• ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

তীব্র প্রতিবাদের পরও পদত্যাগ করছেন না ঢাবির দুই প্রফেসর

usbnews
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪
তীব্র প্রতিবাদের পরও পদত্যাগ করছেন না ঢাবির দুই প্রফেসর
নিউজটি শেয়ার করুনঃ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও দেশান্তরিত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রের সর্বত্র তার অনুগতদের অপসারণ করা হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল ও অনুষদের প্রদানদের অপসারণও। এদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও বেশিরভাগই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) দুই প্রফেসর ড. অহিদুজ্জামান চাঁন ও মাহবুবুর রহমান লিটুকে। শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত পদত্যাগে রাজি হচ্ছেন না এই দুই প্রফেসর। এই ইনস্টিটিউটে হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর বলে তাদের স্থায়ী অব্যাহতির দাবিতে সরকার পতনের পর থেকে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা

আজ শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) ঢাবির এই দুই প্রফেসরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ধর্মীয় পোশাক নিয়ে কুটুক্তি ও হেনস্থার অভিযোগে স্থায়ী অব্যাহতির দাবিতে “লং মার্চ টু আইইআর” কর্মসূচী পালন করে ইনস্টিটিউটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

স্বৈরাচার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, রাজনৈতিক পেশি শক্তি খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক নিপীড়ন ও ধর্মীয় পোশাকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা ও অকৃতকার্য করিয়ে দেওয়া, শিক্ষক হিসেবে অযোগ্যতা, অনৈতিকতা, চাটুকারিতার মতো অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়া এই ইনস্টিটিউটে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন প্রফেসর অহিদুজ্জামান। ইনস্টিটিউটের পরিচালক হওয়ার পূর্বে তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেও নানান দুর্নীতির সাথে নিজের নাম জড়ান। তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. জিনাত হুদাও স্বৈরাচার হাসিনার অন্যতম ভ্যানগার্ড হিসেবে শিক্ষক মহলে পরিচিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন সভা, সেমিনার কিংবা সমাবেশে শেখ হাসিনার পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে দেখা যায়।

তথ্য মতে, গত প্রায় এক মাস যাবত ঢাবির এই দুই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানান প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গতকাল শনিবার শিক্ষার্থীরা ‘লংমার্চ টু আইইআর’ পালন করেন। এর আগে গত ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪জন শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিরোধী ১০০ শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ নামের একটি সংগঠন। এ তালিকায় ১ নাম্বরে ছিল ড. অহিদুজ্জামান চাঁনের নাম। এছাড়া অন্য প্রফেসর মাহবুবুর রহমানের নাম দেখা যায় তালিকায় ৩ নাম্বরে। এ তালিকায় স্থান পায় ড. অহিদুজ্জামানের স্ত্রী ড. জিনাত হুদাও।

আইইআর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ১ সেপ্টেম্বর ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন সময়ে তাদের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দায়িত্বসমূহ থেকে সাময়িক অব্যাহতিও দেয়া হয়। তবে এখনো প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি ইনস্টিটিউটকে কলঙ্কমুক্ত করার আগ পর্যন্ত তাদের এ প্রতিবাদ চলবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, একমাসব্যাপী চলা এই আন্দোলনকে সফল করতে শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইনস্টিটিউটকে কলঙ্কমুক্ত না করা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তদন্তের জন্য তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের দাবির কেবল একটি অংশ পূরণ হয়েছে। সামনে রয়েছে আরো দীর্ঘপথ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল ১০ টায় “মার্চ টু আইইআর” কর্মসূচি পালিত হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে ঢুকতে চাইলে লিটু স্যার গেট খুলেননি। এছাড়া এই দুইজন শিক্ষক ধর্মীয় পোশাকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করেছেন। মাহবুবুর রহমান লিটু স্যার ২৬তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীকে ভাইভা বোর্ডে ফেইল করে দিয়েছেন হিজাব না খোলার কারণে। চান স্যার আমাদের অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে হিজাব পরে আসার কারণে হেনস্থা করেছেন। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নিয়ে দুই শিক্ষককে স্থায়ী অব্যাহতি না দেবে ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া গতকালের কর্মসূচি চলাকালীন বর্তমান এবং প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীরা মিলে কবিতা আবৃত্তি, গান, শিক্ষকদ্বয়ের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার অভিজ্ঞতা বলা, অভিযুক্ত দুই শিক্ষক দ্বারা প্রাক্তন ও বর্তমানদের মধ্য থেকে কারা বেশি নিপীড়িত বিষয়ক রম্য বিতর্কসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচীটি পালন করতে দেখা যায়। আবির ছদ্মনামে এক শিক্ষার্থী ইনকিলাবকে বলেন, এমন নির্লজ্জ শিক্ষক বোধহয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আর একটাও নেই। শিক্ষার্থীদের এমন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ সত্ত্বেও তারা পদত্যাগ করছেন না। মানসম্মান থাকলে অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল। সত্যি বলতে তাদের ছাত্র হয়ে আমি নিজেও লজ্জিত।