• ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ইসরাইলি হামলায় নিহতদের পরিচয় প্রকাশে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

usbnews
প্রকাশিত জুলাই ৩০, ২০২৪
ইসরাইলি হামলায় নিহতদের পরিচয় প্রকাশে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

গাজায় হামলার প্রথম ১৭ দিনে ৩৫০টি পৃথক ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি। নতুন এক পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রথম দিককার নৃশংসতার ঘটনা। সেখানে তারা গাজায় নিহতদের মধ্যে বেসামরিকদের পৃথক করতে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। যদিও ২ হাজার ৯৯৩ জন নিহতের নাম গত ৯ মাসে মোট নিহতের সামান্য একটা অংশ, কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে যুদ্ধের মধ্যেও নিহতদের পরিচয় স্পষ্ট করা সম্ভব। হামাস-ইসরাইল সংঘাতের পর থেকে এ পর্যন্ত তেল আবিবের হামলায় প্রায় ৩৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের পরিচয় বের করতে কাজ করছেন এয়ারওয়ারস নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
সংগঠনটির পরিচালক ইমিলি ট্রিপ বলেছেন, অনেক সামরিক বিশ্লেষকরা আমাদের বলে থাকেন যে যুদ্ধাবস্থায় নিহতদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা জানা অসম্ভব। তবে আমাদের মূল কাজ হচ্ছে আমরা এই কাজটিকে সম্ভব করে দেখাতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের লোকবল সংকটই হয়ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

গত বছরের ৯ অক্টোবর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে নিহত হওয়া ৬৫ ফিলিস্তিনির পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে এয়ারওয়ারস।

প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে নিহত ফিলিস্তিনিদের সবিস্তার পরিচয় শনাক্ত করা বেশ কঠিন ছিল বলে জানিয়েছে সংগঠনটির পরিচালক। বিভিন্ন রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল তদন্তকারীরা। বিশেষ করে নিহতদের আত্মীয়ের ভাষ্য এবং ফেসবুকে বন্ধুদের পোস্টের সূত্র ধরে তারা প্রাথমিকভাবে নাম প্রকাশের কার্যক্রম শুরু করেছিল। এক্ষেত্রে তারা ঘটনাস্থলেও খোঁজখবর নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

৯ অক্টোবর নিহতদের একজন ১৯ বছর বয়সী ইমাদ হামাদ। সে সময় তার বাবা জিয়াদ হামাদ জানিয়েছেন তার ছেলে রুটি কিনতে বাজারে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন। এই নিহতদের তথ্য অনুসন্ধানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের সাহায্য নিয়েছিল এয়ারওয়ারস। ইমাদ হামাদের পিতা এয়ারওয়ারসকে বলেছেন, আমরা আমার ছেলেকে হারিয়েছি, বাড়ি হারিয়েছি শুধু কি শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়াতে? আমার অন্য বাচ্চারা আতঙ্কে, ভয়ে, ঠান্ডায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এরপরও আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা কি দোষ করেছি? আমি আমার সন্তানকে বড় করেছি কি তাকে রুটি কিনতে গিয়ে জীবন দিতে হবে এটা দেখার জন্য?

এখন পর্যন্ত ৩৪৬টি পৃথক ঘটনার তদন্ত করেছে সংগঠনটি। যারমাধ্যমে তারা গাজায় সংঘাত শুরুর প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিহত ব্যক্তিরা কিভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন তা খুঁজে বের করা হয়েছে। এয়ারওয়ারসের পরিচালক ট্রিপ বলেছেন, আমরা জানি কিভাবে এবং কখন প্রতিটি ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। সংগঠনের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা। এতে করে ভবিষ্যতে হত্যাকারীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সহজ হবে বলে মনে করেন ট্রিপ। তিনি বলেছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সংঘাত এবং ন্যায়বিচারের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করা, বিশ্বজুড়ে সামরিক পদক্ষেপের শিকার বেসামরিক নাগরিকদের সেবা করা। সংগঠনটি প্রাথমিক কাজ হিসেবে নিজেদের পদক্ষেপ আরও সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছে।
এয়ারওয়ারসের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে বড় একটি অংশ শিশু। সংঘাতের প্রথম দিকে যে ৩ হাজার সংখ্যা নিয়ে কাজ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১১২৯ জন শিশু যা মোট নিহতের ৩৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। বাকিদের বয়স শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। অক্টোবরের শেষে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে ৭ হাজার নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল সেটিও পর্যবেক্ষণ করেছে এয়ারওয়ার। সেই তালিকার প্রায় ৭৫ শতাংশ যাচাই করে দেখা গেছে নিহতদের মধ্যে ২ হাজার ২৩৬ নারী, পুরুষ এবং শিশুর নিহত হওয়ার তথ্য তারা সংগ্রত করতে পেরেছে। ক্রমান্বয়ে সংগঠনটি গাজায় সকল নিহতদের পরিচয় প্রকাশে কাজ করবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির পরিচালক।