এক মাস পার! এখনও আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ‘সুবিচার’ মেলেনি। এই মামলার তদন্ত নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে আর জি কর নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। সরসংঘচালকের বক্তব্য, “যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।”
আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্যেজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি।
আরএসএস প্রধানের দাবি, যে বা যারাই দোষী হোক, তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে কঠোর সাজা দিতে হবে। মোহন ভাগবত বলেন, “গোটা দেশ এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। দোষীদের শাস্তি দিতে সরকার যা পদক্ষেপ করবে, তাতে পূর্ণ সমর্থন থাকবে।” বস্তুত সংঘপ্রধান প্রশাসনকে সমর্থনের বার্তাই দিয়েছেন।
কালো বেলুন উড়িয়ে এনআরএসে প্রতিবাদে চিকিৎসকরা।
রবিবার বড়বাজারে সংঘে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভাগবত। সেখানেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারতীয় সংস্কৃতি চিরকাল মাতৃশক্তির বন্দনা করে এসেছে। যখন সীতাহরণ হয়েছে, তখন রামায়ন হয়েছে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হওয়ায় মহাভারত হয়েছে। সেই ভারতে কী করে এই ঘটনা ঘটে?” সরসংঘচালকের স্পষ্ট কথা, “সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।”
গত সপ্তাহেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন জানিয়ে দিয়েছিল, বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব উচ্চপদস্থ অফিসারকে থাকতে হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দপ্তরের থেকে রিপোর্ট নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়। ম্যারাথন নির্বাচন ও পরবর্তীতে ভারী বর্ষণ ও বন্যা পরিস্থিতির জন্য বহু প্রকল্পের কাজ থমকে। কোন প্রকল্প কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, সব রিপোর্ট জমা দিতে হয়েছে সচিবদের। তার মধ্যেই শনিবার সরকারি কর্মীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পরিষেবা পৌঁছনোর ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না বলেই একেবারে বিজ্ঞপ্তি জারি করলেন মুখ্যসচিব। যা পর্যালোচনা বৈঠকের প্রিলিউড বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার শিয়ালদা আদালতে পেশ করা হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর সঞ্জয়কে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। খুনের ২৪ দিন পর সঞ্জয়কে পেশ করা হয়েছিল শিয়ালদা আদালতে। ভার্চুয়াল শুনানি ছিল এদিন।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে এদিন আদালতে দেখা মিলল না সিবিআই অফিসারের। আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রশ্ন উঠছে, এত বড় একটা ঘটনা যেটাকে ঘিরে রীতিমত আলোড়ন উঠেছে সমাজে। রাস্তায় নেমেছেন এত মানুষ, তার শুনানিতে এত ঢিলেমি কেন? প্রধান অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করা হচ্ছে আর সেখানে দেখা মিলছে না তদন্তকারী অফিসারের। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সিবিআইকে আক্রমণ করল রাজ্যের শাসক দল।
এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে লেখা হয়, ‘২৪ দিন পর আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আদালতে পেশ করা হল। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার কোথায়? সিবিআই আইনজীবী কোথায়? কোথাও দেখা মিলল না! ঘটনার তদন্তে যে সিবিআইয়ের কোনওরকম উৎসাহ নেই তারই প্রমাণ মেলে এই ঘটনায়। প্রকাশ্য দিবালোকে বিচারব্যবস্থার সাবোটাজ করা হচ্ছে। নিজেদের কাজ করার আগে সিবিআই বিজেপির লোক ছাড়া আর কিছুই না।’
উল্লেখ্য, এদিন শুনানি শুরু হওয়ার পর আইনজীবীর দেখা না মেলায় বিচারক প্রশ্ন করেন। তখন জানানো হয়, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি যোগ দেবেন। শুনানি শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টার মাথায় দেখা মেলে সিবিআই আইনজীবীর। বিচারক বলেন, জামিন দিয়ে দেব কী? পরে অবশ্য জামিন পাননি সঞ্জয়। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় বিরাট ভাবে প্রভাব ফেলেছে সমাজের সমস্ত শ্রেনীর ওপর। দলে দলে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।
রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজধানী বেলজিয়ামের ব্রাসেলস-এর জুবেল পার্কে একজোট হন প্রবাসী বাঙালিরা। ছোট থেকে বড় সকলের হাতেই ছিল মোমবাতি, দেশের পতাকা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। বাংলায় নারীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। সুইজারল্যান্ডের সমস্ত বাঙালি ও ভারতীয়দেরও একটাই স্বর, ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’। এদিন অভয়ার সুবিচারের দাবিতে জুরিখের রাস্তায় মিছিল করলেন সেখানকার ভারতীয়রা। বললেন, কলকাতার জুনিয়র ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের পাশে আমরা আছি। যতদিন না বিচার হবে, প্রতিবাদ-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিলেন তাঁরা। স্লোগানেই সাফ জানিয়ে দিলেন, হাল তাঁরা ছাড়বেন না। এবিষয়ে বিশ্ব সমন্বয়ক দীপ্তি জৈন বলেন, “আর জি কর ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের মানুষ সমবেত হয়েছেন। অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে। সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন সকলে।”
প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তারপর একমাস পেরিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা গিয়েছে। সেটাও করেছে কলকাতা পুলিশ। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ১৩ আগস্ট কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তারপর প্রায় ৪ সপ্তাহ কেটে গেলেও তদন্ত নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি। আপাতত সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তার আগে আরজি করের জন্য সুবিচার চাইলেন মোহন ভাগবতও।