দখলদার ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও একটি বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি এ দাবি করেছেন।
রোববার ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়ার ভাষণে তিনি এ দাবি করেন। খবর এএফপি।
সিরিয়ায় কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর দুই শীর্ষ কমান্ডারসহ ১১ জন নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয় তেহরান। সেই ঘোষণার সূত্র ধরে গতকাল শনিবার রাতে ‘অপারেশন ট্রুথফুল প্রমিজের’ আওতায় ইসরাইলে হামলা চালায় ইরান। পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা সেই হামলায় তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তেহরান।
ইরান বলেছে, দামেস্কে তাদের কনস্যুলেটে হামলার জবাব দিয়েছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং তা সীমিত আকারে। হামলায় ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুড ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছে।
এ হামলাকে সফল বলে আখ্যা দিয়েছেন মোহাম্মদ বাগেরি। তিনি বলেন, গতকাল কোনো বেসামরিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়নি। শুধু সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করা হয়েছে। বিশেষ করে হেরমন পর্বতে ইসরাইলের একটি গোয়েন্দা ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। দামেস্ক কনস্যুলেটে হামলায় ওই ঘাঁটি জড়িত।
তিনি বলেন, নেগেভ মরুভূমিতে ইসরাইলের নেভাতিম বিমানঘাঁটিতেও হামলা হয়েছে। সেখান থেকে ইসরাইলের যুদ্ধবিমানগুলো কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছিল।
ইরানের হামলায় এই দুটি লক্ষ্যবস্তুই ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং সেগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে’ জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, গতকালের হামলার চেয়ে ‘১০ গুণ শক্তিশালী’ হামলা চালাতে সক্ষম তেহরান।
ইরানের এ হামলার জবাবে ইসরাইল ‘অনেক বড় পরিসরে’ হামলা চালাতে পারে বলেও বাগেরি সতর্ক করেছেন। তবে ইসরাইল যদি এ হামলার জবাব না দেয়, তাহলে দেশটিতে আর কোনো হামলার পরিকল্পনা তেহরানের নেই বলে জানান তিনি ।
সিরিয়ার দামেস্কে নিজের কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইসরাইলের মাটিতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। রোববার রাতের এই হামলায় তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। প্রতিশোধমূলক এই হামলায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্যের দাবি করেছে ইরান।
এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেন, যদি কোনো দেশ তাদের আকাশসীমা ইসরাইলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমরা তাদের চূড়ান্ত মোকাবিলা করব। খবর তেহরান টাইমসের।
এদিকে, ইসরাইলের পর জর্ডানে হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান। ইসরাইলকে সহযোগিতা করলে জর্ডান পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি। তেহরান টাইমস বলছে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের একটি সামরিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, জর্ডান গুরুতর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারে এবং ইহুদিবাদী দেশটির সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে তারা (ইরানের) পরবর্তী টার্গেট হতে পারে।
এছাড়া এই সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ইরান। ইরানের জাতিসংঘ মিশন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সকে বলেছে, ‘ইরানের এমন সামরিক পদক্ষেপ দামেস্কো আমাদের কূটনৈতিক প্রাঙ্গণে ইহুদিবাদী শাসকদের আগ্রাসনের পাল্টা জবাব ছিল।’