বিশ্বজুড়ে ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যে জীবনযাপন করছে, যাদের প্রায় অর্ধেকই সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে বসবাস করছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এছাড়া এই গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বের চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই চরম দারিদ্র্যে দিন কাটায়।
ভারতের পরে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। দারিদ্রে দিন কাটানো ১১০ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেক এই পাঁচ দেশের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে দারিদ্র্যের স্তর অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এসব দেশে পুষ্টি, বিদ্যুৎ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্য দেখা গেছে।
ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের ওপর যৌথ গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ‘দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্যে’ বসবাস করছেন। আর চরম দারিদ্র্যে বসবাস করছে ৫৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশ শিশু, যা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
যেসব দেশে যুদ্ধ-সংঘাত লেগে আছে সেসব দেশে শিশু মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। যেখানে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুর হার ১ দশমিক ১ শতাংশ।
যৌথভাবে এই গবেষণা চালিয়েছে ইউএনডিপি ও ওপিএইচআই। গবেষণায় দরিদ্রতার নির্ণায়ক হিসেবে অপর্যাপ্ত বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল, পুষ্টি এবং স্কুলে যাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) পরিচালক সাবিনা আলকির বলেন, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি ধীর – তাই এসব অঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিসংখ্যানগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় শান্তিতে বিনিয়োগ ছাড়া আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারব না।
একইসঙ্গে ইউএনডিপির প্রধান পরিসংখ্যানবিদ ইয়ানচুন ঝাং বলেন, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা একটি কঠোর ও মরিয়া যুদ্ধ।
৬.৫ শতাংশ বাংলাদেশি চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে: ইউএনডিপি
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ চরম ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে ‘গ্লোবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স ২০২৪: পোভার্টি অ্যামিড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, এটি বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ও দরিদ্র জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে অবদান রাখছে। যা দারিদ্র্য সূচকের ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের কারণগুলোও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। যা যথাক্রমে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৩ শতাংশে ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, যার প্রায় অর্ধেক বাস করছে সংঘাত কবলিত অঞ্চলে। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের ৮৩ শতাংশই আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বসবাস করছে, যা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও তুলে ধরেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় আশঙ্কাজনক ২৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ এমন পরিবারে বাস করে যেখানে অন্তত একজন সদস্য অপুষ্টিতে ভুগছে। এই অঞ্চলে দারিদ্র্যকে আরও জটিল করে তোলে এমন গুরুতর স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির সমস্যাগুলোর উপর জোর দেয়।
ইউএনডিপির সর্বশেষ এই প্রতিবেদনে দারিদ্র্যের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে এবং বাংলাদেশ ও এর বাইরে লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।