গাজার যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে সর্বত্র অনাহারের দৃশ্য। কোথাও বহুতল ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়া দেহ, কোথাও আবার রাস্তার যত্রতত্র পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। উদ্ধারকারী দল সেই দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে ভয়াবহ এক বর্ণনা দিয়েছে। উদ্ধারকারী দলের প্রধান ফেয়ার্স আফানা সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর কাছে দাবি করেছেন, তাঁরা মূলত উত্তর গাজায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন দেহ উদ্ধার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে সব জায়গায় পৌঁছাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের, সেখানে মৃতদেহ পড়ে থেকে পচন ধরে যাচ্ছে। আকাশ, বাতাস কটূ গন্ধে ভরে উঠেছে। এমনকি এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে যে, রাস্তায়, ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকা দেহগুলি কুকুরেরা ছিঁড়ে খাচ্ছে।
উত্তর গাজার জরুরি পরিষেবার প্রধান আফানা ফোনে সিএনএনকে বলেছেন – ‘আপনি উত্তর গাজায় গেলে দেখতে পাবেন ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। ইসরাইলি বাহিনী জীবনের শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘আফানা সিএনএনকে বলেছেন যে তিনি এবং তার সহকর্মীরা উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের এমন কিছু মৃতদেহ দেখতে পেয়েছেন, যেগুলিকে ঠিকমতো শনাক্ত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। কারও মাথা নেই, কারও হাত-পা, কারও আবার দেহের উপরিভাগ উধাও। জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে গাজায় সাহায্য পেতে এবং যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে তা বিতরণে বাধার অভিযোগ করেছে, ইসরাইলের প্রতি বাধা এবং অনাচারকে দায়ী করেছে।
জাতিসংঘ বলেছে যে ২ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কোন খাদ্য সহায়তা উত্তর গাজায় প্রবেশ করেনি। উত্তর গাজার বেহাল অবস্থা এবং অসহনীয় দুর্ভোগের প্রেক্ষিতে, মানবিক অ্যাক্সেস সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে। বুধবার, ইসরাইলি সামরিক ইউনিট যা গাজায় সাহায্য এবং বাণিজ্যিক চালানের তত্ত্বাবধান করে তারা বলেছে যে জর্ডানের দেওয়া খাদ্য, পানি , চিকিৎসা সরবরাহ এবং আশ্রয়ের সরঞ্জাম বহনকারী ৫০টি ট্রাক উত্তর গাজায় স্থানান্তরিত হয়েছে।
১২ অক্টোবর একটি উদ্ধারকারী দল উত্তর গাজার দুটি হাসপাতালে যাবার সময় নয়বার ইসরাইলি বাহিনীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তারা কোনোমতে এক ডজনেরও বেশি গুরুতর রোগীকে গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছে। আলজেরিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত অমর বেন্দজামা ইসরাইলের মানবিক প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, – ‘এটা কিভাবে সম্ভব যে আমরা এই শিশুদের টিকা দিতে পারি কিন্তু আমরা তাদের খাওয়াতে পারবো না? গাজার মানুষকে অনাহারে রাখা ইসরাইলের কৌশল ।”