সামাজিক মাধ্যমজুড়ে সাবেক বহুল বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পালানোর বিষয়টি নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেট নাগরিকরা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলের যেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি নেটিজেনদের। আর যারা এখনও দেশে আছেন তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেই বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কঠোর হওয়ারও আহ্বান সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের।
মধ্যরাতে দেশ ছেড়েছে পালিয়ে যাওয়া আবদুল হামিদকে নিয়ে যা বলেন ডক্টর তুহিন মালিক – কিশোরগজ্ঞে হত্যা মামলার আসামী আব্দুল হামিদ প্রকাশ্যে সরকারের চোখের সামনে দিয়েই পালিয়ে গেলেন। হত্যা মামলার অনান্য আসামীরা সরকারী প্রটেকশনে আছে, এটা তো আগে থেকেই ওপেন সিক্রেট।
গনহত্যাকারীদেরকে যারা লুকিয়ে রাখছেন, আশ্রয় দিচ্ছেন, পালাতে দিচ্ছেন আপনারা কি জানেন? দেশের বিদ্যমান আইনে কোন ব্যক্তিকে অপরাধী বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তাকে আইনের সাজা হতে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখলে, আশ্রয়দান করলে বা পালাতে সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি তিন থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। ভুলে যাবেন না, ফ্যাসিষ্টরাও নিজেদেরকে আইনের উর্ধে ভেবেছিল। তাদের পরিনতিটা তো কদিন আগেই দেখলেন।
আব্দুল হামিদের দেশত্যাগ ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করব।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করব বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে ডিসি অফিসে এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সামাজিক মাধ্যমজুড়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পালানোর বিষয়টি নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেট নাগরিকরা। তারা বলছেন – গণঅভ্যুত্থানের নয় মাস পর খুনি আব্দুল হামিদ পালিয়েছে। এরপর চুপ্পুকেও একইভাবে পালাতে সহায়তা করবে সেই চক্র। বিগত কুখ্যাত সরকারের সকল অপকর্মের মূল দোসর কুখ্যাত খুনি আব্দুল হামিদকে পালতে সহায়তা করেছে বর্তমান সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রশাসন ও আমলারা। উপদেষ্টার গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে ডামি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়েছে।
হাসিনা সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল হামিদ। হাসিনার দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর দেশ ছাড়লেন এবার তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছেড়েছেন। আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের খবরে চটেছেন নেটিজেনরা। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে নেটিজেনদের হুংকার, কে বা কারা আব্দুল হামিদকে পালাতে সাহায্য করলো তাদেরও ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসার।
এদিকে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অন্তত একটি হত্যা মামলা থাকার তথ্য পাওয়া যায়। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের হয়। মামলাটিতে শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ কাউয়া কাদের খ্যাত ওবায়দুল কাদেরের নামও রয়েছে। আব্দুল হামিদকে এভাবে দেশত্যাগ করতে দেওয়ায় নেটিজেনদের ক্ষোভ উপরে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে।
লিমা হোসেন লুনা নামের এক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই সেই আব্দুল হামিদ যে হাসিনা সরকারের সময় প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকলেও তার স্বৈরাচারিতায় কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং হাসিনাকে সাহায্য করেছেন সর্বক্ষেত্রে। গণঅভ্যুত্থানের সময় হাসিনা নির্বিচারে ছাত্র-জনতা হত্যা করলেও চুপ ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে এটি জানার পরও ইমিগ্রেশন পুলিশ কি করে তাকে পালাতে দিলো? যারা আব্দুল হামিদের মত ফ্যাসিস্টের দোসরকে পালাতে সাহায্য করলো তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।’
সাবেক ডিবি প্রধান ভাতের হোটেলের মালিকখ্যাত হারুন অর রশিদের সাথে আব্দুল হামিদের সখ্যতার বিষয়টি সামনে এনে কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা প্রকৌশলী গাজী সাইদুর রহমান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদকে আজ পালাতে দিলেন কেন? সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের সাথে গলায় গলায় পিরিত ছিলো হামিদের। মিঠামইনে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটিও অবৈধ অর্থে নির্মিত। এটাতে হামিদের শেয়ার আছে কি না তাও তদন্ত করে দেখা দরকার। ডিবি হারুন সবসময়ই প্রাকশ্যে বলতো সে আব্দুল হামিদের লোক। একজন প্রেসিডেন্টের বাসায়ও যখন তখন ঢুকে যেতো হারুন। ঠিক কোন প্রটোকলে আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যখন তখন রাষ্ট্রপতির বাসভবনে ঢুকতো হারুন সেটিও অজানা। আর আমাদের এলাকাতেও হামিদ গ্রুপ নামে একটি ক্যাডার বাহিনী ছিলো আব্দুল হামিদের। আমরা এলাকার মানুষরা হামিদ আর হামিদ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলাম বিগত ১৬টি বছর। হামিদের নামে হত্যা মামলা থাকলেও আইনের আওতায় না এনে এভাবে পালাতে সাহায্য করেছে হামিদের নিয়োগ করা পুলিশরাই। হামিদ এলাকা থেকে প্রতিবছর অসংখ্য ছেলেদের পুলিশে চাকরি দিতো। আর এলাকার কিছু হলুদ সাংবাদিকও পা চাটতো হামিদের, যাদের কারণে প্রকাশ্যে কিছু বলাও যেতো না।’
এন যে মুর্শেদ লিখেছেন – ভবনে মদের আসর বসাইতো এমন লোক কার নির্দেশে ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে জাতি জানতে চায়।
মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ লিখেছেন – দেশে চলছে এখন অপরাধীদের সেইফ এক্সিট দেওয়ার বানিজ্য।ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে এরকম তামাশা হবে জানলে কেউ জীবনের ঝুকি নিতোনা।ভবিষ্যতে আবার যদি স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়াতন্ত্র চালু হয় তাহলে সেটা আর কেউ রূখে দিতে বুক পেতে দাঁড়াবেনা।
সুমন লিখেছেন –পির আওলিয়ার দেশ এটা কোন নতুন কিছু নয়।আমি আগেই কইছিলাম গাড়ি খাইয়া মদ চালাইছ না। প্রশাসনকে দুই হাত তুলে তোমাদের সালাম। যেই অবস্থা দেখতেছি আম ছালা সব যাইবো।
শাকিল আহমেদ রোস্তম লিখেছেন -ইউনুস সরকার গুটি কয়েক উপদেষ্টার কাছে জিম্মি হয়ে আছে।।
মোহাম্মদ নাজমুল হুদা লিখেছেন –কিছু উপদেষ্টা নামক ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিরুদ্ধে আবার রাজপথে নামতে হবে দেখছি।
মোহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন -আব্দুল হামিদ পালিয়ে যাওয়ার পর এই সরকারের উপর থেকে জনগণের বিশ্বাস উঠে গেছে।
এমডি মাসুদ লিখেছেন –আঃ হামিদ কার সহযোগীতায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাদের কে খুঁজে বের করতে হবে। এবং কঠিন সাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মনির মাহমুদ মুন্না লিখেছেন -যেকোনো সময় নির্বাচন কমিশনার গুলো পালিয়ে চলে যেতে পারে দেশ ছেড়ে তাদেরকে দ্রুত এরেস্ট করুন।
নেটিজেনদের প্রশ্ন তাহলে কি সাহাব উদ্দিন চুপ্পু ও কোন এক সময় এভাবেই চলে যাবেন নির্ভিগ্নে ?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় গত বছরের ৫ আগস্ট। এত দিন নীরবেই নিজ বাসভবনে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। কিন্তু ৯ মাস পর বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন তিনি।
এ নিয়ে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া আন্দোলনকারীরা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বেশ কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
বুধবার (৮ মে) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান। পোস্টে হান্নান লেখেন, ‘আব্দুল হামিদকে বিমানবন্দরে আটকানো হলো, তারপর নাকি চুপ্পুর অফিস থেকে ফোন কল পেয়ে ছেড়ে দেয়া হলো। এরপরও কি ইন্টেরিমকে জুলাই বিপ্লবীরা সাপোর্ট করে যাবে!’
তিনি আরও লেখেন, ‘সরি, হয় চুপ্পুকে সরান-লীগকে ব্যান করেন, আর না হয় নিজেরা সরে যান।’

সাবেক এই বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের এলাকা মিঠামইনে এক উড়াল সড়ক নির্মাণেই আওয়ামী লীগ সরকার ব্যয় ধরেছিলো প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর মিঠামইনের হাওর অঞ্চলের বুক চিরে গড়ে তোলা রাস্তার খরচ এবং এর ফলে সৃষ্ঠ বন্যার কথা সামনে এনে
ওই এলাকার রোকসানা সোনিয়া নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদ তার নিজের প্রয়োজনে নির্মাণ করেছেন মিঠামইনের এই রাস্তা, যেখানে সরকারী কোষাগারের ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন শুধুমাত্র নিজের পরিবার আর নিজের যাতায়তের সুবিধার জন্য। আমরা এই এলাকার মানুষ কি পেয়েছি তার কাছে? আগে হাওরে পানি আসতো আবার চলেও যেতো, নির্দিষ্ট সময়ে ফসল হতো এসব জমিতে। এখন কি আর তা হয়? হাওরের মাঝে এমনভাবে রাস্তা বানিয়েছেন তিনি, এখন পানির ঢলে আমরা ভেসে যাওয়ার অবস্থা। বাড়িতে আগে পানি উঠতো না, এখন বাড়ির উঠানেই পানি থাকে সারা বছর। পানি না শুকানোয় কোন ফসলও আর উৎপাদন হয়না আমাদের এলাকায়। এসব নিয়ে কথা বললে হামিদ গ্রুপ হামলে পড়তো আমাদের ওপর। যারা আজ হামিদকে পালাতে সাহয্য করলো তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হোক।’
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাওরে নির্মিত রাস্তার কারণে প্রতিবছর দেশের সিলেট অঞ্চল বন্যায় কবলিত হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের খবরের পর এই এলাকার
জুনায়েদ সিদ্দিক তার ফেসবুকে বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘মিঠামইনের রাস্তাটি নির্মাণ করেছিলো আব্দুল হামিদ তার নিজের প্রয়োজনে, এর সাথে তিনি ডুবিয়েছেন দেশের সিলেট অঞ্চলকে। হাওরে এভাবে শক্ত করে বাঁধ নির্মাণ করায় পানি চলাচলে ব্যহত হয় এর ফলে পুরো সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকা বন্যার জলে ভেসে যায় প্রতি বছর। আব্দুল হামিদ দেশের রাষ্ট্রপতির চেয়ারে থাকলেও হাসিনার ফ্যাসিজমে বরাবরই আশকারা দিয়ে গেছেন। পর্দার আড়াল থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। হাসিনার প্ররোচনায় তিনিও ফ্যাসিবাদের কোন প্রতিবাদ করেননি। এমনকি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ও মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা নির্বিচারে ছাত্র-জনতা হত্যা করলেও তখন কোন প্রতিবাদ করেননি হামিদ। যারা তাকে পালাতে সাহায্য করেছে তারাও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর। সবার আগে এদেরকেই আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচার করা হোক।’
সাধারণ নেটিজেনদের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে এসে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে। বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘খুনিকে দেশ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, পুলিশ আসামি ধরলেও আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়। শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বাসায় গিয়ে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসে এসেও শুরু হয়নি। আর আপনারা বলছেন আওয়ামী লীগের বিচার করবেন? তা ইন্টেরিম, এখন পর্যন্ত কী কী বিচার ও সংস্কার করেছেন?’