• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

প্লাস্টিকের দূষণ দূর করবে এনজাইম

usbnews
প্রকাশিত জুন ২৫, ২০২৪
প্লাস্টিকের দূষণ দূর করবে এনজাইম
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে প্রকট হয়ে উঠছে। প্লাস্টিকের বিকল্প ও পুনর্ব্যবহারের কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না। জার্মান বিজ্ঞানীরা এবার নতুন উপায়ে প্লাস্টিক ধ্বংসের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে তার জন্য ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন।

প্লাস্টিকের সমাস্যার সমাধান করতে ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকারের টিম জৈব প্রযুক্তি কাজে লাগাতে চায়। সেই প্রচেষ্টার ব্যাখ্যা দিয়ে সনেনডেকার বলেন, ‘‘প্রকৃতির কাজ পর্যবেক্ষণ করে আমরা সেটা নকল করার চেষ্টা করছি। পলিমার ভেঙে দিতে প্রকৃতি এনজাইম ব্যবহার করে। আমরাও এখন ঠিক সেটাই করছি।’

লাইপসিশ শহরের দক্ষিণের কবরস্তানে ক্রিস্টিয়ান ও তার এক সহকর্মী সেই এনজাইম খুঁজে পেয়েছেন। কম্পোস্টের মধ্যে সেটা পাওয়া গেছে। সেই এনজাইম আসলে গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পাতার পচন ঘটায়। সনেনডেকার বলেন, ‘এমন এক পাতার উপরে মোমের এক স্তর রয়েছে, যাকে কাটিন লেয়ার বলা হয়। সেটা এক ধরনের পলিয়েস্টর। এটা একটা পলিমার, যার কাঠামো ঠিক পিইটি প্লাস্টিকের মতো এস্টার বন্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। অনেক জৈব প্লাস্টিকের মধ্যেও এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই সব এনজাইম এতটাই অনির্দিষ্ট, যে সেটি পলিয়েস্টার স্পেকট্রামের এক বিস্তির্ণ রেঞ্জ শনাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। সেটা আমাদের সুবিধা এবং সৌভাগ্যও বটে। কারণ আমাদের প্লাস্টিকের সমস্যার জৈব জবাব পাওয়া গেছে।

সেই এনজাইম কত দ্রুত প্লাস্টিক ভাঙতে পারে, ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকার হাতেনাতে তা করে দেখাচ্ছেন। ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এনজাইম মাত্র এক দিনেই পিইটি মোড়ক পুরোপুরি ভেঙে দিতে পারে। তখন শুধু মৌলিক উপাদানগুলি পড়ে থাকে। গবেষকরা সেই এনজাইম পেয়ে খুব খুশি। ক্রিস্টিয়ান সনেনডেকার জানান, ‘আমরা সেটার নাম রেখেছি পিএইচএল সেভেন। অর্থাৎ পলিয়েস্টার-হাইড্রোলেজ-লাইপসিশ। এটা আমাদের পাওয়া নয়টির মধ্যে সাত নম্বর এনজাইম। সেটা ছিল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন এনজাইম।’

এনজাইম-টি দৃশ্যমান করে তুলতে সেটির থ্রিডি প্রতিরূপ প্রিন্ট করা হয়েছে। ফলে সেটির ক্রিয়া বোঝানো সহজ হয়েছে। সনেনডেকার বলেন, ‘এই হলো সেই এনজাইম। পিইটি শৃঙ্খলের প্রতিটি এস্টার বন্ড দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ পূর্বনির্ধারিত ব্রেকিং পয়েন্ট। এবার এনজাইম এসে এক একটি এস্টার বন্ড চিবিয়ে খাচ্ছে। প্রক্রিয়ার শেষে টেরেফথালিক অ্যাসিড এবং ইথিলিন গ্লাইকলের মতো মৌলিক উপাদান অবশিষ্ট থাকে। সে সব দিয়ে নতুন করে প্লাস্টিক তৈরি করা যায়।’

সনেনডেকারের টিম এবার আরো এক ধাপ এগোচ্ছে। তারা এনজাইমের ডিএনএ এমনভাবে পরিবর্তন করতে চান, যাতে সেটি আরো দ্রুত প্লাস্টিক খেয়ে নিতে পারে। সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পরিবর্তিত এনজাইম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি আলাদা করে বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে দক্ষ এনজাইম বেছে নিতে চান তারা।

প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই কাজে সহায়ক হচ্ছে। বায়োটেকনোলজিস্ট রনি ফ্রাংকের সঙ্গে মিলে গবেষকরা সেই কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা বড় আকারে আমাদের প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের নতুন প্রোটোটাইপ তৈরি করেছি, যার সাহায্যে প্রায় ১০০টি এনজাইমের নমুনা বিশ্লেষণ করতে পারি। একই সঙ্গে উপরের স্তরগুলি পরিমাপ করতে পারি। সেই প্রয়োজনীয় তথ্য এআই-কে জোগান দিয়ে আমরা প্রশিক্ষণও দিতে পারি। এভাবে আরো নতুন ও উন্নত এনজাইম খুঁজে বার করে আমরা প্লাস্টিক ভেঙে দিতে পারি।’