বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যে জনমত যাচাইয়ে একটি জরিপের আয়োজন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল মেইল ব্যবহার করে দুইদিন ব্যাপী পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুয়েটে বর্তমানে অধ্যয়নরত সর্বমোট ছাত্রসংখ্যা ৫ হাজার ৮৩৪ জন। এই জরিপে তাদের সবাই অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। সুতরাং শিক্ষার্থীদের অবস্থানের যথাযথতা এখানে প্রমাণিত।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য অপপ্রচার ও গুজব চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা জানতে পারি যে, ৩ এপ্রিল বুয়েট ইস্যুতে ছাত্রদলের অবস্থান স্পষ্টকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থানের দাবিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। ছাত্রদল বলছে, “ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মূহুর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এই রাজনৈতিকভাবে মদতপুষ্ট সংহতিকে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করছি। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে তখনো আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ ্রপৌনঃপুনিক ১৫গ্ধ তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করি এবং ভিসি ও ডিএসডব্লিউ স্যার বরাবর তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনো এর প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখবো।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন এর দাবি এবং অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তবে আমরা তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করবো।
সংবাদ সম্মেলন সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্রসংগঠন এর বিরুদ্ধে নয়। আমরা ছাত্ররাজনীতি-ই ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে, অতএব এটি করতে চায় এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান সমান এবং অনড়।
তারা আরও জানান, হিজবুত তাহরীর এর মত নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।
১৩ দিনের ছুটি:
ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ধমধমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বুয়েটে। এরই মধ্যে ১৩ দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। রোজা, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনের ছুটি থাকবে বুয়েটে। গত ৩০ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ছুটি ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা আগেই ছুটিতে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ছুটি থাকবে ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল। ঈদের পর আগামী ১৭ এপ্রিল ফের একাডেমিক কার্যক্রম চালু হবে বুয়েটে। যদিও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবারও পরীক্ষা বর্জন করেন তারা। ঈদের আগে এদিন শেষ পরীক্ষার তারিখ ছিল। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ মার্চ দুটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেননি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটানোর কারণ হিসেবে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। এরপর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।