পাকিস্তানে নির্বাচন-পরবর্তী অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার গঠন নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। এর মধ্যে লাহোরে শনিবার রাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সভায় তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তারা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে একযোগে কাজ করতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, পিপিপি এখনো সমঝোতার অংশ হিসেবে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে আগ্রহী। কিন্তু পিএমএল-এন এই ছাড় দিতে রাজি নয়।
তারা নিজেরা অন্য কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমগুলো। তাতে বলা হচ্ছে, পিএমএলএন এবং পিপিপির মধ্যে অটুট বন্ধন স্থির হয়ে গেলে তারা মাওলানা ফজলুর রেহমানের জমিয়তে উলেমায়ে ইসলামকে (জেইউআইএফ) কাছে ডাকতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার আগেই তারা মিলে গঠন করেছিল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) জোট। ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তারা সরকার গঠন করে। এবারও যদি তাই হয় তাহলে এটা হবে পিডিএম-২ মেয়াদ, এমনটাই বলছে অনলাইন জিও নিউজ।
জোট গঠন নিয়ে রোববার দিনভর নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ছিল। পিএমএলএন ও পিপিপির বৈঠকের পর যৌথ একটি বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, পিএমএলএনের প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি লাহোরে বিলাওয়াল হাউসে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং সহসভাপতি আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা নতুন সরকার গঠনে সহযোগিতা চান। জবাবে পিপিপির নেতৃত্ব জানান, তারা এই প্রস্তাব নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা করবেন। এই আলোচনা হওয়ার কথা আজ সোমবার। তবে রোববার দুই দলের মধ্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক সহযোগিতায় নীতিগতভাবে একমত হয়েছে পিএমএলএন এবং পিপিপি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে উভয় পক্ষ সমস্যা সমাধানে একমত হয়েছে।
এটা হতে পারে পিএমএলএন ও পিপিপির সমন্বয়ে পিডিএম জোটের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার।
অন্যদিকে এ দুটি দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা জোট গঠনের সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর আলি খান।
নীতিগতভাবে জোট গঠনে রাজি হওয়ার পর নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) সঙ্গে আজ সোমবার মিটিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আসিফ আলি জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এ জন্য তারা আজ দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক আহ্বান করেছে। দৃশ্যত এ দুটি দলই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- তা নিয়ে উভয় দলের মধ্যে চলছে দর কষাকষি। পিপিপির বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি চাইছেন প্রধানমন্ত্রী হতে। অন্যদিকে পিএমএলএনের নওয়াজ শরীফেরও একই খায়েস।কারণ, তিনি এবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে পাকিস্তানে রেকর্ড গড়বেন। তার নামের আগে যুক্ত হবে চারবারের প্রধানমন্ত্রী। ফলে তাদের মধ্যে এখন এই একটি পদ নিয়েই অংশীদারিত্ব আটকে আছে। এর প্রেক্ষিতে আজ সোমবার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সেখান থেকে কোনো ঘোষণা আসতে পারে।
সূত্রটি জানিয়েছে, পিএমএল-এন সমঝোতার অংশ হিসেবে পিপিপিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্টের স্পিকার এবং সিনেটের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
পিপিপি রাজি হলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি হতে পারেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ইমরান খান সরকারের পতনের পর গঠিত শাহবাজ শরিফের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
খবর পাওয়া গেছে, পিপিপি পার্লামেন্টের স্পিকার পদে তাদের দলের রাজা পারভেজ আশরাফ কিংবা সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানিকে চাচ্ছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রোববার রাতেই দল দুটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে। এর আগে তারা অবশ্য কয়েক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে। পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা লাহোরে বিলওয়াল হাউসে যান।
সরকার গঠন প্রশ্নে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারি, পিপিপির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি এবং শাহবাজ শরিফ আলোচনা করেন।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভির, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব, শিজা ফাতিমা।
বৈঠকে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোট দিয়েছে। আমরা জনগণকে হতাশ করব না।
পিএমএলএন-পিপিপি জোট বাস্তবায়িত হলে পাঞ্জাবে পিপিপির সমর্থন পাবে পিএমএলএন। পিএমএলএন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাবে। পিপিপি কয়েকটি মন্ত্রী পাবে।
একইসাথে পিপিপি বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পাবে। সূত্র জানিয়েছে, পিপিপি সেইসাথে বেলুচিস্তানের গভর্নর এবং স্পিকারের পদও চেয়েছে।
এই সমঝোতায় পিএমএলএনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদটি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অনেকেই চায় না, এই দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হোক। কারণ ইমরান খানের পর ১৬ মাসের সরকারের আমলে শাহবাজ বেশ ক্ষতি করেছেন। তারা মনে করছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা বেশ শোচনীয়। নওয়াজ শরিফ বা শাহবাজ শরিফ আবার প্রধানমন্ত্রী হলে ভালো কিছু হবে না।
পাকিস্তানে নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত আসন সংখ্যা অনুযায়ী ইমরান খানের পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র সদস্য ৯৩ জন, পিএমএল-এন ৭৫, পিপিপি ৫৪, এমকিউএম ১৭, অন্যান্য স্বতন্ত্র ৯, পিএমএল ৩, আইপিপি ২, বিএনপি ২টি আসন পেয়েছে। এছাড়া একটি করে পেয়েছে পিএমএল-জেড, পিএনএপি, বিএপি, পিকেএমএপি, এনপি একটি করে আসন।
পাঞ্জাবে পিএমএলএন পেয়েছে ১৩৮টি আসন, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ১১৬টি, অন্যান্য স্বতন্ত্র ২২টি, পিপিপি ১০টি, পিএমএল ৭টি, টিএলপি ১টি।
সিন্ধুতে পিপিপি ৮৩টি, এমকিউএম ২৮টি, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র ১১টি, অন্যান্য স্বতন্ত্র ৩টি, জিডিএ ৩টি, জেআই ২টি।
খাইবার পাকতুনখাওয়ায় পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র ৮৪টি, স্বতন্ত্র ৮টি, জেইউআইএফ ৭টি, পিএমএলএন ৫টি, পিপিটি ৪টি, জেআই২টি, পিটিআই-পি ২টি, এএনপি ১টি।
বেলুচিস্তানে পিপিপি ১১টি, পিএমএলএন ১০টি, জেইউআই-এফ ১০টি, স্বতন্ত্র ৫টি, বিএপি ৪টি, এনপি ৩টি, বিএনপি ২টি, এএনপি ২টি, এইচডিটি ১টি, জেআই ১টি, আরএইচ হক ১টি, বিএনটি-এ ১টি।
জোট গঠন নিয়ে রোববার দিনভর নেতাদের দৌড়ঝাঁপ ছিল। পিএমএলএন ও পিপিপির বৈঠকের পর যৌথ একটি বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, পিএমএলএনের প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি লাহোরে বিলাওয়াল হাউসে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং সহসভাপতি আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা নতুন সরকার গঠনে সহযোগিতা চান। জবাবে পিপিপির নেতৃত্ব জানান, তারা এই প্রস্তাব নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা করবেন। এই আলোচনা হওয়ার কথা আজ সোমবার। তবে রোববার দুই দলের মধ্যে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক সহযোগিতায় নীতিগতভাবে একমত হয়েছে পিএমএলএন এবং পিপিপি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে উভয় পক্ষ সমস্যা সমাধানে একমত হয়েছে।
এটা হতে পারে পিএমএলএন ও পিপিপির সমন্বয়ে পিডিএম জোটের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার।