আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বৈঠকে বসেন কৃষক নেতাদের সঙ্গে।
বৈঠকের পরে পীযূষ জানিয়েছেন, সরকারের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এনসিসিএফ, নাফেডের মতো সমবায় সংস্থা কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ডাল, ভুট্টা কেনার জন্য পাঁচ বছরের চুক্তি করতে পারে। কটন কো-অপারেশন অব ইন্ডিয়াও পাঁচ বছরের জন্য একই রকম চুক্তি করতে পারে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে তুলো কেনার জন্য।
কিসান মজদুর মোর্চার নেতা সারওয়ান সিং পানধের পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তের শম্ভু পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে অথবা ব্যারিকেড সরিয়ে দিতে, যাতে আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে দিল্লির দিকে আগাতে পারি।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে দিল্লি চলো রোডমার্চ শুরুর একদিন পর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষকদের পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে আটকে দেয়। এরপর থেকে সীমান্তেই অবস্থান করছেন কৃষকরা।
১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ‘দিল্লি চলো’ রোডমার্চ শুরু করেছেন ভারতের কৃষকরা। কৃষক সংগঠনগুলি যে দাবিগুলি নিয়ে দিল্লির রাস্তায় নামছেন তার মধ্যে অন্যতম হল, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করারও দাবি তুলেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা।
কৃষকদের এই রোডমার্চ ঠেকাতে ইতোমধ্যে রাজধানী দিল্লিকে নিরাপত্তা দিতে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, কৃষকদের দিল্লিযাত্রা রুখতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। তড়িঘড়ি দু’টি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী জেল তৈরি করেছে হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টরের সরকার। সিরসার চৌধুরি দলবীর সিংহ ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ডাবওয়ালির গুরু গোবিন্দ সিংহ স্টেডিয়াম দু’টিকে অস্থায়ী জেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। কৃষকেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের আটক করে ওই দু’টি জেলে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর। হরিয়ানা সীমান্তে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে জলকামান। বিক্ষোভকারীরা যাতে অন্যান্য জেলা থেকে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যে রাজ্যের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ মোতায়েন করেছে সে রাজ্যের সরকার। হরিয়ানার সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।
কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। কৃষকদের কর্মসূচির আগে দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে । ১২ মার্চ পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে রাজধানীতে। সিঙ্ঘু, গাজিপুর এবং টিকরি সীমানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সীমানা অবরুদ্ধ করতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে জায়গায় জায়গায়। কংক্রিটের দেওয়াল তুলে কাঁটাতারের বেড়া এবং পেরেকের পাটাতন বসানো হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এবং কৃষক সংগঠনগুলি।