দখলদার ইসরাইলের বর্বর ও দীর্ঘস্থায়ী সামরিক হামলা এবং হামাসের সাথে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সংঘাতে গাজার অর্থনীতি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখা (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় গাজার অর্থনীতি ফিরিয়ে আনতে ৩৫০ বছর সময় লাগবে।
গাজার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পেশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ইসরাইলের ওপর হামাসের আক্রমণের পর ইসরাইলি বাহিনীর পাল্টা হামলায় গাজার অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর আগে থেকেই গাজার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দুর্বল ছিল, কিন্তু এই যুদ্ধ তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও গাজায় বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির ঘাটতি তীব্র ছিল, এবং প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায় মানবিক সহায়তাও ছিল অপ্রতুল। এসব কারণে গাজার অর্থনীতি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে। যুদ্ধে ক্ষতির মাত্রা আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি থেমে যায়।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে গাজায় ৯৬ শতাংশ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষি উৎপাদন কমেছে ৯৩ শতাংশ, সামগ্রিক উৎপাদন কমেছে ৯২ শতাংশ এবং সেবা খাতের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৭৬ শতাংশ। বেকারত্বের হার বেড়ে ৮১ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এই অঞ্চলের মানবিক বিপর্যয়কে আরও প্রকট করেছে।
ইসরাইলের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায় গাজার পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও খারাপ হচ্ছে। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকার ঘর-বাড়ি,মসজিদ, স্কুল,হাস্পাতাল,দোকানপাট, সরকারি স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। বোমাবর্ষণে আনুমানিক ৪ কোটি ২০ লাখ টন ধ্বংসস্তুপ তৈরি হয়েছে।জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, এই যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার অসম্ভবের কাছাকাছি, এবং যুদ্ধবিরতির পরও গাজা তার প্রাক্-যুদ্ধ অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে আসতে শতাব্দীর পর শতাব্দী সময় লাগবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হলেও গাজার অর্থনীতি ২০০৭ থেকে ২০২২ সালের প্রবৃদ্ধির ধারা অনুসরণ করলেও ২০২২ সালের জিডিপি পুনরুদ্ধার করতে তাদের প্রায় ৩৫০ বছর সময় লাগবে।