সহিংস সংঘর্ষের জেরে আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় গুলি বিনিময়, বোমা বিস্ফোরণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু, মণিপুর রাইফেলসের দু’টি ব্যাটেলিয়নের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রশস্ত্র লুটের চেষ্টা-সহ একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও যৌথ বাহিনী।
রাজ্যটির রাজধানী ইম্ফলের পরিস্থিতি সোমবারও উত্তপ্ত ছিল। কুকিরা কোতুর্ক নামে একটি গ্রামে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে সেখান গাড়িসহ বেশ কিছু অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল।
শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন বহু মানুষ। রোববার রাতে বিপুল সংখ্যক নারী ইম্ফলে রাস্তায় নামেন। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তারা।
কুকি বিদ্রোহীরা বিষ্ণুপুরের দুটি আবাসিক এলাকায় দূরপাল্লার রকেট মোতায়েন করে রেখেছে। বিষ্ণুপুরে ড্রোন হামলায় আরকে রাবিই নামের ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
যেসব কুকি বিদ্রোহী হামলা চালাচ্ছে, তারা পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত তিনটি বাঙ্কার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানকার পুলিশের আইজি, ডিআইজি কাজ করছেন। বিদ্রোহীদের দমনে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
মণিপুরে যখন বিদ্রোহীদের দমনে সেখানকার প্রশাসন ব্যস্ত, তখনই রাজ্যটির রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় পুলিশ ফোর্সের একটি গাড়িকে ধাওয়া দিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেখানে তারা সাতরঙা পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন।
গণমাধ্যমে মণিপুরের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সরকারি অফিস থেকে একটি পতাকা নামিয়ে সেখানে নতুন করে আরেকটি পতাকা উড়ানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নতুন করে যে পতাকাটি উড়িয়েছেন সেটি কাঙ্গলিপাক বা সালাই ট্যারেট পতাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি একটি আয়তাকার সাত রঙের পতাকা। প্রাচীনকালের মেইতি জাতিগোষ্ঠীর সাতটি বংশের প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরতে মণিপুরে অনেকেই এই পতাকা ব্যবহার করেন।
থাউবালের ডিসি এ সুভাষ সিং জানান, বিক্ষোভকারীরা একটি পুরোনো সালাই ট্যারেট পতাকা নামিয়ে সেখানে নতুন পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন। আর এই ঘটনাটি ডিসি অফিসের প্রধান ভবনে ঘটেনি বরং মূল ফটকে ঘটেছে।
বাংলাদেশ কে ধন্যবাদ জানিয়ে মণিপুরের সাধারণ জনগণ নেমেছে রাস্তায়
সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকেই রক্ত ঝরছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে। মণিপুরে শান্তি ফেরাতে এ বার রাজ্য সরকারের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। সব বিধায়ককে নিয়ে রাজ্যপাল লক্ষ্মণ আচার্যের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সূত্রের খবর, সেখানেই এই দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, মণিপুরে বিজেপি শাসিত সরকার। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন। অনেকের মতে, কেন্দ্রের উপর ভরসা রাখতে পারছে না মণিপুর সরকার।গত বছর মে মাস থেকে উত্তপ্ত মণিপুর। শান্তি ফেরাতে বার বার পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনী মণিপুরে শান্তি ফেরানো দায়িত্বে আছে।