ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে একটি বাদে সবগুলোর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) মধ্যরাতে দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে ২৪০টিতে জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধীদল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স–এনডিএ জোটের মোট আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৬টি। অপর দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মোট আসনসংখ্যা হয়েছে ২০২টি।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে , অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, ডিএমকে ২২টি, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) নয়টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) সাতটি ও শিবসেনা (এসএইচএস) সাতটি আসনে জয় পেয়েছে।
লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৭২ আসন। সে ক্ষেত্রে বিজেপি তার জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে। তবে জোটসঙ্গীদের মধ্যে বেশি আসন পাওয়া দলগুলো বিরোধী শিবিরে গেলে চিত্র ভিন্ন হতে পারে।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের প্রধান অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি ১৬টি এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। এই দুই দল ছাড়া আরও একাধিক এনডিএ শরিকের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে।
পাঁচটি আসন পেয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস)। চারটি করে আসনে জয় পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)- সিপিআই (এম), ওয়াইএসআরসিপি ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। আম আদমি পার্টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল) তিনটি করে আসন পেয়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট–লেনিনিস্ট) (লিবারেশন)–সিপিআই (এমএল) (এল), জনতা দল-জেডি (এস), জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন), রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি), জনসেনা পার্টি (জেএনপি) ও ভিসিকে দুটি করে আসনে জয় পেয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি দল একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতজন।
এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। সেবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। এবার বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে ক্ষেত্রে এনডিএ জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে।
সরকার গঠন চেষ্টায় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট
ভারতে নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লক। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি। তারা চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বর্তমানে এই দুটি দলই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ। কিন্তু তারা এর আগে কংগ্রেসের মিত্র ছিল। এ নিয়ে বুধবার মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইন্ডিয়া জোটের মিটিং আহ্বান করা হয়েছে এদিন। ইন্ডিয়া জোটের এই বিবৃতি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। কারণ, এনডিএ এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে মাত্র ৬০ আসনের ব্যবধান। ২৯২ এবং ২৩২ যথাক্রমে।
কাজে এল না রামমন্দিরের প্রচার, যোগীর রাজ্যে এ বার ‘মোদী ঝড়’ রুখে দিল অখিলেশ-রাহুলের জুটি। হিন্দুত্বের আবেগ উসকে দিতে বিজেপির মূল অস্ত্র ছিল, নব্বইয়ের দশকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া বাবরি মসজিদের জমিতে গড়ে তোলা রামমন্দির।
হিন্দুত্বের আবেগ উসকে দিতে ২২ জানুয়ারি মোদি রামমন্দির উদ্বোধনের ছবি তুলে ধরেছিল বিজেপি। সঙ্গে ছিল বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমিতে মন্দির ‘প্রতিষ্ঠা’র প্রতিশ্রুতি। অযোধ্যার মতোই ওই দুই জমি বিতর্কও এখন আদালতে বিচারাধীন।
তবে এসব খুব বেশি কাজে দেয়নি। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭টিতে জিতে একক বৃহত্তম দল হয়েছে সমাজবাদী পার্টি এসপি। সহযোগী কংগ্রেস জিতেছে ছ’টিতে। অন্য দিকে, যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল জিতেছে ৩৩টি লোকসভা।
এ বারের লোকসভা ভোটে দেশের বৃহত্তম অঙ্গরাজ্যে (জনসংখ্যার নিরিখে) হিন্দুত্বের আবেগ উস্কে দিতে বিজেপির মূল অস্ত্র ছিল, নব্বইয়ের দশকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া বাবরি মসজিদের জমিতে গড়ে তোলা রামমন্দির। ভোটের ফল বলছে রামমন্দিরের রাজ্যেই ‘মোদী ঝড়’ রুখে দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রধান অখিলেশ যাদব এবং তাঁর সহযোগী কংগ্রেস।
নৈতিক হারের দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত মোদি-শাহের : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
৪০০ পার দূরের কথা, আড়াইশোও ছুঁল না বিজেপি। ৩০০-র আগেই থামল এনডিএ জোট। ‘এটা ইন্ডিয়া জোটের জয়, দেশের মা-বোনেদের জয়। নৈতিক হারের দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত মোদি-শাহের। ক্ষমতায় না থাকলে এইটুকু আসনও পেত না বিজেপি। অবিলম্বে সব রাজ্যকে তার বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়া হোক’, বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তথ্যমতে,উত্তর ভারতের পাঞ্জাবের ফরিদকোট লোকসভা আসনে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারী বিয়ন্ত সিংয়ের ছেলে সরবজিৎ সিং জয় পেয়েছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারী বিয়ন্ত সিংয়ের ছেলে সরবজিৎ সিং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাঞ্জাবের ফরিদকোটে লোকসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।এই আসনে সরবজিৎ সিংয়ের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আম আদমি পার্টির (এএপি) করমজিৎ সিং অনমোল।ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সরবজিৎ সিং প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এএপি পার্টির প্রার্থীকে হারিয়েছেন।
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধী নিজ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। সেই দেহরক্ষীদের একজন ছিলেন বিয়ন্ত সিং। এ ঘটনার প্রায় চার দশক পর পাঞ্জাবের রাজনীতিতে নামেন বিয়ন্ত সিংয়ের ছেলে সরবজিৎ সিং।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে , এই নির্বাচনে কারাগারে থেকেই জয়ী হয়েছেন দেশটির পাঞ্জাব রাজ্যের স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিং। প্রায় দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি জিতেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অমৃতপাল পেয়েছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৪৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল কংগ্রেসের কুলবির সিং জিরা পেয়েছেন ২ লাখ ৭ হাজার ৩১০ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২০।২০২৩ সালের এপ্রিলে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় গ্রেফতার হন অমৃতপাল। এর আগে এক সহযোগীর মুক্তির দাবিতে তিনি ও তার সমর্থকেরা একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালান।
কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী রশিদের জয় যেমন করে হলো , এককালে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন আবদুল রশিদ শেখ। পরে উপত্যকার ‘বিচ্ছিন্নতাবাদের’ সাথে পুরো মাত্রায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকী ‘সন্ত্রাসবাদকে’ অর্থ জোগানের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলবন্দী এই নেতা। জেল থেকেই এবার নির্বাচনে লড়েন রশিদ। পুরো লোকসভা নির্বাচনে এবার তার হয়ে প্রচার করেছিলেন রশিদের দুই ছেলে।অবশ্য কাশ্মিরের রাজনীতিতে রশিদের আগমন এই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন রশিদ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি। এবার স্বতন্ত্র হিসেবে বারামুল্লা থেকে জয়ী হয়ে কাশ্মিরের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য ফেলে দিলেন হুরিয়াত নেতার সাবেক এই সঙ্গী।
২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদি কেজরিওয়ালকে হারিয়েছিলেন প্রায় ৪ লাখ ভোটের ব্যবধানে।
টানা তৃতীয়বারের মতো উত্তর প্রদেশের বারণসি থেকে লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সপ্তাহ ভোট শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, মোদি বারাণসিতে ৬ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় রায় (কংগ্রেস) পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৭ ভোট। অর্থাৎ মোদি মাত্র ১ লাখ ৫২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
মোদি বারণসির এই আসনে মোট ভোটের ৫৪ দশমিক ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় রায় পেয়েছেন ৪০ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট।
নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেলেও ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় তার ভোটের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী দলের সালিনী জাদবকে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৫ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। সেবার মোদি ভোট পেয়েছিলেন ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৪টি। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সালিনী পেয়েছিলেন মাত্র ১ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৯ ভোট।