দীর্ঘদিন হিজবুল্লাহকে শক্ত ও দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন হাসান নাসরাল্লাহ। কিন্তু ইসরাইলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হওয়ার পর গ্রুপটি মুখে যতই বলুক তারা আরও বলিয়ান হয়ে লড়াই অব্যাহত রাখবে, প্রকৃতপক্ষে তারা যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন নতুন করে তাদেরকে নতুন নেতার অধীনে সংগঠিত হতে হবে। নতুন নেতা নির্বাচন করলে তিনি দলকে হাসান নাসরাল্লাহর মতো দক্ষ হাতে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য উপায়ে গ্রুপকে চালাতে সক্ষম হবেন কিনা- তাও চিন্তার বিষয়। এমন অবস্থায় আলোচনায় হিজবুল্লাহ, ইসরাইল ও ইরান। হাসান নাসরাল্লাহর সঙ্গে নিহত হয়েছেন ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের একজন ডেপুটি কমান্ডার। এমনিতেই হিজবুল্লাহকে সমর্থন দেয় ইরান। তাদের অভিজাত রেভ্যুলুশনারি গার্ডের কমান্ডার, যিনি একজন জেনারেল পদধারী ছিলেন, তার মৃত্যু ইরান কিভাবে নেয় তা দেখার বিষয়। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কন্স্যুলেটে এর আগে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। তাতে ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের বড় মাপের একজন কমান্ডার নিহত হন। তার বদলা নেয়ার হুমকি দেয় ইরান। এক পর্যায়ে প্রায় ৩০০ ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইলে। তবে তার বেশির ভাগই আকাশে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার দাবি করে ইসরাইল। আবার তাদের একজন কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। এবার ইরান কি করবে তা পরিষ্কার নয়।
লেবানন থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, দক্ষিণ বৈরুতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী গণহত্যার মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ লেবানন ছেড়ে সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে।
তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স পেইজে এক পোস্টে একথা জানান। তিনি লিখেছেন, “লেবাননে বসবাসকারী ৫০ হাজারের বেশি লেবানন ও সিরিয়ার নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেবাননের অভ্যন্তরে দুই লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।”
গত সোমবার থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল মারাত্মক বিমান হামলা শুরু করার পর এ পর্যন্ত লেবাননে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাদুই লাখ ১১ হাজার ছাড়িয়েছে।
ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ইউএনএইচসিআর আগে সতর্ক করেছিল যে, “এই অঞ্চলটি নতুন করে উদ্বাস্তুর বোঝা বহন করার মতো অবস্থায় নেই।”
লেবাননে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জতিসংঘ মহাসচিবের, উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর অহ্বান
জতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের অহ্বান জানিয়েছেন।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি বলেছেন, সহিংসতা এখনই বন্ধ করতে হবে। লেবানন ও ইসরাইলসহ এ অঞ্চলের জনগণ একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের ভার বহন করতে অপারগ।
নিউইয়র্ক থেকে ইউএননিউজ পোর্টাল ২৮ সেপ্টম্বর জানায়, তিনি নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ১৭০১ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সীমান্তে (নীল রেখা) উত্তেজনা এখন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইসরাইল গত কয়েক সপ্তাহে লেবাননে হিজবুল্লাহ অবস্থান লক্ষ্য করে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছে, এতে ৭০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈরুতে হামলার পর লেবাননে মানুষ বিপুল সংখ্যায় সরে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) অনেক জায়গায়এসব মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সংস্থাটি জানায়, পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে জরুরি সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানায়, লেবানন থেকে সিরিয়ায় অভিবাসিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে লেবাননে বসবাসকারী সিরিয়ান ও ফিলিস্তিনি শরণার্থীরাও রয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর মতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে লেবাননে মোট ২১১,৩১৯ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থার (ইউএনআরএ) কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, সংস্থাটির বিভিন্ন টিম বাস্তুচ্যুত লোকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে নিযুক্ত রয়েছে।
নাসরুল্লাহ হত্যায় বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান নিহতের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নাসরাল্লাহকে লক্ষ করে হিজবুল্লাহ’র ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালালে তিনি নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। নাসরাল্লাহ হত্যার নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
হামাস
হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহ হত্যার ঘটনাকে ইসরায়েলের কাপুরুষোচিত ও সন্ত্রাসী কাজ বলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন-হামাস।
এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ‘আমরা এই বর্বর ইহুদি আগ্রাসন ও আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি ও সনদের প্রতি অগ্রাহ্যতা প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তিকে প্রকাশ্যে হুমকির অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের নেতারা।
সেই সঙ্গে লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ইসলামি প্রতিরোধের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।
ফাতাহ
ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসনের নিন্দা করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। হাসরাল্লাহ হত্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনি ফাতাহ আন্দোলন। এসময় লেবাননের জনগণ এবং তাদের প্রতিরোধ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছে ফাতাহ।
ইরাক
ইসরায়েলি হামলাকে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি। এক বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েলকে নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি একটি অপরাধ যা দেখায় যে ইহুদি সত্তা সমস্ত লাল রেখা অতিক্রম করেছে।
বিবৃতিতে সুদানি নাসরাল্লাহকে ‘সৎপথের শহিদ’ বলে অভিহিত করেছেন। ইরাকজুড়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন তিনি।
প্রভাবশালী ইরাকি শিয়া মুসলিম নেতা মোক্তাদা আল-সদরও ইরাকে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
তুরস্ক
লেবাননে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। ইসরায়েলি হামলাকে তিনি ‘গণহত্যা, দখল ও আক্রমণের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলকে থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় নাসরাল্লাহের নাম উল্লেখ না করে এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্ক লেবাননের জনগণ এবং এর সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। মুসলিম বিশ্বকে আরও ‘দৃঢ়’ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এরদোয়ান।
ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা বলেছেন,নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ড তাদের ইসরায়েলি শত্রুদের মোকাবেলা করার সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে। ইসরায়েলি শত্রুকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব কাউন্সিল জানিয়েছে, শহিদ হাসান নাসরাল্লাহ’র আত্মদান ত্যাগের শিখাকে বাড়িয়ে তুলবে।
যুক্তরাষ্ট্র
বরাবরের মতো ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘নাসরুল্লাহর মৃত্যু তাঁর হত্যাকাণ্ডের শিকার বহু মানুষের জন্য একটি ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ। তাঁর শিকারদের মধ্যে হাজারো মার্কিন, ইসরায়েলি ও লেবাননের বেসামরিক লোকজনও রয়েছেন।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, হিজবুল্লাহ, হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর সেই অধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনও আছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘নাসরুল্লাহ একজন সন্ত্রাসী ছিলেন, তাঁর হাতে মার্কিনদের রক্তও লেগে আছে।’
‘হিজবুল্লাহ, হামাস, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে’ এবং এর প্রতি সব সময় তাঁর সমর্থন রয়েছে বলেও জানান ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের প্রভাবশালী রিপাবলিকানরাও নাসরুল্লাহকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসীদের একজন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
জার্মানি
লেবাননের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। ইসরায়েলি হামলায় পুরো অঞ্চলটি সহিংসতার এক চূড়ান্ত চক্রে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিকে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি।
ফ্রান্স
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ও সংঘর্ষ রোধে লেবানন কর্তৃপক্ষ এবং অঞ্চলটির অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছে ফ্রান্স। এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
ফ্রান্সের বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য জাঁ-লুক মেলেঞ্চন বলেছেন, নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড লেবাননে আগ্রাসন এবং সাধারণ যুদ্ধের আরও একটি ধাপ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর অপরাধগুলো চলতে থাকবে কারণ তা অপ্রতিহত রয়েছে।
রাশিয়া
নাসরাল্লাহ হত্যায় ইসরায়েলকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে লেবাননে শত্রুতা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনা লেবানন এবং মধ্যপ্রাচ্যকে আরও বড় নাটকীয় পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রচলিত চর্চা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
কিউবা
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল এক্স-এর একটি পোস্টে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত টার্গেট হত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন যা ‘আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার জন্য ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সম্পূর্ণ দায় বহন করে।’
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই এক্স-এ এই হত্যাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডেভিড এপস্টেইনের একটি বার্তা পুনরায় পোস্ট করেছেন। এতে বলা হয়, ‘ইসরাইল সমসাময়িক সর্বশ্রেষ্ঠ খুনিদের একজনকে নির্মূল করেছে। কাপুরুষোচিত হামলার জন্য অন্যদের মধ্যে সেও দায়ী,’ এতে আরো বলা হয়, ‘আজ পৃথিবী একটু স্বাধীন’।
সউদী
সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে বলেছেন, ‘এই উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে’। ‘আমরা এই অঞ্চলে একটি সত্যিকারের যুদ্ধ এড়াতে সকল পক্ষকে প্রজ্ঞা ও সংযম দেখানোর আহ্বান জানাই।’
ভেনিজুয়েলা
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নাসরুল্লাহ ও লেবাননের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা এটাকে ন্যায্যতা দিতে চায়, কিন্তু তাকে হত্যা করার জন্য, তারা বিল্ডিং, হাউজিং এস্টেটে হামলা করেছে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। এর জন্য একটি শব্দ আছে: অপরাধ।’ সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর পূর্ণ বিবৃতিটি নিম্নরূপ:
“সুতরাং যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে তাদের আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা উচিত। বস্তুতঃ যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, অতঃপর সে নিহত হবে অথবা বিজয়ী, আমি তাকে শীঘ্রই মহা পুরস্কার দান করব। [সূরা নিসা: আয়াত ৭৪]
মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন।
আমাদের মহান শিক্ষক, প্রতিরোধ আন্দোলনের পথিকৃৎ, আল্লাহর একনিষ্ঠ সৎ বান্দা, সাহসী নেতা, প্রজ্ঞাবান ঈমানদার, দূরদর্শী ও মুমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে শাহাদাতের সুমহান কাফেলায় যোগ দিয়েছেন। এ যেন নবী-রাসূল ও শহীদ ইমামগণের পদতলে ঈমানের ঐশী যাত্রায় এক আলোকিত কারবালা।
লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার মাধ্যমে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছৈ গেছেন। তিনি প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহীদদের পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন এবং এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একের পর এক বিজয় উপহার দিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সালে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০০ সালে ইহুদিবাদীদের কবল থেকে লেবাননের মুক্তি থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিজয় তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে গাজার নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিই লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনকে ইসরাইল বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতে আমরা যুগের ইমাম (রেজওয়ানুল্লাহি তায়ালা আলাইহ), মুসলিম বিশ্বের মহান নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী (দামাত বারাকাতুহুম), বিশিষ্ট আলেমগণ, মুজাহিদগণ এবং সকল মুমিনের প্রতি শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সেইসঙ্গে আমরা আমাদের প্রতিরোধকামী জাতি, আমাদের ধৈর্যশীল ও মুজাহিদ জনগণ, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ, বিশ্বের সমস্ত মুক্ত ও নিপীড়িত মানুষ এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব জনাব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সম্মানিত ও ধৈর্যশীল পরিবারকে অভিনন্দন জানাই। মহান আল্লাহ তাকে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার পথের একজন শহীদ হিসেবে কবুল করুন। তিনি ইমাম হুসাইনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করে বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদীদের আগ্রাসনে ইমামের শহীদী কাফেলায় শরীক হতে সক্ষম হয়েছেন।
আমরা হিজবুল্লাহর বর্তমান নেতৃত্ব এই আত্মোৎসর্গকারী মহান নেতা ও শহীদকে এই প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি যে, গাজা ও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে, লেবাননকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।
শনিবার, ২৪ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি।”
নাসরুল্লাহকে হত্যায় যা ব্যবহার করা হয়
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি বোমার ওজন সম্ভবত ২ হাজার পাউন্ড।
নাসরুল্লাহকে হত্যার জন্য হামলা চালাতে যে যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, তার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
যুদ্ধাস্ত্র–বিশেষজ্ঞ ও নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ অনুসারে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ২ হাজার পাউন্ড ওজনের (প্রতিটি) বোমা (বাংকার-বাস্টার) বহন করেছিল।