রাফা এখন এক অচেনা অঞ্চল। ইসরাইলের তীব্র হামলায় গাজার সর্বদক্ষিণের এই শহরকে এখন আর চেনা যাচ্ছে না। অনলাইন সিএনএনে একথা লিখেছেন সাংবাদিক জেরেমি ডায়মন্ড। প্রথমবারের মতো গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরাইল। তার অংশ হিসেবে গাজা ঘুরে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন সিএনএনের ওই সাংবাদিক। তিনি লিখেছেন, রাফায় আমাদের হামভি গাড়িবহর ঘন ময়লা আবর্জনা আর ধুলোয় পরিপূর্ণ বাতাসের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। দু’মাস আগে ইসরাইলি সেনারা রাফায় স্থল হামলা শুরু করে। আস্তে আস্তে বাতাস থেকে আবর্জনা থিতিয়ে আসার পর ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা বিস্ময়করভাবে ফুটে ওঠে। তাদের গাড়িবহর রাফার যে অংশ দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল সেখানে স্থল হামলা শুরুর আগে অবস্থান নিয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ লাখ ফিলিস্তিনি। সেই কথা বলে জেরেমি ডায়মন্ড জানিয়েছেন, এই শহরকে এখন আর চেনা যায় না।
ইসরাইল বারবার বলেছে রাফায় তাদের স্থল অভিযান ‘সীমিত’। কিন্তু রাফার এই দক্ষিণাঞ্চলের ধ্বংসযজ্ঞ সব জায়গায় একেবারে একরকম। গাজার উত্তরে, মধ্যাঞ্চল এবং খান ইউনুসে এই একই রকম চিত্র। অনেক বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অসংখ্য ভবন বোমা হামলার পর কংকালের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
‘সীমিত’ অপারেশনে কিভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ এ নিয়ে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ডানিয়েল হাগারিকে চাপ দেন সাংবাদিক জেরেমি। জবাবে তিনি বলেন, এখানেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারণ, এখানে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। টানেল বানিয়ে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, যখন আপনি ধ্বংসযজ্ঞ দেখছেন, এর কারণ হলো এখানে বুবি ট্রাপ পাতা হয়েছিল। যখন আমরা কোনো টানেলকে উড়িয়ে দিয়েছি, তাতে বাড়িঘর ধসে পড়েছে। আবার হামাসও তাদের বাড়িঘর থেকে গুলি করেছে। এতে আমাদের বাহিনী ঝুঁকিতে পড়ে। ফলে আমাদের বাহিনীর সদস্যদের রক্ষা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না হাতে। তিনি বলেন, রাফার অন্য এলাকাগুলো এতটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। কিন্তু সিএনএন ডানিয়েল হাগারির এই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি। কারণ, স্বাধীনভাবে গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরাইল। তারা শুধু ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে গাজায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন।
তারা সাংবাদিকদের নিয়ে গিয়েছে শুধু রাফার একটি অংশে। সাংবাদিক জেরেমি লিখেছেন, ইসরাইলি সেনারা আমাদেরকে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ দেখাতে নিয়ে যায়নি, তারা কেন স্থল হামলা চালিয়েছে সেটা বোঝাতে কথা বলার জন্য নিয়েছে। আমরা রাফায় পৌঁছার আগে গাজা-মিশর সীমান্ত বরাবর ড্রাইভ করি। এটি ফিলাডেলফিয়া করিডোর নামে পরিচিত। এ এলাকা ইসরাইলি বাহিনীর দখলে রয়েছে। তাদের দাবি, এখানে ডজন ডজন টানেল আছে। এসব স্থান থেকে ইসরাইলে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় হাগারি আমাদেরকে একটি টানেল দেখান, যা মাটির নিচে প্রায় ৯০ ফুট গভীরে গিয়েছে। ইসরাইলি সেনাদের দাবি ফিলাডেলফিয়া করিডোর দিয়ে হামাস মিশর থেকে অস্ত্র পাচার করে আনে। তারপর তা গাজার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। হাগারির দাবি এসব টানেলের অনেকটা চলে গেছে মিশরের দিকে। তবে তা কার্যকর আছে কিনা অথবা তা ব্যবহার করে গাজায় অস্ত্র নেয়া হয় কিনা সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ওদিকে গাজা থেকে কোনো টানেল মিশরে যাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে কায়রো।