নানা অনিয়ম ও বেনামে ঋণ দেয়ার সঙ্গে জড়িত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ ডিএমডিসহ ৮ শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বরখাস্তরা হলেন- অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ (এএমডি), উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম ও ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া প্রধান অর্থপাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা তাহের আহমেদ চৌধুরী ও আইবিটিআরএ প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তাদের বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন এই লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের দাবি করেছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পাশাপাশি এস আলম গ্রুপের সহযোগী সব কর্মকর্তার বরখাস্ত করার দাবি জানান ব্যাংকটির সাধারণ কর্মীরা। এ বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্স’, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে ১৯৯৯, ২০০০, ২০০৪, ২০০৫ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ইসলামী ব্যাংক হিসেবে ভূষিত করে।দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় বা বৈদেশিক রেমিট্যান্স আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। দেশে ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণের পুরস্কারস্বরূপ সেন্টার ফর এনআরবি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে গোল্ড রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা ইসলামী ব্যাংকে এখন বইছে বহুমুখী পরিবর্তনের হাওয়া। একদিকে পরিবর্তন হয়েছে মালিকানার, অন্যদিকে পরিবর্তন এসেছে ব্যবস্থাপনাতেও। আগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানকে সরিয়ে সেখানে বসানো হয়েছে নতুনদের। শুধু তাই নয়, বিদেশি মালিকদের সরিয়ে এই ব্যাংকে এখন দেশি ব্যবসায়ীদের মালিকানা ।
২০২০ সালের মার্চ মাসে, ইসলামি ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও প্রশ্ন উঠে।
প্রধান অংশীদারগণ যারা ছিলেন –
ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি).
জর্ডান ইসলামীক ব্যাংক, জর্ডান।
ইসলামীক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কর্পোরেশন, দোহা, কাতার।
বাহরাইন ইসলামীক ব্যাংক, বাহরাইন।
ইসলামীক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং এস.এ।
মুদ্রা বিনিময় ও বাণিজ্যের জন্য আল-রাজি কোম্পানি।
শেখ আহমেদ সালাহ জমজুম, জেদ্দা, কেএসএ।
ফুয়াদ আব্দুলহামিদ আল-খতিব (প্রয়াত), কে.এস.এ.
দুবাই ইসলামী ব্যাংক।
দ্য পাবলিক ইনস্টিটিউশন ফর সোশ্যাল সিকিউরিটি, সাফাত।
কুয়েত ফিন্যান্স হাউস।
কুয়েতের তিনটি মন্ত্রণালয়।
ব্যাংকটির ৬৩.০৯% শেয়ার উপরিউক্ত বিদেশী অংশীদারগণের আর বাকি ৩০.৯১% এর মালিকানা বাংলাদেশের ৬০,০০০ শেয়ারহোল্ডারগণ।
১৯৮২ সালে নভেম্বর মাসে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আইডিবির অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি করার ব্যাপারে ‘ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরো’ (আইইআরবি) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক সমিতি (বিবা) অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহুমাত্রিক চেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয় এবং এ নামেই তখন পর্যন্ত ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও প্রচার-পুস্তিকা ব্যবহার করা হয়। মফিজুর রহমান ২৯ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এরপর ৩০ মার্চ থেকে এ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ মীর কাশেম আলী সহ ১৯জন বাংলাদেশি ব্যক্তিত্ব, ৪টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এবং আইডিবিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ১১টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থা এবং সৌদি আরবের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তারূপে এগিয়ে আসেন। ব্যাংকের মনোগ্রাম তৈরি করেন শিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার সবিহউল আলম।
দ্য ইকোনমিস্ট-এর মতে, “ইসলামী ব্যাংক চীনের বাইরে পোশাক শিল্পের প্রধান উৎপাদন ভিত্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।২০১৭ সালে, বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে পরিচালকদের অপসারণ করে এবং পরিচালনা পর্ষদ ও মালিকানাতে পরিবর্তন আসে। তাদের পরিবর্তে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকদের নিয়ে আসা হয়। এরপর ব্যাংকটির বড় অংশের শেয়ার ও মালিকানা চট্টগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের অধীনে চলে যায়।তারপর থেকে, ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে।
ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমসমূহ মধ্যে রয়েছে:
- ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল
- ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ
- কমিউনিটি হাসপাতাল
- মনোরোম: ইসলামী ব্যাংক নৈপুণ্য ও ফ্যাশন ঘর
- সেবা কেন্দ্র
- ইসলামী ব্যাংক প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট
- ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক স্কুল ও কলেজ
- ইসলামী ব্যাংক ফিজিথেরাপী ও পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র
- উন্নয়ন আলোচনা কেন্দ্র
- বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র