• ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা প্রত্যাহার, সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকসহ ১০ পদে আওয়ামী লীগ, সভাপতিসহ ৪ পদে বিএনপি জয়ী

usbnews
প্রকাশিত মার্চ ১০, ২০২৪
যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা প্রত্যাহার,  সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকসহ ১০ পদে আওয়ামী লীগ, সভাপতিসহ ৪ পদে বিএনপি জয়ী
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতিসহ চারটি পদে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।

অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।

বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদের মধ্যে তিনটি সদস্য পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

অপরদিকে সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক জয়ী হয়েছে। এছাড়া সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সম্পাদক চারটি সদস্যসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

সভাপতি, সহসভাপতি (দুটি), সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহসম্পাদক (দুটি), সদস্যের সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি ও সদস্যের তিনটি পদসহ চারটি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সহসভাপতির দুটি পদ, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সহসম্পাদকের দুটি পদসহ সদস্যের চারটিসহ দশটি পদে জয় পেয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা।

শনিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

এদিকে, ভোট গণনা নিয়ে মারামারি, হট্টগোল ও নানা নাটকীয়তার পর ব্যাপক পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ভোট গণনা করা হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় দিকে সম্পাদকীয় পদে ভোট গণনা শেষ হয়।এছাড়া সাতটি সদস্য পদে ভোট গণনা শেষ হয় রাত ১১টার দিকে।

নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে মারামারি, হট্টগোল ও নানা নাটকীয়তার পর ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় য় সম্পাদকীয় পদে ভোট গণনা শেষ হয়।

৫ জন রিমান্ডে

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ (এস আর সিদ্দিকী সাইফ)। মামলায় আইনজীবী নাহিদ সুলতানাসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় ২০ জন আসামির মধ্যে বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলও, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথী। মামলায় এজাহারভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- আইনজীবী মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, শাকিলা রৌশন, কাজী বশির আহম্মেদ, ওসমান, আরিফ, সুমন, তুষার, রবিউল, চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা, সাইদুর রহমান, অলিউর, জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন, মশিউর রহমান, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, তরিকুল ও সোহাগ। তারা সবাই আইনজীবী।এ ছাড়া মামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

 

নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের শনিবার লিখিত এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও তা অর্থহীন ঘোষণা, তবু কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা “ইগনোর” করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হট্টগোল ও শুক্রবার ভোরে মারধরের ঘটনার পর আবুল খায়েরের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, সমিতির মিলনায়তনে তিনি বলেছেন, ‘শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা (যুথী) সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাই তাঁকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।’

 

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও মারামারির ঘটনায় করা মামলার সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক এবং নির্বাচনে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ছয়জন আইনজীবীকে আটক করা হয়েছে।

শনিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ব্যারিস্টার কাজলকে তার পল্টনের চেম্বার থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: মাকসুদ উল্লাহ।

এছাড়া এ মামলার প্রধান আসামি আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথীর ধানমন্ডির বাসায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে। যুথী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।

এ মামলায় গ্রেফতার অন্য আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহমেদ, অ্যাডভোকেট তুষার, অ্যাডভোকেট তরিকুল, অ্যাডভোকেট এনামুল হক সুমন ও ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী।

এরআগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনার সময়ে মারামারির ঘটনায় শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

শুক্রবার রাতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো: সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ বাদি হয়ে তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি, বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো: জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, শাকিলা রৌশন, কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, অ্যাডভোকেট রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল, অ্যাডভোকেট অলিউর, জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের ও সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল সুপ্রিম কোর্ট বার হল রুমে ভোট গণনা শুরু করতে বলেন। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়।

তবে সুপ্রিম কোর্ট বার হল রুমে ভোট গণনার স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সাদা) প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও এজেন্ট থাকলেও প্রথম দিকে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের কাউকে দেখা যায়নি। তবে সন্ধ্যা পোনে ৬টার দিকে সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন আসেন এবং তার লোকদের নিয়ে ভোট গণনার স্থানে অবস্থান করেন।

যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা প্রত্যাহার

এদিকে সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি আজ প্রত্যাহার করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের। এ বিষয়ে তথ্য বিভ্রাট নিরসনের জন্য তিনি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন, ২০২৪-২৫ এর ‘সম্পাদক’ পদে ফলাফল বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় আমার নামে প্রচারিত ঘোষণাটি সম্পূর্ণরূপে আইনানুগভাবে ভিত্তিহীন হয়। একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার পূর্বেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাহা লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়।