• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিন উদ্ধার: র‌্যাব

usbnews
প্রকাশিত এপ্রিল ৪, ২০২৪
সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিন উদ্ধার: র‌্যাব
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

বান্দরবানের রুমায় অপহরণের শিকার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর র‌্যাবের মধ্যস্থতায় তাকে উদ্ধার করা হয়।আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বান্দরবানের রুমা বাজার এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে গত ২ এপ্রিল গত মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে কেএনএফের অস্ত্রধারীরা। ব্যাংকের ভল্টে থাকা এক কোটি ৫৯ লাখ টাকা লুট করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। তবে তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে নিয়ে যায়।

অস্ত্রধারীরা যে চাঁদের গাড়িতে থানচি বাজারে গিয়েছিল, তা ভুসি নেওয়ার কথা বলে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বলে জানান গাড়ি দুটির চালকেরা। গাড়িচালকদের একজন বলেন, ফোনে ভাড়ার কথা অনুযায়ী তংকং পাড়ায় পৌঁছে কেএনএফ লেখা পোশাক পরা অস্ত্রধারীদের দেখতে পান তিনি। তখন আর ফিরে আসার উপায় ছিল না। ওই দুই গাড়িযোগে প্রায় ৪০ জন অস্ত্রধারী থানচি বাজারে যায়। ডাকাতি শেষে তারা দুটির পাশাপাশি বাজার থেকে আরও একটি গাড়ি নিয়ে তংকং পাড়ায় পৌঁছায়। যাওয়ার পথে ছান্দাকপাড়ার সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়ে তারা। দুই চালক দাবি করেছেন, তাঁদের কোনো গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি।

 

বান্দরবানের দুই উপজেলা রুমা ও থানচিতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা করে  অস্ত্রধারীরা। রুমায় তারা অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে এবং থানচিতে বাজারে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ইউনিফর্ম (নির্দিষ্ট পোশাক) পরে এসেছিল। তাতে কেএনএফ লেখা ছিল। থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতি করার পর তারা ফাঁকা গুলি করতে করতে বেরিয়ে যায়।

বান্দরবান থেকে সড়কপথে থানচির দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। সেখানে সাপ্তাহিক হাটবার ছিল । সকালে বাজারে লোকজন বেশি ছিল। দুপুর হতে হতে ভিড় কমে যায়। হামলা হয় বেলা একটার দিকে। সেখানে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের শাখা দুটির অবস্থান পাশাপাশি। কাছেই থানচি থানা। উপজেলা পরিষদও বাজারের কাছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীরা আসে চার চাকার মোটরগাড়ি যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত দুটি চাঁদের গাড়িতে। সংখ্যায় ছিল ৪০ জনের মতো। ব্যাংকের ভেতরে চার থেকে আটজন ঢুকলেও বাকিরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে।গ্রাহকদের মুঠোফোনও কেড়ে নেয় তারা।

থানচি কৃষি ব্যাংকের শাখায় চার থেকে পাঁচজন অস্ত্রধারী ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। বাইরে আরও সাত–আটজন অবস্থান করছিল। অল্প সময়ের মধ্যে অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের টাকা লুট করে বেরিয়ে যায়। অস্ত্রধারীদের ঢুকার সময় নিরাপত্তা প্রহরী অং সা প্রুবাধা দেন এবং প্রথমে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হন। কিন্তু অস্ত্রধারীরা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

 

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায়  অস্ত্রধারী পাঁচ থেকে সাতজন লোক ব্যাংকে ঢোকে। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা টাকা তারা নিয়ে যায়। ব্যাংকের বাইরেও অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন ছিল। পরে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে চলে যায়।বান্দরবান শহর থেকে রুমার দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। রুমা উপজেলা পরিষদের ২০০ গজ দূরে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখা। তার পাশে উপজেলা মসজিদ। আশপাশে সব উঁচু উঁচু পাহাড়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঢোকার মুখে একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় থাকেন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় তলার এক পাশে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা। আরেক পাশে থাকেন ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জন পুলিশ সদস্য।

এর আগে গতকাল বুধবার শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এক জরুরি সভা,কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা বন্ধ ঘোষণা

নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে।

বান্দরবানের নতুন সশস্ত্রগোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। জেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, মুখপাত্র কাঞ্চনজয তঞ্চঙ্গ্যা, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

 

বান্দরবান জেলা পরিষদ সভা কক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংবাদ সম্মেলন। আজ সকাল ১০টায়।

বক্তব্যে বলা হয়, কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের এযাবৎ কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীর বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত সশরীর দুই দফা বৈঠকে  দুটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেছে। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পর তারা রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। একই ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি, লুটপাট, নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না।লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকের টাকা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণসহ কেএনএফের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।