• ২৮শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৮শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড : ‘ইহুদিবাদী গুপ্ত হামলায়’ প্রাণ হারিয়েছেন , বিদেশী অতিথির প্রয়োজনীয় সেবাদানে ব্যর্থ ইরান , প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা হামাসের

usbnews
প্রকাশিত জুলাই ৩১, ২০২৪
ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ড :  ‘ইহুদিবাদী গুপ্ত হামলায়’ প্রাণ হারিয়েছেন , বিদেশী অতিথির প্রয়োজনীয় সেবাদানে ব্যর্থ ইরান , প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা হামাসের
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী  হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলি হামলায় শহীদ হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইরানের রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে ‘ইহুদিবাদী গুপ্ত হামলায়’ প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

এদিকে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (৩১ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। একইসঙ্গে তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত কাজ এবং উত্তেজনার বিপজ্জনক অগ্রগতি বলে বর্ণনা করেছেন বলে ওয়াফা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট করেছে।

ওয়াফা জানিয়েছে, আব্বাস ফিলিস্তিনিদেরকে ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ, ধৈর্যশীল ও অবিচল থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের রাজধানী তেহরানে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম। দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা যে ভবনে অবস্থান করছিলেন তাতে হামলা চালানো হলে হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন।

আইআরজিসির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে গিয়েছিলেন।গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তিনি বেশ কয়েকবার তেহরান সফর করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাস করতেন।

গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গোষ্ঠীটি। বুধবার তার নিহত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ঘোষণা দেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক।

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরান গিয়েছিলেন হানিয়া। সেখানে বুধবার এক হামলায় নিহত হন তিনি এবং তার এক দেহরক্ষী। যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন হানিয়া, সেই বাড়িটি উড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর হামাস পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-আকসা টিভিতে হানিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মুসা আবু মারজুক বলেন, “আমাদের ভাই, নেতা, মুজাহিদ এবং (গাজার) সরকারপ্রধান ইসমাইল হানিয়া ইহুদি জায়নবাদীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। আমরা এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেবো। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”

হামাসের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি সৌদির টেলিভিশন চ্যানেল আর আরাবিয়াকে বলেন, “ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার মাধ্যমে যে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় শত্রুরা, তা কখনও পূরণ হবে না।”

ইসমাইল হানিয়া হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। গত শতকের আশির দশকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত হয় এই হামাস।গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকামী যোদ্ধাদের রুখে দাঁড়াতে উজ্জীবিত করেছিলেন ইসমাইল হানিয়া। একইভাবে তিনি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে গাজায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে হামাস। তার পুরষ্কার হিসেবে হানিয়াকে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু তার কিছু দিন পরেই গাজায় হামাস ও ফাতাহের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হলে হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন আব্বাস। তবে হানিয়া এই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে সে সময় বলেছিলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন থেকে তিনি বা তার সরকার সরবেন না। তারপর থেকেই মূলত গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হামাসের হাতে।

২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান হন হানিয়া। তার পরের বছরই তাকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এই ঘোষণার পর গাজা ছেড়ে কাতারে চলে যান হানিয়া। গত কয়েক বছর সেখানেই বসবাস করছিলেন তিনি। সূত্র : আল আরাবিয়া, রয়টার্স

৭ অক্টোবর থেকে হানিয়ার পরিবারের বহু সদস্য নিহত

হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের আগে, গাজায় অবস্থানরত তার পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করে ইসরায়েল। জুন মাসে গাজার উত্তর শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হন। তখন হামাস নেতা বলেছিলেন, অক্টোবর ৭ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে তার পরিবারের ৬০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছে।

এপ্রিল মাসে, তার তিন পুত্র – হাজেম, আমির এবং মোহাম্মদ – গাজার শাতি শিবিরে একটি গাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন।

হামাসের তথ্য অনুযায়ী, ঐ হামলায় হানিয়ার চারজন নাতি-নাতনি, তিন মেয়ে ও এক ছেলে, নিহত হয়েছিল।

ইসমাইল হানিয়ার ছেলে আবদুল সালাম হানিয়া বলেছেন, তার পিতার হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ শেষ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘আমার পিতা তার দেশপ্রেমের যাত্রায় চারবার হত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। আজ আল্লাহ তাকে সেই শহীদের আকাঙক্ষা কবুল করেছেন যা তিনি সবসময় কামনা করতেন।’

তরুণ হানিয়া বলেন, তিনি (ইসমাইল হানিয়া) জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং সমস্ত ফিলিস্তিনি দলগুলির মধ্যে ঐক্যের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আমরা নিশ্চিত করছি যে, এই হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধকে বন্ধ করতে পারবে না। মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় স্বস্তির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের ঐতিহ্য–বিষয়কমন্ত্রী আমিচে এলিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ব আরেকটু ভালো হবে।’

আজ বুধবার এক এক্স বার্তায় এমন মন্তব্য করেন আমিচে।

ইসরায়েলি এই মন্ত্রী লিখেছেন, ‘এসব সাংঘাতিক মানুষের কোনো ক্ষমা নেই। যে লৌহহস্ত তাঁদের আঘাত করবে, সেটাই শান্তি ও একটু স্বস্তি আনবে। এ ছাড়া যাঁরা শান্তি চান, তাঁদের সঙ্গে আমাদের শান্তিতে বসবাস করার ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে এটি।’

অন্যদিকে হানিয়ার নিহত হওয়ার বিষয়ে এএফপির পক্ষ থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা।