• ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

usbnews
প্রকাশিত এপ্রিল ২৭, ২০২৪
গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকদিন ধরে চলছে এই বিক্ষোভ। এরই মধ্যে বেশকিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত শিক্ষার্থীকে। তবে কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যকে। অনলাইন বিবিসি বলছে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি এমন হওয়ায় ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। লস অ্যানজেলেসের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমনে ‘নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা জানিয়েছে। দেশটির কয়েক ডজন ক্যাম্পাস থেকে শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মার্কিন প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিবিবি বলছে, বিক্ষোভ বন্ধ করে চলে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম এই বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় বৃহস্পতিবার আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইমোরি পুলিশ বিভাগ বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভের স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রথমে ধাওয়া দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসায়নিকের ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, পুলিশ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের বস্তু ছোড়ার জবাবে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশকে ডাকার পর সেখানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘গণহত্যা  থেকে দূরে সরে যাওয়ার’ এবং গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের সমর্থনে অস্ত্র উৎপাদনে এবং অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোতে বৃহৎ অর্থ বিনিয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ৭ই অক্টোবর গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস ইসরাইলে রকেট হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১১৩৯ ইসরাইলি নিহত হয়। এরপরই গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরাইল। তারা হামাসকে নির্মূল করার নামে পুরো গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। হত্যা করেছে কমপক্ষে ৩৪ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। সহজে বলতে গেলে, গাজা এক জীবন্ত কবরস্তানের মতো রূপ ধারণ করেছে। সেখানে নানারকম অবরোধ দিয়ে মানুষের অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তুলেছে ইসরাইল। মানুষ খাবার, পানি, চিকিৎসা কোনো কিছুই পাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার সেখানে মহামারি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে সতর্কতা দিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ বার বার বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। ফলে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিশ্ববাসী। কিন্তু ইসরাইলের কর্ণকুহরে সে দাবির কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইল গণহত্যা পরিচালনা করছে অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও ইসরাইল এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’- হিসেবে দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইসরাইলে অর্থায়নের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট  জো বাইডেন ও তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, তারা যা করছে তা সম্পূর্ণরূপে এই গণহত্যার জন্য দায়ী। তারা যে ধরনের সুপরিচিত ভূমিকা পালন করছে, আমরা সেই বিষয়ে অবগত।