আ ম ম আরিফ বিল্লাহ :
“শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ফেরাউন ছিলেন”: মালেক উকিল, হিথরো বিমান বন্দর, ১৯৭৫।
মুজিব বাংলাদেশে গনতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার হরণকারী। হেলিকপ্টারে করে ব্যালটবাক্স ছিনতাইকারী। বহুদলীয় প্রাতিষ্ঠানিক গনতন্ত্র বিলোপকারী। বিরোধী দল ও মত হত্যাকারী। যিনি নিজ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত ও চিরস্থায়ী করার জন্য নিজের দল আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাকশাল করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী। জাসদের হাজার হাজার কর্মীসহ অগণিত মানুষ হত্যাকারী। তার ভাই শেখ নাসের কর্তৃক তৎকালীন ন্যায্য মূল্যের দোকানের হাজারো কোটি টাকা লুটপাট। মুজিবের ব্যর্থ শাসনের ফলে আসে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ এবং পরিণতিতে চার লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু। কাজেই আওয়ামী নেতা মালেক উকিলের কথায় বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য পাওয়া যায়: শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ফেরাউন ছিলেন।
জাতির পিতা ও জামায়াত প্রসঙ্গ :
মুজিব বাংলাদেশের জনগণের নিকট অবিসংবাদিতভাবে কোনো জাতির পিতা নন। তিনি নিহত হওয়ার পর এদেশের জনগণ মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। বহুকাল পরে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর সাথে ঘাদানিকের আন্দোলনের মারপ্যাঁচে যোগসাজশ করে জামায়াতকে বিএনপি জোটের বাইরে এনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে বাধ্য করে এবং আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করে। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা করে। সুতরাং শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নিকট জাতির পিতা নন। আওয়ামী লীগ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া জাতির পিতা। ১৫ আগস্টের শোক দিবস ও একইভাবে চাপিয়ে দেয়া। মুজিবের স্বৈরাচারী দু:শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম একনায়কতন্ত্রের সূতিকাগার।
শেখ মুজিব ও হাসিনা ফ্যাসিবাদের একই রূপ :
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর এক নিকৃষ্ট স্বৈরাচার, হত্যা, গুম, খুন, হামলা, মামলা, নির্যাতন এবং পুতুল বিরোধী দল গঠন করে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে গত পনের বছরে অঘোষিত বাকশাল কায়েম করেছিলেন। নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে বিভিন্ন সাজানো অজুহাতে কারাবন্দি করে রেখেছিলেন। এককথায় শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। আমার বিবেচনায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী অপশাসন ফেরাউনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমি আরও বিশ্বাস করি যে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পথেই অগ্রসর হচ্ছিলেন।
ভারত প্রীতি, দেশ ও গণবিরোধী চুক্তি :
হাসিনা তার বাবার চেয়েও একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য প্রকাশ্য হুমকি ভারতের সাথে বিশেষ করে চরম ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী এবং বাবরী মসজিদ ধ্বংসকারী, বাংলাদেশের উজানে ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারকারী দুর্বৃত্ত নরেন্দ্র মোদীর সাথে চরম সখ্যতা গড়ে তোলেন। নরেন্দ্র মোদীকে সন্তুষ্ট করার জন্য শাপলা চত্বরে হেফাজতের আলেমদের হত্যা করেন। হাজার হাজার আলেমদের জেলে বন্দী করেন। শুধুমাত্র ক্ষমতার অধিষ্ঠিত থাকার জন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের সাথে অসংখ্য অসম চুক্তি করেছেন। শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন: “ভারতকে যা দিয়েছি তা চির দিন মনে রাখবে”। যেহেতু শেখ হাসিনার সরকারে জনগণের ম্যান্ডেট ছিল না, তাই এই সব চুক্তি অবৈধ এবং এজন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণজাগরণ :
সবশেষে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন সংগ্রামে হাসিনার স্বৈরাচারী অবৈধ সরকার ছাত্র ছাত্রীদের সামান্য কিছু যৌক্তিক বিষয়ে আলোচনা না করে পূর্ববত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের আহত করে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের পাশবিক নির্যাতনের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে সেখানেও এই জঘন্যতম স্বৈরাচারের ক্রীড়নক ছাত্রলীগ হামলা চালায়। সারাদেশে ছাত্র জনতার প্রতিরোধ গড়ে উঠে। একরোখা ফেরাউন এবার ৩২ দাঁত দিয়ে আঘাত করা শুরু করে। ছাত্র জনতার অদম্য প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। নিরস্ত্র আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। সমগ্র দেশ প্রতিবাদে জ্বলে উঠে। পুলিশ র্যাব বিজিবির পাশাপাশি ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাঠে নামে। শত শত ছাত্র জনতা শাহাদাত বরণ করেন। আহত হন হাজার হাজার। হেলিকপ্টারে করেও হামলা চালায়। এমনকি গুলিতে জানালার পাশে বসা শিশুও নিহত হয়।
সফল গণঅভ্যুত্থান ও স্বৈরাচারের পলায়ন :
ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ ও আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সকল রাজনৈতিক দল ছাত্র জনতার কাতারে শামিল হতে থাকেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আন্দোলনের আদ্যভাগ থেকেই মাঠে ময়দানে ছিল। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজত ইসলাম এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। গণজাগরণ থেকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় ফেরাউন জঘন্যতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় সেনা :
আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে এবং নিজের গদি রক্ষার্থে হাজার হাজার ভারতীয় সেনা বাংলাদেশে নিয়ে আসেন যারা পুলিশ বিজিবি ও ছাত্রলীগ যুবলীগ এর পাশাপাশি আন্দোলন দমানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। আমার ধারনা এরাই স্নাইপার রাইফেল দিয়ে ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
রেজা শাহ ও হাসিনার তুলনামূলক পর্যালোচনা :
এখানে উল্লেখ্য যে, শেখ হাসিনার এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ইরানের রেজা শাহের কৃত অপরাধের সাথে তুলনাযোগ্য।বিরুদ্ধে ইসলামী বিপ্লবীদের হত্যাকাণ্ডের সাথে তুলনা যোগ্য। রেজা শাহ বিক্ষোভ দমনের জন্য ইসরাইলী সৈন্যদের ভাড়া করেছিলেন। ইসরাইলী সেনারা হেলিকপ্টারে করে বিক্ষোভ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছিলো। রেজা শাহের পেছনে আমেরিকা এবং তার পোষা ইসরাইল ছিল। আমেরিকা হাজার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ও তেল শোষণ অব্যাহত রাখতে রেজা শাহকে ক্ষমতায় টিকে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু ইরানের দেশপ্রেমিক বিপ্লবী জনগণ সে স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দেয়। অবশেষে রাজপ্রাসাদ থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রথমে তেহরানের মেহরাবাদ বিমান বন্দরে এবং ওখান থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে বিমানে যাত্রা করে। কিন্তু নিয়তির পরিহাস ইরানী বিপ্লবীদের ভয়ে আমেরিকা রেজা শাহকে বহনকারী বিমানকে নিজ আকাশসীমায় ঢুকতে দেয়নি। অবশেষে পানামায় সে বিমান অবতরণ করে। শেখ হাসিনার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গণহত্যা চালানোর পেছনে ক্রীড়নক হিসেবে ভারত কেবল ইন্ধনই নয় সৈন্য রসদ পাঠিয়ে সব ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছে।
ভারত কী চায়?
বাংলাদেশের জমিনে একটি পুতুল সরকার চিরস্থায়ীভাবে বসিয়ে অবারিত শোষণ অব্যাহত রাখা। বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে ধীরে ধীরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হরণ করা। এ ছাড়াও ৫৪ টি নদীর পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিয়ে ভারতে লক্ষ কোটি টাকার কৃষি সম্প্রসারণ করছে। কৌশলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতকে পঙ্গু করে বাংলাদেশী রোগীদের ভারতমুখি করে লাখো কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। অসম বাণিজ্য ঘাটতি থেকে লাখো কোটি টাকার বাণিজ্য সুবিধা লাভ করছে। দেশের ৩০ লক্ষ বেকার ফেলে রেখে ২৬ লক্ষ ভারতীয় এ দেশে অবৈধভাবে কাজের মাধ্যমে প্রায় আশি হাজার কোটি টাকা বছরে লুটপাট করেছে। ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নিজের গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এসব কারণেই মূলত ভারত বন্ধুবেশে বাংলাদেশের প্রধান শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
জিয়া হত্যাকাণ্ড : এরশাদ ও ভারত প্রসঙ্গ
ভারত এই সব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এরশাদের চক্রান্তে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাকারী মহান স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কিছু কুচক্রী সেনাবিদ্রোহ ঘটিয়ে চট্টগ্রামে শহীদ করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ভারতের সহযোগিতায় এরশাদের কৃপায় শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে।
ভারতীয় র এর খপ্পরে জামায়াত :
ভারতীয় র এসময় জামায়াতের উপরেও প্রভাব বিস্তার করে। ফলে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একা ফেলে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে এরশাদের সাজানো নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। এরপর জামায়াত ও আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে।
ঘাদানিক ও র এর বেড়াজালে জামায়াত :
পরবর্তীতে ভারতীয় র এর সহযোগিতায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। গণ আদালতে জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। উদ্দেশ্যে ছিল জামায়াতের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিএনপি জোট থেকে জামাতকে বিচ্ছিন্ন করা। কারণ ভারতীয় র জানতো জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করা না গেলে আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এক সময় র এর জালে জামায়াত পা দিতে শুরু করে। ভারতীয় দূতাবাসের সেক্রেটারী মি. নাগ ও জামায়াতের তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মরহুম শহীদ কামারুজ্জামান এর মধ্যস্থতায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের আট নেতা দিল্লী গমন করে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা যায় ঐ বৈঠকে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়: এক) জামায়াত বিএনপি জোটে থেকে বেরিয়ে আসবে। দুই) জামায়াত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিবে। বিনিময়ে বাংলাদেশে জামায়াত বিরোধী আন্দোলন বিশেষত ঘাদানিক নিষ্ক্রিয় করা হবে। জামায়াতের পরবর্তী কর্মকৌশল থেকে এর সত্যতা অনুধাবন করা যায়।
লালদীঘি ময়দানে গোলাম আজমের জনসভা :
দিল্লী থেকে ফিরে জামায়াত ধীরে ধীরে বিএনপি জোটের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে। অধ্যাপক গোলাম আযম জেল থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে জনসভা করার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ও বাম সংগঠনের নেতারা গোলাম আযমকে চট্টগ্রামে জনসভা করতে দেবে না বলে ঘোষণা করে। জনসভায় দিন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি দেন যা ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ছাপা হয়: “আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।” গোলাম আযম নির্বিঘ্নে লালদীঘি ময়দানে জনসভা করে ঢাকায় ফিরেন।
জামায়াতের ৩০০ আসনে প্রার্থী :
পরবর্তীতে ৯৬ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়। যে গোলাম আযমকে চট্টগ্রামে জনসভা করার বিরুদ্ধে আওয়ামী জেলা সভাপতি মুহিউদ্দীনসহ সকল বাম রাম সংগঠন একজোট হয়েছিল সেই গোলাম আযম বাংলাদেশ এর ৬৪ টি জেলায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান কোথাও কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। যাইহোক, জামায়াতের কৃপায় আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করে। র এর ষড়যন্ত্র সফল হয়।
দোলাচলে জামায়াত :
পরবর্তীতে জামায়াত আবার বিএনপি জোটে যোগদান করে। কিন্তু জামায়াত চেষ্টা করেও র এর জাল থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি। যে আওয়ামী লীগকে তারা ক্ষমতায় আনলো সেই আওয়ামী লীগই এখন তাদের গলার কাঁটা। শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক রেখে আবার কখনও দলের নিবন্ধনের দোহাই দিয়ে জামায়াতকে অনেকটাই পঙ্গু করে রাখে। এর প্রতিফলন দেখা যায়, ওয়ান এলেভেনের পর বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হয়ে হয়ে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন: এই সিইসি এর অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। জামায়াত একতরফাভাবে ঘোষণা দেয় তারা নির্বাচনে অংশ নেবে! এরশাদকে জোটে নেয়ার বিরুদ্ধ জামায়াত আগাগোড়া সোচ্চার ছিল। এরশাদ পরে আওয়ামী জোটে যোগদান করে। এতে বিএনপি জোটের সমূহ ক্ষতি হয়। ইলেকশনের পর বেগম খালেদা জিয়া যখন বলেন এ ফলাফল মানিনা। জামায়াত বিএনপি জোটের সভায় যোগদানের পূর্বেই একতরফাভাবে ইলেকশনের ফলাফল মেনে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে জোটের সভায় যোগদান করে। এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কার্যকলাপ কোন সুস্থ মস্তিষ্কের পক্ষে সম্ভব নয়। ভুতের আছর থাকাই স্বাভাবিক ভাবা যেতে পারে।
জামায়াত কি পেলো?
যাহোক এত কিছুর পরও জামায়াতের শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ, এটা আওয়ামী ষড়যন্ত্র নয়। ভারতীয় র এর কাজ। পথের কাঁটা মুক্ত করা। একে একে জামায়াত এর কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসি দেয়া হলো। র ষোল কলায় পূর্ণ।
প্ল্যান ২০৪০ :
এরপর বিরোধী দল শূন্য বাংলাদেশ তৈরির কাজ শুরু হয় প্ল্যান ২০৪০। দেশের উপর ভর করে বাম-রাম ইস্কন হিন্দুত্ববাদী আদর্শের ধ্বজাধারীরা। ইসলামী ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিনাশের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশকে মেধা শূন্য করার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়। অবাধ যৌনাচারের স্বাধীনতা এবং ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক বইয়ে হিন্দু দেব দেবীর ছবি প্রকাশ করা হয়।
আবাবিল পাখি: মহান আল্লাহর শুকরিয়া
সর্বশেষে মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট লাখো কোটি শুকরিয়া যে তিনি আমাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্র সমাজকে আবাবিল পাখির মত জাগিয়ে তুলেছেন এবং তাদের চেতনায় মুগ্ধ হয়ে জাতি গNঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে ভারতীয় সেবাদাস নব্য ফেরাউনের হাত থেকে মাতৃভূমিকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছেন। আজকে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগ্রামী ছাত্র ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলছি: তোমরাই আগামী দিনের কাণ্ডারি। তোমরাই আগামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সিপাহসালার।
আ ম ম আরিফ বিল্লাহ
সাবেক চেয়ারম্যান: ফার্সী ও উর্দু বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়