• ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সরাসরি আলোচনায় বসেছে ভারত-পাকিস্তান ,পাকিস্তানের সঙ্গে সারা রাত কী হয়েছে জানাল ভারত

Usbnews.
প্রকাশিত মে ৮, ২০২৫
সরাসরি আলোচনায় বসেছে ভারত-পাকিস্তান ,পাকিস্তানের সঙ্গে সারা রাত কী হয়েছে জানাল ভারত
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা (এনএসএ) সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। এটি দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টারই অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের এনএসএ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও আইএসআই প্রধান আসিম ভারতের অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পাকিস্তান ও ভারতের এনএসএরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’ তবে আলোচনার বিস্তারিত বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই যোগাযোগের পেছনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বড় ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনএসএ মার্কো রুবিও পাকিস্তান ও ভারতের এনএসএদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন বলেও জানা গেছে।

ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দ্রুত ও কৌশলগতভাবে জবাব দিয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশনের ফ্রেঞ্চ তৈরি ‘রাফালে’ যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান চাইলে ১০টি ভারতীয় জেট গুলি করে নামাতে পারত, কিন্তু তারা সংযম দেখিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এই ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ‘দ্য হিন্দু’ প্রথমে তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর দিলেও পরে তা সরিয়ে ফেলে। এক মার্কিন বিশ্লেষক সিএনএনকে বলেন, যদি রাফালে যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়ে থাকে, তবে তা ভারতের জন্য বড় ধাক্কা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষ ছিল এক অর্থে চীনা ও পশ্চিমা প্রযুক্তির মধ্যে এক সরাসরি পরীক্ষামূলক লড়াই। পাকিস্তান সম্প্রতি চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে, যা ভারতের রাফালের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত। এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো রাফালে যুদ্ধবিমান যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপাতিত হওয়া।

মার্কিন বিশ্লেষকের ভাষায়, ‘এটি বড় ধরনের অগ্রগতি এবং প্রমাণ করে চীনের প্রযুক্তি এখন বিশ্বমানের।’

২০১৯ সালের বালাকোট হামলার সময় পাকিস্তান বিস্মিত হয়েছিল। তখন প্রতিক্রিয়া জানাতে একদিন সময় নিয়েছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক ও সুসংগঠিত। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আগে থেকেই সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল—যদি ভারত আঘাত হানে, তবে প্রতিশোধ হবে ‘কুইড প্রো কো প্লাস’ নীতিতে—অর্থাৎ সমানতালে নয়, বরং অতিরিক্তভাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সরাসরি যোগাযোগ এবং পাকিস্তানের রাফালে ভূপাতিত করার দাবি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে চীনা সামরিক প্রযুক্তির বিকাশ এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য বদলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পাকিস্তান ও ভারতের সেনাদের মধ্যে বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে ছোট অস্ত্র থেকে শুরু করে কামান পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনারা কাপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি ও আখনূর সেক্টরে বিনা উসকানিতে গুলি চালায়, যার জবাবে ভারতও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

এই সংঘর্ষের পটভূমিতে রয়েছে বুধবার ভারতের চালানো ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যাতে পাকিস্তানে ৯টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংসের দাবি করেছে নয়াদিল্লি।

এই হামলার জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘আমরা ভারতের হত্যাকাণ্ডের বদলা নেব।’

দুই পক্ষের দাবি অনুযায়ী, এই উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের হামলায় ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আর ভারত দাবি করেছে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাদের ১২ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক মহল সংঘর্ষ থামাতে তৎপর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আহ্বান জানিয়েছেন, দুই দেশ যেন শান্তি ও সংযমের পথ বেছে নেয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইসলামাবাদ সফর শেষে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তেহরান এই উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছে।