স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১টি আসন পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ ৭৫টি আসন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি।
পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনের তিন দিন পর রোববার পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন ইসিপি। সেখানে কোনো দল সর্বশেষ কতটি আসন পেয়েছে সেটি জানানো হয়েছে।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৬৪ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫ আসনে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দল পেয়েছে ১৭টি আসন।
এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে দেশটির জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ১৩৪টি আসনে জয়ী হতে হবে। পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থায় সরকার গঠনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডন ও জিও টিভির খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৮৮, ১৮ এবং ৯০ আসনের কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে শনিবার দেশটির সেনাপ্রধান বলেন, পাকিস্তানের ‘স্থিতিশীল শক্তি’ দরকার এবং ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কারাবন্দী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হলেও সরকার গঠনের দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে তাঁদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন)। গতকাল শনিবার পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পিএমএল–এন–এর নেতারা। সেখানে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পরে অবশ্য পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পরে বলেছেন, পিএমএল–এন বা অন্য কারও সঙ্গে জোট সরকার গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭ হাজারের বেশি প্রার্থী। ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখ। তাদের ভোটেই নির্ধারিত হচ্ছে আগামী পাঁচ বছর পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির শাসন ক্ষমতায় কারা থাকবেন।
পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপক। জেনারেলরা দীর্ঘসময় দেশ পরিচালনা করেছেন। সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার পর জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনির বলেছেন, ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতির পরিবর্তে দেশে স্থিতিশীল শক্তির প্রয়োজন। নিরাময়ের ছোঁয়া প্রয়োজন।’
পাকিস্তানে ফল ঘোষণায় দেরি: বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত ২, আহত এনডিএম নেতা
পাকিস্তানের নির্বাচনে ফল প্রকাশে দেরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) দুই কর্মী। এ ছাড়া পার্টির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য মহসিন দাওয়ারসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
গতকাল দেশটির খাইবারপাতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরামশাহ সেনানিবাসে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির এনএ-৪০ আসনে ফল প্রকাশে দেরি এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে আসনটির প্রার্থী মহসিন দাওয়ারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশে কারচুপির অভিযোগে গতকালও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে। করাচি, লাহোর, পেশোয়ার ও কোয়েটা শহরে সমাবেশ করেছেন পিটিআইয়ের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা। বেলুচিস্তান প্রদেশেও বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল। এদিন উত্তর ওয়াজিরিস্তান শহরে জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য মোহসিন দাওয়ারের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)।
পাকিস্তানের নির্বাচনে কারচুপির তদন্ত চায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ
পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। দুদিনও প্রকাশ হয়নি পূর্ণাঙ্গ ফল। দীর্ঘ বিলম্বকে অস্বাভাবিক বলেছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি এ বিলম্বের কারণে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এবার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের (হাউস অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স) চেয়ারম্যান ও রিপাবলিকান সদস্য মাইকেল ম্যাককল পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। খবর ডনের।
মাইকেল ম্যাককল নির্বাচনে ব্যাপক অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তানিদের জনগণের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে কারচুপি বা দুর্নীতির যে কোনো অভিযোগের অবশ্যই পূর্ণ তদন্ত করতে হবে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ম্যাককল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের জনগণের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অধিকারকে সমর্থন করে, যা আইন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭ হাজারের বেশি প্রার্থী। ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখ। তাদের ভোটেই নির্ধারিত হচ্ছে আগামী পাঁচ বছর পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির শাসন ক্ষমতায় কারা থাকবেন।