রাশিয়ার গণতন্ত্রপন্থী এবং সরকার বিরোধী ব্যক্তিত্ব অ্যালেক্সি নাভালনি মারা গেছেন । রাশিয়ার কেন্দ্রীয় কারাগারে চলাফেরার সময় হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই অসুস্থতা থেকেই মারা যান তিনি। তার মৃত্যু নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ খবর দিয়েছে আরটি।
খবরে জানানো হয়, মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৪৭ বছর। তাকে সংশোধনমূলক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং পরে মারা যান। তাকে বাঁচানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হলেও তাতে সফল হননি চিকিৎসকরা। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা খুঁজে বের করবেন চিকিৎসকেরা।
নাভালনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০২১ সাল থেকে নাভালনি কারাবন্দি। গণতন্ত্রপন্থী নেতা নাভালনিকে গত বছর আগস্টে ১৯ বছরের কারাদ- দেয় রাশিয়ার আদালত। এরই মধ্যে তিনি প্রতারণা ও অন্যান্য অভিযোগের দায়ে সাড়ে ১১ বছর কারাভোগ করেছেন। যদিও নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন নাভালনি।
ক্রেমলিন নিশ্চিত করেছে যে, নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জানানো হয়েছে। মৃত্যু নিয়ে নাভালনির আইনজীবী জানান, গত বুধবার তিনি নাভালনির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন।
ক্রেমলিন সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস বলেছেন, নাভালনি যদি সত্যিই মারা যান তাহলে এটি হবে পুতিনের বর্বরতার আরও একটি চিহ্ন। জার্মানিতে বার্ষিক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলছি, এর জন্য রাশিয়া দায়ী।
হ্যারিসের আগে বক্তব্য দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, যদি নাভালনির মৃত্যুর খবর সঠিক হয়, তাহলে এটি রাশিয়ার দুর্বলতা ও পচন ধরাকে নিশ্চিত করে। নাভালনির মৃত্যুর জন্য রাশিয়া দায়ী। এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা জ্যাক সুলিভান ব্রডকাস্টার এনপিআরকে বলেছেন যে, ওয়াশিংটন এখনও নাভালনির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
এর আগে শুক্রবার রাশিয়ার কারাগারে মারা যান ক্রেমলিন বিরোধী ব্যক্তিত্ব অ্যালেক্সি নাভালনি। তার মৃত্যুর জন্য রুশ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন দের লিয়েন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, পুতিনই হত্যা করেছেন নাভালনিকে। জেলেনস্কি বলেন, স্পষ্টতই তিনি পুতিনের হাতে মারা গেছেন। আরও হাজার হাজার মানুষ পুতিনের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন।
এক্সে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নাভালনির মৃত্যুকে ‘ভয়ানক খবর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিএপিকে বলেছেন, নাভালনি সমস্ত রাশিয়ান গণতন্ত্রের নায়ক ও প্রতীক। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানি বলেন, কয়েক বছর ধরে কারাগারে নিপীড়নের পর আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুতে আমি খুবই মর্মাহত। ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেন, আলেক্সি নাভালনি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূল্যবোধের জন্য লড়াই করেছিলেন।
এদিকে পশ্চিমা এসব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেন, নিজেদের আচরণকেই এখন রাশিয়ার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমারা।
রাশিয়ার বিরোধী দলের নেতা আলেক্সি নাভালনির অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলল ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। শুক্রবার রাশিয়ার আর্কটিক জেল কলোনির হেফাজতে বন্দি থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে আলেক্সি নাভালনির। তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ন্যাটো প্রধান। প্রশ্ন তুলে স্টলটেনবার্গ বলেন, “আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু নিয়ে ‘গুরুতর প্রশ্ন’ রয়েছে। ক্রেমলিনকে তাঁর যথাযথ উত্তর দিতে হবে।” শুক্রবার সাংবাদিকদের ন্যাটো প্রধান বলেন, রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। এটি যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। তাঁর মৃত্যু নিয়ে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘গুরুতর প্রশ্ন’ রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত বছর রাশিয়ার বিরোধী দলনেতাকে ১৯ বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছিল এক রুশ আদালত। এর আগেও সাড়ে ১১ বছর কারাদণ্ডে ছিলেন তিনি। যদিও আলেক্সির দলের মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ দাবি করেছেন যে, আলেক্সির মৃত্যুর খবর তাঁর দলকে জানানো হয়নি।