শুক্রবার কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। সেখানে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এ পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপরই গত রোববার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মোবাইলফোনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রোববার রাত ১১টা) ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস না নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।
নতুন কারিকুলামের সমালোচনা করে ও পাঠ্যবইয়ের পাতা ছেঁড়ার জেরে শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসকে চাকরিচ্যুতের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ‘সে নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘উই ডোন্ট প্রমোট এলজিবিটিকিউ’।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব বলেছেন, আমি বাচ্চাদের পক্ষ নিয়েই কথাগুলো বলেছি যে, বাচ্চারা ভালো কিছু শিখছে না। কিন্তু, ব্র্যাক যেই সিদ্ধান্ত নিল, সেটি অনৈতিক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনেক আগ থেকেই ট্রান্সজেন্ডার নীতি প্রচারে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ ছিল। তাদের এমন সিদ্ধান্তে সেটি এবার প্রমাণ হলো।
ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার খবর প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পরে আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের প্রতিক্রিয়া জানান।
চাকরিচ্যুতের খবর প্রকাশের পর থেকে শুরু হওয়অ সমালোচনার মধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তারা বলেছে, চাকরি হারানো খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎসের সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই।
আসিফ মাহতাব বলেন, তারা বিজ্ঞপ্তিতে আসল ঘটনাই বলেনি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নিয়ম হলো- কয়েকটি ক্লাস করানোর পর চুক্তি করে। আমি এরই মধ্যে একটি ক্লাস করিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল, সেটি সবার বোঝার কথা।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে আমার বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর উনারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে এর আগেরদিনও আমি ক্লাস নিয়েছি। তারপর আমাকে রাত ১২টায় কল দিয়ে বললো আসতে হবে না। আমি জানি না এটা কী ধরনের পেশাদারিত্ব। এটা পুরোপুরি বৈষম্য। অন্যকোনো শিক্ষকের সাথে তো করা হয়নি। আমার সাথে কেন করা হয়েছে? আমার দর্শন, আমার ধর্মের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক গল্প পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানান শিক্ষক আসিফ মাহতাব।
তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার সামনে ওই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করা আসিফ মাহতাব উৎসের সঙ্গে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধরনের চুক্তি নেই।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস অব কমিউনিকেশন্স শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসিফ মাহতাব উৎস ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার কর্মী এবং তাদের চুক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্যাম্পাসে সবার মাঝে সহযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করে।
এর আগে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে চাকরি খোয়ান শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস।
জানতে চাইলে আসিফ মাহতাব বলেন, তারা বিজ্ঞপ্তিতে আসল ঘটনাই বলেনি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নিয়ম হলো- কয়েকটি ক্লাস করানোর পর চুক্তি করে। আমি এরই মধ্যে একটি ক্লাস করিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল, সেটি সবার বোঝার কথা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, আমি বাচ্চাদের পক্ষ নিয়েই কথাগুলো বলেছি যে, বাচ্চারা ভালো কিছু শিখছে না। কিন্তু, ব্র্যাক যেই সিদ্ধান্ত নিল, সেটি অনৈতিক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনেক আগ থেকেই ট্রান্সজেন্ডার নীতি প্রচারে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ ছিল। তাদের এমন সিদ্ধান্তে সেটি এবার প্রমাণ হলো। এখন মানসিকভাবে প্রস্তুত নই, তাই কোনো পদক্ষেপের কথা ভাবছি না।