চলছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন। এই আন্দোলনে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মৃত্যুবরণ করেছেন ছয়জন তরুণ। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন। এক দফা এক দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের রেশ ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বুধবারেও (১৭ জুলাই) ঘটেছে একই ঘটনা। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব সবাই। দিচ্ছেন পোস্ট।ফেসবুকের টাইমলাইন ভরে উঠেছে নানা প্রতিবাদের ভাষায়। সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ফারুকী নিজের ফেসবুকে আজ বুধবার (১৭ জুলাই) লিখেছেন, আপনারা যারা ভাবছেন আন্দোলনটা স্রেফ একটা চাকরির জন্য, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। আপনারা এর সবগুলো শ্লোগান খেয়াল করেন। দেখবেন এই আন্দোলন নাগরিকের সম মর্যাদার জন্য। এই আন্দোলন নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে না বাঁচার জন্য।
এরপর তিনি লিখেছেন, এই আন্দোলন রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, দেশের মালিক তারা না। আসল মালিক জনগণ। সেই জনগণকে রাষ্ট্র যে পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলন সেটার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা। রাষ্ট্র জনগণকে কেন পাত্তা দেয় না এই আন্দোলনকারীরা সেটাও বোঝে। যে কারণে ভোটের বিষয়টাও শ্লোগান আকারে শুনেছি। আমি এটাকে এইভাবেই পাঠ করছি।
এই নির্মাতা আরও লিখেছেন, পাবলিক সারভেন্ট শব্দটি বেশ ভালো। নির্বাচিত প্রতিনিধি বা যে কোনো সরকারি বেতনভুক্ত ব্যাক্তিকে এই শব্দেই ডাকা উচিত সবসময়। এই আন্দোলন সেই পাবলিক সারভেন্টদের মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আপনি আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
সবশেষে ফারুকী লেখেন, অল পাওয়ার টু দ্য পিপল। অল পাওয়ার টু দ্য ইয়ুথ। প্রেয়ারস ফর মাই ফেলো সিটিজেনস। শহীদের রক্ত কখনও বিফলে যায় না।
চিত্রনায়িকা পরীমণি তার ফেসবুক হ্যান্ডেলে এক ছাত্রীর উপর হামলার ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক। অভিনেত্রী রুনা খান, হামলার শিকার ভীত এক ছাত্রীর ছবি প্রকাশ করে হৃদয়ভাঙা ইমোজি দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
নির্মাতা ও অভিনেতা সুমন আনায়ারও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, দেশটা তাহলে শুধুই আপনাদের, আমরা ধৈঞ্চা? আসলে যেখানে দায়িত্ব শব্দটা ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে নাগরিক ধৈঞ্চা!
অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক লিখেছেন, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর, আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী, বসুধারে রাখে নাই খ- ক্ষুদ্র।
নির্মাতা আশফাক নিপুণ স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। কমেন্টে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার একটি ভিডিও লিংক শেয়ার করেছেন তিনি।
অভিনেতা সালমান মুক্তাদির হামলায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, এমন কোনো ছাত্র আছেন, যিনি হামলার শিকার হয়েছেন বা হলে ঢুকতে পারছেন না? আমি আপনাদের দায়িত্ব নিব। যদি তোমাদের কোনো বন্ধু আমার বন্ধু তালিকায় থাকে, তাহলে তাদের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো। তোমাদের কোনো থাকার জায়গা প্রয়োজন হয় বা চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়, আমি আছি।
চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত লিখেছেন, আপনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, কিন্তু উচ্চ কন্ঠে অন্যায়কে অন্যায় এবং ন্যায়কে ন্যায় বলার সাহস নেই তাহলে আপনি একটা আবর্জনা। রাজাকার।
আজ বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে শাকিব খান নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, আমার প্রাণের বাংলাদেশ এভাবে রক্তাক্ত হতে পারে না। কারো মা-বাবার বুক এভাবে খালি হতে পারে না।
তিনি আরও লেখেন, আপনারা যারা অভিভাবক পর্যায়ে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ রইলো, এখনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এই সংকটের যৌক্তিক সমাধান বের করুন। সব ধরণের সংঘাতের সমাপ্তি চাই।
বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যার পরে ছোট পর্দার অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ফেসবুকে লেখেন, ‘সংঘাত রক্তপাতে কোনো সমাধান আসে না। শিক্ষার্থীদের কথাগুলো শুনে তাদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তিতর্ক দিয়ে কি সমাধান হয় না? আমাদের কি কথা বলার মতো কারো মুখ নেই? কথা শোনার মতো কান নেই। ’
তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত করা হচ্ছে তারা আমাদেরই কারো না কারো সন্তান, ভাই, বোন, বন্ধু, সহপাঠী। আমার করজোড়ে অনুরোধ, দয়া করে সব প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসুন, সব ভুল- বোঝাবুঝির অবসান ঘটুক অতিদ্রুতই। আর রক্ত দেখতে চাই না, আর কারো প্রাণ যাক চাই না। চাই না আর কোনো মা-বাবার কোল খালি হোক। সংঘাত চাই না। সমাধান উপহার দিন৷ ভালোলেন্স ইজ নেভার দি অ্যানসার। ’
বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আফরান নিশো। সেখানে দেশের একটি কবিতা শেয়ার করেছেন তিনি। নিশোর পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো—
আমার সোনার বাংলা
আমাদের প্রাণ
লাল সবুজের পতাকা
সবুজের মাঝে লাল…
বাবা মুক্তিযোদ্ধা
চেতনা-
লড়বো যদি যাক প্রাণ
লাল সবুজের পতাকা
তাদেরই প্রতিদান
তাদের আত্মত্যাগের ঘ্রাণ
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেই পোস্টে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিনেতা লিখেছেন, পেশাগত কাজে প্রায় বিশ দিন আমেরিকা থাকার পর গতকাল রাতে ঢাকায় ফিরেছি। সেখানে বসে এই কয়দিন নিউজগুলো দেখে হতবাক হয়েছি… হয়েছি শোকাহত!
এই অভিনেতা প্রশ্ন রাখেন, সমাধানের অন্য কোনো পথ কি খোলা ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? বুকের রক্ত না ঝরিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করা যেত না? কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, যা ঘটে গেল, এটা যেমন মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়, বিষয়টা তেমনি হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক এবং সভ্যতা বহির্ভূত।
সন্তানের বেদনায় মায়ের আর্তনাদ কাঁদাচ্ছে অভিনেতাকে। রাজনীতির নামে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চঞ্চল চৌধুরী শেষে আরও লিখেন, আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ এবং অভিভাবক হিসেবে রাজনীতির এত এত কঠিন কৌশল বুঝি না! শুধু একটা প্রশ্ন বুঝি, তরুণ তাজা যে প্রাণগুলো অকালে ঝরে গেল, তার দায় কে নেবে? যে মায়ের বুক খালি হলো, তার আর্তনাদ কি কোনো জনমে শেষ হবে? হায়রে দুর্ভাগা দেশ! নোংরা রাজনীতির নামে এই রক্তপাত বন্ধ হোক!
‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, কোটা সংস্কার করে দিন’
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সারা দেশ। এই আন্দোলন নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অভিনেতা নিলয় আলমগীরও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নিলয় লেখেন, আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই এক সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্রছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান এবং ভালোবাসা আপনি সবসময় দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এখন হাসির পাত্র। কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে নিলয় আলমগীর লেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে হলেও কোটা সংস্কার মেনে নিন।আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের এই দুরবস্থা সহ্য করার মতো না। পুরো জাতি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।