ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সর্বশেষ ‘নিরাপদ স্থান’ রাফাহতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা চালানো হয়। আর এসব হামলায় অঞ্চলটিতে ১৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা এখনো বেড়ে চলছে।
ফিলিস্তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিসিআরএস) জানিয়েছে, বর্তমানে রাফাহতে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অবস্থান করছে। সেখানে সোমবার রাতে যুদ্ধবিমানের দ্বারা তীব্র বিমান হামলার স্বীকার হয়েছেন তারা।
রাফাহর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলিরা তাদের বর্বর হামলায় অন্তত দুটি মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি বাড়িকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।
ফিলিস্তিন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা হেলিকপ্টার থেকে মেশিনগান ব্যবহার করে রাফহার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে গুলি ছুড়েছে। অবরুদ্ধ ও ছোট্ট গাজা উপত্যকার রাফাহর সঙ্গে মিসরের সীমান্ত রয়েছে।
রাফাহর আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, “দখলদারদের বোমা হামলায় এত মানুষ হতাহত হয়েছেন যে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।”
রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ইসরায়েলিদের চালানো নতুন হামলায় ধসে পড়া ভবনের নিচে অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণে রাফাহতে স্থল অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে সরকারসমূহ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
হোয়াইট হাউস রবিবার ঘোষণা করে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে এবিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
এতে বলা হয় যে, মিস্টার বাইডেন তার দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, রাফাহতে অভিযান পরিচালনায় “আশ্রয় নেয়া ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের সুরক্ষা এবং সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং কার্যকরী পরিকল্পনা ছাড়া এগোনো উচিত নয়।”
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার একটি বিবৃতি জারি করে বলে যে, রাফাহতে ইসরায়েলের বড় ধরনের আক্রমণ একটি নতুন এবং অযৌক্তিক বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র, যিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন, তিনিও রবিবার একটি বিবৃতি জারি করেন।
বিবৃতিতে রাফাহকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য সমন্বিত আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য এই মুহুর্তে রাফাহতে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।
নেতানিয়াহু রাফাহতে একটি জোরালো আক্রমণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন, যেখানে হামাসের একটি শক্ত ঘাঁটি রয়েছে বলে জানাচ্ছে।
রবিবার প্রচারিত এবিসি নিউজের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন যে, ইসরায়েলি বাহিনীর রাফাহ প্রবেশ করা উচিত নয়, এমন যুক্তি দিয়ে মূলত বলা হচ্ছে, “যুদ্ধে হেরে যাও।”
হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন সদস্য সতর্ক করে বলেন যে, রাফাহ আক্রমণ তীব্র হলে জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে না।