কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহতদের জন্য ঘোষিত ‘একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক’ কে ‘শহীদদের রক্তের সাথে তামাশা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকেলে মন্ত্রী পরিষদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়। এবং একইসাথে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) চোখ ও মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে তা অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সোমবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার পর, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে লাল বৃত্তের ছবি যুক্ত কিংবা চোখে ও মুখে লাল কাপড় বাঁধা ছবি যুক্ত করে সরকার ঘোষিত শোক পালনের নিরব প্রতিবাদ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সরকারঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) লাল কাপড়ে মুখ-চোখ বেঁধে প্রতিবাদ করবে তারা। পাশাপাশি অনলাইনে প্রচারণা চালাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এ কর্মসূচির কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশব্যাপী সোমবারের কর্মসূচি সফল করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও গণমানুষের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখনো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো মধ্যরাতে বাসাবাড়িতে ব্লক রেইডের মাধ্যমে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
কর্মসূচির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) লাল কাপড় মুখ ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি করার জন্য অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আপনারা কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করুন।’
সরকারের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্রসমাজের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলার ইতিহাসে কোনো আন্দোলন দমন করা যায়নি। অবিলম্বে ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়ে দেশকে স্থিতিশীল করুন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, শহীদদের স্বীকৃতি না দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছে! সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন? যাদের শহীদ হওয়াকে আপনারা স্বীকৃতি দিচ্ছেন না; উল্টো তাদের সহযোদ্ধাদের গুম, ও গণগ্রেপ্তার করছেন! আপনারা যদি সত্যিই শোকগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমেই যারা এই শহীদদের রক্তের জন্য দায়ী তাদের বিচার করুন। শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেককে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনুন। তাহলেই আমরা বুঝব আপনারা আসলেই শোকাগ্রস্ত; শহীদদের রক্তের প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধাবোধ আছে। তার আগে এসব মায়াকান্না দেখাবেন না।
মাসুদ আরো বলেন, আপনারা শহীদদের পরিবারকে হেনস্তা করছেন, তাদের সহযোদ্ধাদের হেনস্তা করছেন, তাদের সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন; আবার আপনারা শহীদদের প্রতি মায়াকান্না দেখাচ্ছেন! আমরা সরকারের এই ঘৃণ্য কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করছি।