• ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

হানিয়া হত্যাকাণ্ডে ইরানের জনমানসে নানা প্রশ্ন

usbnews
প্রকাশিত আগস্ট ১, ২০২৪
হানিয়া হত্যাকাণ্ডে ইরানের জনমানসে নানা প্রশ্ন
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে কে বা কারা হত্যা করেছে এ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তবে তিনি যে হত্যার স্বীকার হয়েছেন এ বিষয়টি নিশ্চিত। কিন্তু ইরানের মাটিতে একজন মিত্রের এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে দেশটির বিপ্লবী গার্ডের শক্তিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানের সাধারণ জনগণের মনে বিপ্লবী গার্ডের ব্যর্থ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কীভাবে একজন অতিথিকে ইরানের ভিতরেই হত্যার সুযোগ পেল দুর্বৃত্তরা, সে বিষয়ে প্রশ্ন করছেন দেশটির রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। বলা হচ্ছে এতে দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগ বেশ চাপে পড়তে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডেলইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হানিয়াকে হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর এভাবে চোরাগোপ্তা হামলায় কিভাবে এমন একজন উচ্চপদস্থ নেতাকে হত্যা করতে পারে দুর্বৃত্তরা, এখন জনমনে শুধু এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। যেখানে ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপ্লবী গার্ডের মতো চৌকস একটি দল রয়েছে।

এভাবে ইরানের অভ্যন্তরে ঘনিষ্ঠ মিত্রের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিষয়টিতে হতবাক হয়েছে ইরানের জনগণ। হামাস এবং ইরানের দাবি ইসরাইল এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইরানে কী এখনও ইসরাইলি গোয়েন্দা বাহিনীর নেটওয়ার্ক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে? মাত্র কয়েকদিন আগেই ইরানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসমেইল খতিব গর্ব করে বলেছিলেন যে, তারা ইরানে মোসাদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে।

কিন্তু হানিয়া হত্যার মধ্য দিয়ে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তায় দুর্বলতাই যেন প্রকাশ পেল আরেকবার। ইরানের পার্লামেন্টের সদস্য হোসেইন-আলি হাজি ডেলিগানি বলেছেন, ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ডে অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না। ইসরাইলকে প্রতিশ্রুতির চেয়ে কঠোর জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওই নেতা। 

ইরানের সাবেক সংসদ সদস্য আলী মোতাহারী বলেছেন, ইরানিরা প্রশ্ন তুলেছে জায়নবাদীরা কীভাবে তেহরানে তাদের অতিথি হানিয়ার অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে? মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছে মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল নাকি তিনিও মোসাদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন?

হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এদিকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইতোমধ্যেই ইসরাইলে হামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে তেহরানের সর্বশেষ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তার ব্যর্থতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে বার বার।

ইসমাইল হানিয়ার জীবন ও সংগ্রাম: ২০২১ সালের আগস্ট শুরুতে হামাসের প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন ইসমাইল হানিয়া। এর মধ্য দিয়ে হামাস ও ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনীদের চোখে ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক, পশ্চিমাদের চোখে ছিলেন সন্ত্রাসী। ফিলিস্তিনী লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক হুসাম আন দাজানি বলেন, গাজার রাজনীতিতে ভারসাম্য এনেছেন হানিয়া। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ, যিনি শান্তি, ঐক্য ও স্থিলিশীলতা সমর্থন করেন। ইসমাইল হানিয়ার উত্থান ও গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ ভালো চোখে দেখেনি পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাকে ও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়। এর মধ্যেই হানিয়ার হাত ধরে ইসরাইলের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘাতে জড়ায় হামাস। দূরত্ব বাড়ে পশ্চিমাদের সঙ্গেও। তবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রভাব রয়ে যায়। সংগঠনে প্রভাব বাড়ে হানিয়ার। ২০১৩ সালের এপ্রিলে হানিয়া হামাসের উপপ্রধান হন। এরপর হামাসের প্রধান হিসেবে ইসমাঈল হানিয়া ২০১৭ সালের ৬ মে খালেদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হানিয়াকে ‘বিশেষ ট্যাগযুক্ত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা দেন।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের-পিত্র’র নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার পুরো নাম ইসমাঈল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া বা ওংসধরষ অনফবষ ঝধষধস অযসবফ ঐধহরুবয (জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৬২ সালে গাজার আল-শাতি’ শরণার্থী শিবিরে, ইসমাইল হানিয়া নামেই বেশি পরিচিত)। হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিশ^ ইসলামী আন্দোলনের একজন শ্রেষ্ঠ দা’য়ী। ১৯৪৮ সালে ইহুদী সন্ত্রাসীরা আশকেলনে তাদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে গ্রাম থেকে বাস্তুচ্যুত করে। ইসমাইল হানিয়ার পরিবার আর তাদের পৈত্রিক ভূমিতে ফিরে যেতে পারেননি। ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকার আল-শাতি’ শরণার্থী শিবিরে তার প্রাথমিক জীবন কাটিয়েছেন। শরণার্থী শিবিরের অন্যান্য শিশুদের মতো হানিয়া জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা দ্বারা পরিচালিত স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন (টঘজডঅ)। তিনি হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ইসাইল ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছর বন্দী করে রাখে। এরপর তাকে মারজ আল-জুহুর নামের ইসাইল এবং লেবাননের মধ্যকার একটি নো-ম্যানস-ল্যান্ডে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তিনি ১৯৯২ সালে বেশ কয়েকজন হামাস নেতার সাথে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে একটি পুরো বছর কাটিয়েছিলেন। নির্বাসনে থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হামাস তাকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করে এবং একই মাসের ২০ তারিখ তাকে নিযুক্ত করা হয়। এক বছর পর ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হানিয়েকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করেন। কারণ, ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বহিষ্কার করে। হানিয়া এর পর বেশ কয়েকবার ফাতাহ আন্দোলনের সাথে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ৬ মে থেকে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

১৯৮১ সালে ইসমাইল হানিয়া গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্য স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পৃক্ত একটি ইসলামী ছাত্র সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ইসলামিক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন। ২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি হামাস নির্বাচনে জয়ী পাওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেন এবং ২৯ মার্চ শপথ নেন। ফাতাহ-হামাস দ্বন্দ্বের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১৪ জুন রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস তাকে পদচ্যুত করেন। কিন্তু ইসমাঈল হানিয়া আদেশ মেনে নেননি এবং গাজায় প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে থাকেন।

ইসমাইল হানিয়াকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হানিয়াকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলোর পেছনে যেমন ইসরাইল জড়িত, তেমনি জড়িত ফাতাহ। ব্যক্তিগত জীবনে হানিয়া ১৩ সন্তানের জনক। তার পরিবার ২০০৯ সাল পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলের আল শাতি শরণার্থীশিবিরে ছিল। এর পর গাজার রিমাল এলাকায় জমি কিনে থিতু হয় হানিয়া পরিবার। তবে হানিয়া কখন কোথায় থাকেন, সেটার সুষ্পষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। মনে করা হয়, নিরাপত্তার জন্য তিনি তার অবস্থানের কথা আগাম জানান না। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ২০০৬ সালে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ইরানে গিয়েছিলেন। ওই সময় ইসরাইল সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কখনোই দখলদার ইহুদী সরকারকে স্বীকৃতি দেব না। জেরুজালেম মুক্ত করার আগপর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

ফিলিস্তিনী রাজনীতিবিদ এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকায় ডি ফ্যাক্টো সরকারের নেতা হিসাবে কাজ করেন (২০০৭-২০১৪)। ২০১৭ সালে তাকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান হিসাবে খালেদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ২০০৬ সালের নির্বাচনের পরপরই, ইসরাইল গাজা উপত্যকায় নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের প্যাকেজ বাস্তবায়ন শুরু করে, মিশরও একই রাস্তা অনুসরণ করে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে রকেট হামলা চালানোর পর, ইসরাইল তার অবরোধ আরও জোরদার করে। ২০০৬ সালে নির্বাচনে হামাসের বিপুল জয়লাভের পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসের নেতৃত্বের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফিলিস্তিনী অথরিটি-চঅ-কে সাহায্য বন্ধ করে দেয়।

১৯৮৭ সালে যখন ইসলামপন্থী দল হামাস গঠিত হয়; তখন ইসমাঈল হানিয়া তার কনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। গোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আহামদ ইয়াসিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ইয়াসিনের সাথে সম্পর্কের কারণে হামাসে তার খ্যতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৮ সালে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলী বাহিনী ইসমাইল হানিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রথম ইন্তিফাদাহ (ইসরাইলী অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রথম গণবিদ্রোহ) অংশগ্রহণের জন্য ছয় মাসের জন্য কারারুদ্ধ হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ১৯৯২ সালে ইসরাইল তাকে আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরো ৪০০ জন ইসলামপন্থীর সাথে দক্ষিণ লেবাননে নির্বাসন না দেওয়া পর্যন্ত কারাগারেই বন্দী ছিলেন। তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে, এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে। এক বছর পর অসলো চুক্তি হলে ১৯৯৩ সালে ইসমাঈল হানিয়া গাজায় ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। হামাসে ইসমাঈল হানিয়া ১৯৯৭ সালে যখন ইয়াসিনের ব্যক্তিগত সচিব হন তখন নেতৃত্বের ভূমিকায় ওঠেন। ইয়াসিনের বাকি জীবনের জন্য তিনি আধ্যাত্মিক নেতার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ছিলেন। ২০০৩ সালে ইসরাইলের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে একটি ব্যর্থ হত্যা প্রচেষ্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করে ছিল, যদিও মাত্র কয়েক মাস পরে শায়খ আহামদ ইয়াসিনকে ইসরাইলের সন্ত্রাসী বাহিনী হত্যা করে। ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হামাসের অনেক নেতার হত্যাকান্ডের ফলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় হামাসে তার অবস্থান আরো মজবুত হয়। ইসরাইলী বাহিনী তাকেও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। ২০০৩ সালে জেরুজালেমে আত্মঘাতি বোমা হামলার পর হামাস নেতৃত্বকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইসরাইলী বোমা হামলায় তিনি হাতে আহত হন।

ইসমাইল হানিয়ার সাফল্য: জেল কিংবা একাধিক হামলায় হানিয়াকে দমানো সম্ভব হয়নি। অনেকের মতে, তিনি ফিলিস্তিনীদের মুক্তির দূত। দেশী বিদেশী বাধার মুখেও এক দশকের বেশি সময় গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন তিনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন হামাসের সশস্ত্র বাহিনী। হামাসের রাজনৈতিক শাখার ভিত্তি মজবুত করেছেন। ইরান, তুরস্ক, লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো মিত্রদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। গাজায় স্বঘোষিত সরকার চালাচ্ছেন হানিয়া। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তার সরকারের স্বীকৃতি নেই। তাদের কাছে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সরকারই ফিলিস্তিনের বৈধ কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে গাজার রাজনীতি বিশ্লেষক ইবরাহিম মাধৌন বলেন, ‘আগামী দিনগুলোয় হানিয়াকে মিশর, কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করতে হবে।’ বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ই হানিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় টানা ইসরাইলী হামলায় ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়। বিধ্বস্ত হয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক অবকাঠামো। হামাসের প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়া হানিয়াকে এই অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করতে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। সেখানকার বিপুল পরিমাণ কর্মহীন তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়বে হানিয়ার ওপর। এর সঙ্গে রয়েছে ইসরাইলের হুমকি ও আগ্রাসনের আশঙ্কাও। তার মৃত্যুর পর আল কাসাস ব্রিগ্রেড এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়ার রক্ত, আজ গাজার শিশু, নারী, যুবক ও প্রবীণদের রক্তে এবং আমাদের জনগণ ও যোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এটা স্পষ্ট করে যে হামাস ও এর নেতারা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, একেবারেই জনগণের পাশাপাশি। ইসমাইল হানিয়ার মূল্যবান রক্ত কিছুতেই বৃথা যাবে না, বরং আলোকিত করবে মুক্তির পথ। গাজা, পশ্চিম তীর এবং এর সীমানার মধ্যে, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যোদ্ধারা যেখানেই পৌঁছাবে, সেখানেই শত্রুরা তাদের রক্ত দিয়ে এ আগ্রাসনের মূল্য দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় হামাস নেতা ইসমাঈল হানিয়া: ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা ইসমাঈল হানিয়াকে বিশ্ব সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালের বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক শাখার সঙ্গে হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসরাইলের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তাবক। খবর আল-জাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের।

রক্তের বদলা নেয়া হবে: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করার জন্য ইসরায়েলকে কঠোর জবাব পেতে হবে। তিনি বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতার রক্তের বদলা নেয়া দায়িত্ব মনে করে। বিবিসি।

আজ (বুধবার) ভোরে রাজধানী তেহরানে হামাস নেতার শাহাদাতের পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অপরাধী ও সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী রেজিম আমাদের স্বদেশে আমাদের প্রিয় মেহমানকে শহীদ করেছে এবং আমাদেরকে শোকাহত করেছে, তবে এর মধ্যদিয়ে নিজের জন্য কঠোর শাস্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।’

ইহুদিবাদী ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ইসমাইল হানিয়ার দীর্ঘ আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী জীবনের প্রশংসা করেন সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, ইসমাইল হানিয়া নিজে শহীদ হওয়ার জন্য এবং এই পথে তার পরিবারের সবাইকে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। খামেনি বলেন, আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণের ব্যাপারে হানিয়া মোটেই ভীত ছিলেন না। তবে এই তিক্ত এবং ভয়াবহ ঘটনা যেহেতু ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূখ-ে ঘটেছে সে জন্য জন্য তার রক্তের বদলা নেয়া আমরা দায়িত্ব বলে মনে করি।