কি বলছে বিশ্ব রাজনৈতিক নেতারা?

কাশ্মীরে গত মাসে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জেরে মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানে শিশুসহ ৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের চালানো হামলাকে ঘিরে প্রতিবেশী দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের শীর্ষ নেতারা।

ভারতের এমন অতর্কিত হামলাকে লজ্জাজনক জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘মাত্রই বিষয়টি শুনলাম।

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে সবাই ধারণা করেছিল এমন কিছু ঘটতে পারে। তারা অনেক দশক ধরে লড়াই করছে। আমি আশা করি এটি খুব শিগগিরই শেষ হবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক এক্স বার্তায় বলেন, ‘আমি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো আমিও আশা করি এই সংঘাত দ্রুত শেষ হবে এবং আমরা দুই দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দুই দেশের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছেন। এই মুহূর্তে বিশ্ব আরেকটি সামরিক সংঘাত সহ্য করতে পারবে না।

এই অভিযান পূর্ণ যুদ্ধে রুপ নিতে পারে আশঙ্কা জানিয়ে জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, ‘আমরা ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ এই পরিস্থিতি যদি পাল্টা হামলা আর উত্তেজনায় রূপ নেয় তবে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আমরা সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের আজ সকালের সামরিক অভিযান দুঃখজনক। আমরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের এবং জটিলতা না বাড়ানোর অনুরোধ জানাই।’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত ও পাকিস্তানকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা সংযম প্রদর্শন করে, উত্তেজনা কমায় এবং এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

শেখ আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘সঙ্কট মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কূটনীতি ও সংলাপ। শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির যে অভিন্ন লক্ষ্য, তা অর্জনে এই পথই সবচেয়ে উপযোগী।’

দক্ষিণ এশিয়ায় এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যেকোনো সংঘর্ষ বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি মনে করেন বিশ্ব নেতারা। তারা দুই দেশের প্রতি সামরিক অভিযানের বিষয়ে সংযম প্রদর্শন করে কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান।