বিশ্বের দ্রুততম বিমান তৈরি করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সাধারণ বিমান বা ফাইটার জেটের গতি তো দূর, সুপারফাস্ট সুপারসনিক বিমান কনকর্ড টারবোজেটের গতিকেও হার মানাবে এটি। এই বিমানে করে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে যাওয়া যাবে নিমেষেই।৮ ঘণ্টার যাত্রায় সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। খুব তাড়াতাড়িই নতুন প্রজন্মের এই বিমান বাজারে আসতে চলেছে বলেই জানিয়েছে নাসা।
নাসার সুপারসনিক বিমানের নাম এক্স-৫৯ (X-59)। বিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সংস্থা লকহিড মার্টিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই বিমান তৈরি করেছে নাসা। এটি একটি নতুন প্রজন্মের বাণিজ্যিক বিমান, যা শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত।হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় এই বিমানটির গতি ১ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটারেরও বেশি
সাধারণত কোনো সুপারসনিক বিমান যখন চলাচল করে তখন সেটির ইঞ্জিন থেকে প্রচণ্ড শব্দ নির্গত হয়। এর ফলে অনেক সময় সৃষ্টি হয় সনিক বুম বা শব্দ নিনাদ। এই সনিক বুমের কারণে অনেক সময় সাধারণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাসা এবং লকহিড-মার্টিনের গবেষকেরা মূলত সেই বিষয়টি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার এক্স-৫৯ বিমানটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়নও করিয়েছেন তারা।
নাসার ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাম মেলরয় বলেছেন, ‘এয়ারক্রাফ্ট এক্স-৫৯ গতির সংজ্ঞাই বদলে দেবে। শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে উড়বে এই বিমান। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। এই বিমান নিরাপদ এবং এর ডিজাইন, যন্ত্রপাতিও খুব আধুনিক।’ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমরা একটি উচ্চাভিলাষী ধারণা থেকে বাস্তবে চলে এসেছি। নাসা ও এক্স-৫৯ টিম আমাদের ভ্রমণের উপায় ও ধারণা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। আমাদের আরও অনেক কম সময়ে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।’
ইতোমধ্যেই নাসার আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টার থেকে এই বিমানের পরীক্ষামূলক উড়ান হয়েছে বলেও জানান মেলরয়।
নাসার প্রকাশিত তথ্যে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এই ধরনের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য আগামী দিনে এ ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বিমান তৈরির কাজে অনেক সহায়তা করবে এবং এর ফলে শব্দের গতিতে যাত্রীবাহী বিমান তৈরির বিষয়টি আরও একধাপ এগিয়ে গেল।এই বিমানটির ইঞ্জিন মূল দেহের নিচের দিকে নয় বরং ওপরের দিকে অবস্থিত এবং বিমানের তলদেশটি অনেক মসৃণ ও সমান করে রাখা হয়েছে যাতে করে শব্দ দ্রুত কেটে যেতে পারে শক ওয়েভ যাতে ইঞ্জিনের তরঙ্গের সঙ্গে মিশে সনিক বুম তৈরি করতে না পারে।
নাসা জানিয়েছে, এক্স-৫৯ শব্দের গতির ১.৪ গুণ গতিতে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ৯২৫ মাইল বা ১৪৮৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার সমতুল্য। এর নকশা, কাঠামো এবং প্রযুক্তি খুবই আধুনিক বলে জানিয়েছে নাসা।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রথম দ্রুততম সুপারসনিক যাত্রীবাহী বিমান ছিল কনকর্ড। সেটিও ছিল সুপারসনিক এয়ারক্রাফ্ট। কিন্তু ২০০৩ সালের পর এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে, লকহিড মার্টিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জন ক্লার্ক বলেছেন, এক্স-৫৯ এয়ারক্রাফ্টের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এটি ওড়ার সময়ে কোনও শব্দ করবে না। এই বিমান লম্বায় ৯৯.৭ ফুট এবং ২৯.৫ ফুট চওড়া।
এক্স-৫৯ যাত্রীদের সময় বাঁচাবে, যাত্রাপথের সময় অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন জন। চলতি বছরের শেষের দিকে এই বিমানটি প্রথম যাত্রী নিয়ে উড়বে বলে জানা গেছে।