রংপুরের প্রসিদ্ধ আঁশমুক্ত সুস্বাদু হাড়িভাঙ্গা আম আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসছে।
চলতি মৌসুমে ঘন-ঘন বৃষ্টি হওয়ায় এবার আগাম পাকতে পারে আম। তবে এবারে আমের প্রচুর মুকুল গাছে এলেও দফায় দফায় ঘুর্ণিঝড় ও শিলা বৃষ্টির কারণে একদিকে ফলন কম হয়েছে অপরদিকে দফায় দফায় শিলা বৃষ্টিতে অনেক আম ঝরে পড়েছে। তবে এরপরও ফলন ভাল হওয়ায় এ বছর অন্ততঃ আড়াই’শো কোটি টাকার আম বিক্রির আশা স্থানীয় আম চাষিদের।
মিঠাপুকুর উপজেলার প্রসিদ্ধ আম চাষের এলাকা পদাগঞ্জের আম বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে বাগানে চলছে শেষ সময়ের আমের পরিচর্যা। চাষিরা গাছে ভিটামিন স্প্রে করছেন। এই আমই স্বপ্ন দেখছেন আম চাষিরা। গতবারের চেয়ে এবারে ফলন কম হলেও আম বেচাকেনা ভাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই স্বপ্ন ঘিরেই এখন চলছে পাইকারদের কাছে আমের বাগান বেচা-কেনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন অনেকেই বাগান কেনার জন্য। মৌসুমী আম ব্যবসায়ী কিংবা অনলাইনে যারা কেনাবেচা করেন তারা এসেছেন বাগান দেখার জন্য। অনেকেই বাগান মালিকদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করছেন হিসেব-নিকেশ। আঁশ বিহীন এবং অত্যন্ত সুমিষ্ট হওয়ায় এই আম মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুই দশক আগে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ সহ কয়েকটি এলাকায় ব্যপক হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ হতো। হাড়িভাঙ্গা আমের জনপ্রিয়তার কারণে এখন রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, সদর উপজেলা, নীলফামারীর সৈয়দপুর এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দর সহ বরেন্দ্র প্রভাবিত বিভিন্ন লালমাটি এলাকায় ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এসব বাগান। চাষিদের নিবিড় পরিচর্যায় বাগানে আম দোল খাচ্ছে গাছগুলোতে। তবে এ বছর এই আমের সাইজ কিছুটা ছোট ও ফলন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। এর কারণ হিসাবে চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টি আর ঘুর্ণিঝড়ে প্রথম দফায় মুকুল গুলো ঝরে যায়। দ্বিতীয় দফায় আবারও ঘুর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে পরবর্তীতে গুটি আমেরও একটি অংশ ঝরে যায়। এছাড়া রমজান মাসে রোজা এবং ঈদের ব্যস্ততায় বাগান পরিচর্চায় কিছুটা ব্যহত হয়েছে। তবে যারা সঠিক পরিচর্চা করেছেন, তাদের আম ভালো হয়েছে।
মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের আম চাষি রওশন আলী জানান, দুর্যোগের পর অবশিষ্ট আম যাতে সাইজে বড় হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। আম বাজারে আসতে যে সময় বাকী আছে এই সময়ে পরির্চযা করে আমের সাইজ বড় করতে পারলে লাভ হবে। আম চাষি রাঙ্গা মিয়া জানান, এবারে পরিচর্যার ঘাটতির কারনে তাঁর আমের ফলন কম হয়েছে। গতবছর ফলনও বাম্পার হলেছিল, লাভও ভালো হয়েছিল। সময় মতো আম বাজারজাত করতে পারলে হয়তো ক্ষতি কম হবে। আম চাষি আব্দুর রউফ জানান,প্রায় ৬-৭ বছর ধরে আম চাষ করে আসছেন। সময় মতো পরিচর্চার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তবে ভিটামিন ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবারে ব্যয় বেশি হয়েছে। পদাগঞ্জের আম চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর আগাম বাগান বিক্রি করে দেন। এবারেও ১ লাখ টাকায় চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন। দুটি বাগান নিজেই দেখভাল করছেন। কম ফলন হলেও লাভ হবে বলে তিনি জানান।
আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারে হাড়িভাঙ্গা সহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম দেশ বিদেশে সরবরাহে এখনই প্লাষ্টিকের ক্যারেট, সুতলি, খাঁচা, পেপারসহ আনুষাঙ্গিক জিনিষের কেনাবেচা শুু হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবারের এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। গতবছর এসময় বাংলা ক্যারেট ৭০-৮০ টাকা হলেও এখন ১০০ টাকা, ভালো মানের ক্যারেট গতবার ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার বেড়ে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে। বেড়েছে সুতলী এবং পেপারের দামও।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, জেলায় এবারে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ফলন কম হলেও হেক্টর প্রতি ১২-১৫ টন আম আসবে। জুনের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে হাড়িভাঙ্গা আম আসার সম্ভাবনা থাকলেও জুনের শেষ সপ্তাহে ভালোভাবেই বাজারে আম পাওয়া যাবে। সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারজাত না করার জন্য আম চাষিদের অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। আগাম লাভের আশায় আম বাজারজাত করলে হাড়িভাঙ্গা আমের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। এর ফলে রংপুরের প্রসিদ্ধ হড়িভাঙ্গা আমের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন।