অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। নতুন নীতিতে বাজারে টাকার জোগান কমানোর কথা বলা হয়েছে এবং নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। বেশ সময় লেগে যায়। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকারে রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
গতবারের মুদ্রানীতিতে নেওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে না বাড়লেও গত নভেম্বর থেকে ক্রমাগত কমছে মূল্যস্ফীতি।’
বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে দেশের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের সংকটময় পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি সচিব ছিলাম। এক বছরের বেশি সময় চাকরি ছিল। এখন গভর্নর হয়েছি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। আমি চাইলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারব, আবার সরকার চাইলেও আমাকে সরিয়ে দিতে পারে। তবে চেয়ার হারানোর ভয় নাই, কোনো হুমকিও নাই। ভয় দেখাইয়াও লাভ নাই।
পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের সংকট প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর কাঠামোতে সমস্যা ছিল। সেখানে তারল্য সংকট হয়েছে অন্য কারণে, তাদের সুকুক বন্ড রয়েছে টোটাল ইসলামী ব্যাংকের দুই শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট ছিল। তবে তাদের বন্ডে বিনিয়োগ থাকায় তারা টাকা পেয়েছে।
এ সময় দেশের ব্যাংকগুলোর দুর্বলতার বিষয়ে কথা বলেন তিনি। আব্দুর রউফ বলেন, আমরা আগেই দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করেছিলাম। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, হবেও না। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তারা খারাপের দিকে যায়নি, দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির একটি খসড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বলা হয়, চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ইতিবাচক থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা, সুশাসন ও খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
‘সতর্ক ও সঙ্কুলানমুখী’ নতুন মুদ্রানীতিতে একদিন মেয়াদি নীতি সুদ হার ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।