রোববার দিবাগত রাতভর গাজার রাফা শহরে আকাশ ও সমুদ্র পথ ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার চাপ ও আহ্বানকে উপেক্ষা করে ইসরাইল অব্যাহতভাবে সেখানে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করছে। পুরো গাজার প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থী বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাফা শহরে। এটিই তাদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে হামলা চালালে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন সহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। তিনি বলেছেন, রাফায় আশ্রয় নেয়া কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিতে হবে সামরিক হামলা চালাতে গিয়ে। কিন্তু কোনো কথাই কানে তুলছেন না নেতানিয়াহু। রোববার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের একজন সিনিয়র নেতা আল আকসা টেলিভিশনকে বলেছেন, রাফায় ইসরাইলের হামলায় জিম্মি ও বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাবে।
‘ইসরাইলের নিপীড়নের জবাবে’ ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক।
সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিএনএনের (কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ছিল ‘২১ শতকের বৃহত্তম ইহুদি-বিরোধী গণহত্যা’ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এই মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।
আলবেনিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে বলেছেন, ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ইহুদি বিরোধী গণহত্যা’? না, ম্যাক্রোঁ আপনার কথাটি ঠিক নয়। ৭ অক্টোবরের হামলা হয়েছিল তাদের ইহুদি ধর্মের কারণে নয়, ইসরাইলের নিপীড়নের জবাবে। এ সময় ফ্রান্স এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিপীড়ন প্রতিরোধে কিছুই করেনি।
এদিকে গাজা উপত্যকার রাফাহতে ইসরাইলি ব্যাপক বিমান হামলায় ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) সোমবার ভোরে জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৬০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
পিআরসিএস বলেছে, রাফাহ হলো সর্বশেষ ‘নিরাপদ স্থান’ যেখানে গাজার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা আশ্রয় নিয়েছিল। এ এলাকা যুদ্ধবিমান এবং বিমান হামলার দ্বারা ‘তীব্র লক্ষ্যবস্তু’তে পরিণত করেছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সোমবার নিশ্চিত করেছে যে- তারা রাফাহ জেলার শাবোরা এলাকায় লক্ষ্যবস্তুতে ‘একটি সিরিজ হামলা’ চালিয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরো এক বিবৃতিতে বলেছে যে- ‘হামলা শেষ হয়েছে।’
এদিকে ইসরাইল গাজা উপত্যকার সর্ব-দক্ষিণের শহর রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করলে এটির সাথে পণবন্দী মুক্তির আলোচনা বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে হামাস।
সংগঠনটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, ‘রাফাহ শহরে দখলদার বাহিনীর যেকোনো হামলা বন্দি বিনিময় আলোচনাকে হুমকিগ্রস্ত করবে।’
গাজায় আটক ইসরাইলি পণবন্দীদের মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনা করতে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে কায়রোয় অবস্থান করছে। রাফাহতে হামলা হলে কায়রো থেকে প্রতিনিধিদল প্রত্যাহার করে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে হামাসের ওই সূত্র।
এর আগে শনিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাফাহ শহরে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিতে ইসরাইলি বাহিনীর প্রতি নির্দেশ জারি করেন। তার ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে; কারণ, গত চার মাস ধরে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতে গিয়ে উপত্যকার বেশিরভাগ অধিবাসীকে রাফাহ শহরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখই এখন রাফাহতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা নাকচ করে দিয়ে নেতানিয়াহু রোববার বলেছেন, রাফাহতে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানোর অর্থ গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা।
সূত্র : সিএনএন ও আল-জাজিরা