রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের এখনও তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক আদালত। যুক্তরাষ্ট্র ওই নিপীড়নকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর যারা রাখাইনে রয়ে যায় তারা জান্তার নিপীড়নের মুখে পড়েছে। এখন এই রোহিঙ্গারা নতুন এক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পরিবর্তনে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি হচ্ছে আরাকান আর্মি। ইতোমধ্যে রাখাইন রাজ্যের বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। সম্প্রতি রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তারা সফলতা পেয়েছে, এসব অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের আবাস। সম্প্রতি মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করছে আরাকান আর্মি। এমনকি তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করছে বিদ্রোহীরা। অনেক ক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। অবশ্য আরাকান আর্মি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
রোহিঙ্গারা সর্বপ্রথম জুলুমের শিকার হয় ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে। বার্মার খ্রিস্টান রাজা সে সময় আরাকান দখল করে নেন। এরপর রোহিঙ্গারা বড় ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় ১৯৪২ সালে, যখন জাপান বার্মা দখল করে নেয়। এসব নির্যাতনের সব মাত্রা ছাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু হয় ১৯৬২ সালে, সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর থেকে।
নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ফলে। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর বাতিল হয়ে যায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব। তখন থেকে মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারও অচল হয়ে পড়ে।১৯৪২ সালে জাপান বার্মা দখল করার পর স্থানীয় মগরা জাপানি সৈন্যদের সহায়তা নিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এই জাতিগত উত্তেজনা মিয়ানমারের জটিল জাতিগত চরিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি হাজির করছে। আরাকান নামে পরিচিত রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জাতিগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। তারা প্রায় সময় রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আসা অবৈধ অভিবাসী ও দুষ্কৃতকারী হিসেবে মনে করে।
প্রায় ১৫ বছর আগে গঠিত আরাকান আর্মি দাবি করে, তাদের বাহিনীতে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে এবং বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে আসছে। দেশটির বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তারা। সামরিক সরকারকে উৎখাত করে চায় এমন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তারা যোগ দিয়েছে। ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল সেনাবাহিনী। সম্প্রতি সশস্ত্র বিদ্রোহী ও গণতন্ত্রপন্থি শক্তির পক্ষ থেকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জান্তা।
আরাকান আর্মির হাতে রোহিঙ্গাদের নিপীড়িত হওয়ার সাম্প্রতিক খবর নতুন করে নৃশংসতা আশঙ্কা তৈরি করছে। জান্তা দুর্বল হলেও রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।
বুথিডাংয়ে বসবাস করা ৪২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা আং হতায় বলেছেন, আরাকান আর্মির যোদ্ধারা আমাদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছে। আমাদের শহরে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে এবং ঝুঁকি রয়েছে। আমরা চলে যাব কি যাব না সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বেই আমাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
টেলিফোনে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এসব কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হচ্ছে তা জানেন না তিনি।
শহরটির আশেপাশে বসবাস করা অপর ৯জন বাসিন্দা বলেছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অনেক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাসিন্দাদের চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কারা এই সহিংসতা চালাচ্ছে তা এখনও অস্পষ্ট, তবে আরাকান আর্মির জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া গবেষক শায়না বাউখনার বলেছেন, আমরা একাধিক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তারা বলেছেন যে, যখন ১৭ মে বিস্তৃত অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তখন বুথিডাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের হাতে।
জাতিসংঘও বলেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে-সব এলাকা থেকে পিছু হটেছে সে সব স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সংঘাতের কারণে হাজার হাজার রাখাইনজুড়ে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। কিছু মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে আগে থেকেই দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অতীতে রাখাইন জনগোষ্ঠীর মানুষদের নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছিল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির এক প্রতিনিধি এমন অপরাধের কথা অস্বীকার করেছেন।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা বলেছেন, আমরা বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়াতে জড়িত নই। তিনি এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য মিয়ানমার জান্তাকে দায়ী করেছেন। এই বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বেসামরিকদের জোর করে বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন আরাকান আর্মির মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, আমরা কখনও কাউকে সরে যেতে বলিনি। কিন্তু যুদ্ধের এলাকা নিরাপদ নয় উল্লেখ করে হয়ত চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারি।
তবে গোষ্ঠীটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতে এমন আন্তরিকতার প্রকাশ কম। আরাকান আর্মির কমান্ডার তয়ান ম্রাত নাইং রোহিঙ্গাদের ‘বন্ধু’ ও ‘নাগরিক’ বললেও তিনি তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাঙালি বলার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী এবং মিয়ানমারে তাদের কোনও অধিকার নেই বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
এক্স-এ এক পোস্টে তিনি রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে পৃথক ইসলামি নিরাপদ অঞ্চল গড়তে চাওয়ার অভিযোগ করেছেন। যদিও অ্যাক্টিভিস্টরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রোহিঙ্গাদের জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিচ্ছে মিয়ানমার জান্তা এবং তাদের রাখাইনের গ্রামগুলোতে বিদ্রোহী বিরোধী অভিযানে পাঠানো হচ্ছে, এমন খবর যখন প্রকাশ হচ্ছে তখন আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, ফেব্রুয়ারির পর থেকে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে জোর করে বাহিনীতে নেওয়া হয়েছে।
নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার সতর্ক করে বলেছেন, আরও নৃশংসতার তীব্র ঝুঁকি রয়েছে।
সেনাবাহিনীর ফাঁদে পা না দিতে আরাকান আর্মির নেতৃত্বের প্রতি এক যৌথ বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা অভিযোগ করেছেন, দুই সম্প্রদায়কে একে অন্যের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে সুবিধা নিতে চাইছে জান্তা।
বুথিডাং থেকে নির্বাচিত সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইউ অং থাউং সোয়ে বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখনও জাতিগত ও ধর্মীয় সংকট তৈরি করতে চাইছে। যখন তারা পরাজিত হওয়ার মুখে থাকে তখন এমন সংঘাত সৃষ্টি করে। আমাদের সতর্ক হতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, তার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কে দায়ী তা তিনি জানেন না।
এখন রোহিঙ্গাদের এমন একটি সংঘাতে কোনও একটি পক্ষকে বেছে নিতে হচ্ছে যাদের কোনও পক্ষই তাদের অধিকারকে সমর্থন করে না। নিজেদের সশস্ত্র গোষ্ঠীও তাদের সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শিবিরে জোর করে তরুণদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
মিয়ানমারের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী থিনজার শুনলেই ইয়ি বলেছেন, সরেজমিনে পরিস্থিতি হয়ত জটিল হতে পারে। কিন্তু একটি বিষয় একেবারে সহজ: রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র হলোকস্ট মেমোরিয়াল যাদুঘরে অনুষ্ঠিত “বার্মার গণহত্যার নীলনকশা” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেন, “আমি নিশ্চিত বার্মার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধ করেছে।”
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ ছিল বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরুদ্ধ অপরাধ হিসেবে গণ্য করার উপযুক্ত।”
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তথ্যসূত্রের ভেতর ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত সিমন স্কিজট সেন্টার ও মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস প্রকাশিত যৌথ তদন্ত প্রতিবেদনকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৬ সালে মিয়ানমারের সহিংসতায় দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে বসবাসকারী এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাদের ওপর জরিপের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
“চারভাগের তিনভাগ রোহিঙ্গা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁরা সেনাসদস্যদের কাউকে না কাউকে হত্যা করতে দেখেছেন। অর্ধেকের বেশি সাক্ষাৎকারদাতা জানিয়েছেন তাঁরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন,” বলেন ব্লিনকেন।
“এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,” উল্লেখ করে তিনি বলেন এই ঘটনাগুলো “জাতিগত নিধন থেকেও অধিক” ও “রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন” করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত।
জাতিসংঘ তদন্ত কর্মকর্তারা ২০১৮ সালে জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী “গণহত্যার উদ্দেশ্যে” মুসলিম রোহিঙ্গাদের ব্যাপক হারে হত্যা এবং রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করেছে।
বেসরকারি সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’র হিসাবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ছয় হাজার ৭০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণার আগ পর্যন্ত মার্কিন সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধন’ সংগঠিত হয়েছে বলে মতামত দিলেও আন্তর্জাতিক আইনে চরম মাত্রার অপরাধ হিসাবে গণ্য ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে দেশটি বিরত থাকে।
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত গণহত্যা সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং এর বিচার সংক্রান্ত আইন “ইউনাইটেড নেশান্স কনভেনশন অন দি প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব জেনোসাইড” অনুযায়ী গণহত্যার অর্থ হলো কোনো জাতি, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অথবা ধর্মীয় মানুষকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত অপরাধ।
শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রেহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যা করছে তা সভ্যতা-ভব্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, তারা এখন দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা, জুলুম-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বমানবতাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার মেনে নিতেও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মিয়ানমার তো পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। তাদের যা খুশি তা করার অধিকার নেই। মিয়ানমারে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তার দায় রোহিঙ্গাদের ওপর চাপানো মোটেও সমীচীন নয়।
ইতিহাসে এটি ১৯৪২ সালের গণহত্যা নামে খ্যাত। তখন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করা হয় স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৪৭ সালের শাসনতান্ত্রিক নির্বাচনে ইংরেজদের দেওয়া ‘সন্দেহভাজন নাগরিক’ অভিধার কারণে মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। উ ন নামক শাসক আরাকান থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালে মগ সেনাদের নিয়ে Burma Territorial Force গঠন করে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বুদ্ধিজীবী, গ্রামপ্রধান, আলেম-ওলামা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, আর সেখানে মগদের জন্য বসতি নির্মাণ করা হয়।সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৯০ এবং ২০১২ সালে রোহিঙ্গা উচ্ছেদে বর্বরতম অভিযান পরিচালনা করে বার্মার সামরিক জান্তা। শতাব্দীকাল ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলা নির্মম নির্যাতনের বিষয়টি এখন গোটা বিশ্বের সামনে পরিষ্কার। এটাও স্পষ্ট যে শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই তাদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে।